CV Ananda Bose visits Murshidabad: রাজ্যপালের মুর্শিদাবাদ সফর ঘিরে তুমুল হট্টগোল। গতকাল মালদায় মুর্শিদাবাদের ঘরছাড়াদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। আজ তিনি গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের হিংসা (Murshidabad Violence) বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে। সিভি আনন্দ বোসের এই সফর ঘিরেই শনিবার তুমুল হট্টগোল ছড়িয়ে পড়ে সামশেরগঞ্জের বেদবোনা গ্রামে।
ওয়াকফ আইন (Wawf Act) নিয়ে চলা হিংসার জেরে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থেকে শুরু করে ধুলিয়ানের জাফরাবাদ-সহ বেশ কিছু এলাকায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি হয়। শনিবার জাফরাবাদে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেখানে হিংসা পীড়িত বেশ কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তাদের বাড়িতেও গিয়েছেন। অশান্তির সেই হাড়হিম করা মুহূর্তগুলি তাঁদেরই মুখ থেকে শুনেছেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালকে কাছে পেয়ে নিজেদের অভাব অভিযোগের কথা শুনিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
সেখান থেকে রাজ্যপালের কনভয় রওনা দেয় সামশেরগঞ্জের বেদবোনা গ্রামের সামনের রাস্তা ধরে। সাম্প্রদায়িক অশান্তির সুনামি বয়ে গিয়েছিল এই বেদবোনা গ্রামেও। দিকে দিকে বাড়িঘর ভাঙচুর, হিন্দু পরিবারের উপর আক্রমণ, মন্দির ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে এই গ্রামে। রাজ্যপালের গাড়িটি এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই এদিন তাঁর কনভয়ের বাকি গাড়িগুলি আটকে দেন বেদবোনা গ্রামের বাসিন্দারা। শ'য়ে-শ'য়ে গ্রামবাসী সেই গাড়িগুলি আটকে তার সামনে রাস্তাতেই বসে পড়েন। তুমুল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
আরও পড়ুন- Bhabesh Chandra Roy: ইউনূসের বাংলাদেশে ফের নৃশংস ঘটনা! হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে কুপিয়ে খুন
তাঁদের একটাই দাবি ছিল, "রাজ্যপালকে আসতে হবে, আমাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমাদের যাবতীয় অভাব-অভিযোগের কথা শুনতে হবে।" ততক্ষণে সুরক্ষা কর্মীদের মারফত সেই খবর পৌঁছে গিয়েছে সামনের গাড়িতে থাকা রাজ্যপালের কানেও। এই বিক্ষোভ চলার প্রায় ঘন্টাখানেকের মধ্যেই গাড়ি ঘুরিয়ে ফের অবরোধের অকুস্থলে চলে আসেন রাজ্যপাল নিজে।
আরও পড়ুন- Cyber Crime: কলকাতার বুকে অভিনব প্রতারণা, চোখ কপালে তোলার মতো জালিয়াতির পর্দাফাঁস! ধৃত ১
ততক্ষণে আরও গ্রামবাসী জড়ো হয়েছেন সেই এলাকায়। অভাব-অভিযোগের চিৎকারে ফেটে পড়ছে বেদবোনা গ্রাম। গাড়ি থেকে নেমে হাত জোড় করে গ্রামের ভিতরে ঢোকেন রাজ্যপাল বোস। তাঁর সামনেই চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়েন শ'য়ে-শ'য়ে মহিলা। পুলিশের সামনেই তাঁরা বলতে থাকেন, "ওদের উপর আমাদের ভরসা নেই। আপনি এলাকায় স্থায়ী BSF ক্যাম্প বসানোর বন্দোবস্ত করুন।" রাজ্যপালকে ঘিরে তারস্বরে এই দাবি জানানোর পর্বে ব্যাপক উত্তেজনাও তৈরি হয় এলাকায়। পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো নাজেহাল দশা হয় পুলিশকর্মীদের। রাজ্যপালের সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরাও পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ বেগ পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- Dilip Ghosh Marriage: ভাবতেই পারবেন না! দিলীপ ঘোষের বিয়ের মেনুতে কী কী ছিল জানেন?
রাজ্যপালের সফরে এই তুমুল হট্টগোলের খবর পেয়ে এলাকায় ছুটে যান জেলাশাসক থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। উপস্থিত পুলিশ ও প্রশাসনের অন্য কর্মীদের গ্রামবাসীদের সামাল দিতে নির্দেশ দেন তাঁরা। তবে রাজ্যপালও এদিন ধীর হয়ে গ্রামবাসীদের নানা অভিযোগ শোনেন। তাঁদের সমস্ত দাবি বিবেচনারও আশ্বাস দেন তিনি। বেদবোনা গ্রামেরই একটি মন্দির ভাঙচুর করেছিল দুষ্কৃতীরা। শনিবার সেই মন্দিরটিও ঘুরে দেখেছেন রাজ্যপাল।
হিংসা বিধ্বস্ত এলাকার বেশ কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। কয়েকজনের বাড়িতেও গিয়েছেন। প্রত্যেকেরই এক দাবি, "আমরা পুলিশ চাই না, আমরা চাই বিএসএফ এলাকায় সুরক্ষা দিক। একমাত্র ওদের স্থায়ী ক্যাম্প এলাকায় হলেই আমরা সুরক্ষিত।" রাজ্যপালকেই এ ব্যাপারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করতে অনুরোধ জানান গ্রামবাসীরা। বয়স্ক এক মহিলাকে এদিন রাজ্যপালের হাত ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে দেখা যায়। রাজ্যপালও প্রত্যেকের কথা শুনে তাঁদের উপযুক্ত সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।