ভোটার তালিকায় বাসা বেঁধেছে 'ভূত'। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি এখন যেমন সরগরম তেমনই সরগরম দেশের সংসদ ভবন। এমন আবহে এবার খাস সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার পরিচয় দেওয়া এক 'ভূতুড়ে ডাক্তার'-এর সন্ধান মিলল পূর্ব বর্ধমানের কালনায়। তাও আবার যে সে 'ভূতুড়ে ডাক্তার' নয়। একেবারে খোদ কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের 'চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ' ডাক্তার। এমনটা জেনে কালনা হাসপাতালের চিকিৎসক মহলেও স্তম্ভিত। ঘটনা জানার পর তাঁরাও নড়েচড়ে বসেছেন।
কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের 'চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার' পরিচয় দেওয়া ওই ভূতুড়ে ডাক্তারের নাম লাবণী ভৌমিক। তিনি ঘাঁটি গেড়েছিলেন কালনা ১ নম্বর ব্লকের বাঘনা পাড়ায় থাকা একটি ওষুধের দোকানে। ওই ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখা যায় দোকানের সামনে দাঁড় করানো রয়েছে একটি সাইন বোর্ড। তাতে লেখা রয়েছে ডাঃ লাবণী ভৌমিক। এই নামের নিচে তাঁর ডিগ্রি হিসাবে লেখা রয়েছে MBBS,MS Opth। এর ঠিক নিচে লেখা রয়েছে 'চক্ষু বিশেষজ্ঞ', কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। প্রতি সোম ও বুধবার কোন সময় থেকে কোন সময় পর্যন্ত
লাবণী সরকার এই ওষুধের দোকানে বসে রোগী দেখবেন তাও ওই বোর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওষুধের দোকানের সামনে দাঁড় করানো থাকা এই বোর্ডের লেখা থাকা লাবণী ভৌমিকের পরিচিতি জেনে এলাকার অনেকেই তার কাছে চোখ দেখাতে গিয়েছিলেন। এমনকী লাবণী ভৌমিক চক্ষু চিকিৎসার একটি শিবির করেছিলেন। সরল বিশ্বাসে এলাকার অনেকে সেই শিবিরে চোখ দেখাতেও গিয়েছিলেন। অর্থের বিনিময়ে ওই সব রোগীদের চোখ দেখে চশমাও দেন লাবণী। কিন্তু লাবণী ভৌমিকের কাছে চোখ দেখানো রোগীদের কারও অভিজ্ঞতা ভালো নয়। ওই চশমা পড়ে চোখে ভালো দেখতে পাওয়ার বদলে দেখতে সমস্যা হওয়ায় রোগীরা চটে লাল হয়ে যান। তাঁরা এরপরেই লাবণী ভৌমিকের ডাক্তারি ডিগ্রির সত্যতা নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। তখনই তাঁরা জানতে পারেন লাবণী ভৌমিক আসলে কোনও হাসপাতালেরই চোখের ডাক্তার নন। তাঁর ডাক্তারি ডিগ্রি নিয়েও বাঘনাপাড়ার লোকজন সন্দেহ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: বিজেপির বিক্ষোভের জের, ফের উত্তপ্ত বিধানসভা, নথি ছিঁড়ে বিধায়কদের বেনজির প্রতিবাদ
এই বিষয়টি জেনে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা কালনার বাঘনাপাড়ার ওই ওষুধের দোকানে পৌঁছে যায়। তখনও ওই ওষুধের দোকানের সামনে দাঁড় করানো ছিল লাবণী ভৌমিকের নাম ও ডাক্তারি ডিগ্রি লেখা বোর্ডটি। সাংবাদিকরা লাবণী ভৌমিকের পরিচয় নিয়ে ওষুধের দোকানের মালিক সুকুমার কবিরাজকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন,“লাবণী ভৌমিক কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ডাক্তারই নন।" তাহলে এমন সাইন বোর্ড কেন আজও ওষুধের দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন? এর উত্তরে দোকান মালিক সুকুমার কবিরাজ বলেন, "সাইনবোর্ডের লেখাটা আমার ভুল হয়েছে, অন্যায় হয়েছে।"
এলাকার বাসিন্দা দেবব্রত মোদক বলেন, “ওষুধের দোকানের সামনে থাকা বোর্ডে কালনা হাসপাতালের চোখের ডাক্তার লেখা থাকা দেখে আমরা বিশ্বাস করে ছিলাম। লাবণী ভৌমিকের কাছে আমরা চোখ দেখাই। উনি আমাদের পাওয়ার দেওয়া চশমা দেন। সেই চশমার জন্য
আমাদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে নেওয়া হয়। ওই চশমা পরে ভালো দেখতে পাওয়া তো দূরের কথা, উল্টে দেখতে আমাদের আরও সমস্যা হয়। এরপর আমরা বিভন্নভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, লাবণী ভৌমিক আসলে হলেন একজন প্রতারক। কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ডাক্তার পরিচয় দেওয়া একজন ভুয়ো ও ভূতুড়ে ডাক্তার উনি।"
আরও পড়ুন- Naushad Siddiqui: ২৬-এর বিধানসভার আগেই মমতা-নওশাদ 'সেটিং', শুভেন্দুর বিস্ফোরক অভিযোগে কেঁপে উঠল বাংলা
এই ঘটনার কথা শুনে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান কালনা মহকুমা হাসপাতালের সহকারি সুপার গৌতম বিশ্বাস। তিনি পরিস্কার জানিয়ে দেন, লাবণী
ভৌমিক নামে কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চোখের কোনও ডাক্তার কোনও দিন ছিলেন না। এখনও নেই। এ নিয়ে কোনও অভিযোগ
পেলেই পুলিশকে জানাবেন বলে ডাঃ গৌতম বিশ্বাস জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার জল বহু দূর গড়িয়ে গিয়েছে জেনে সব দায় ওষুধের দোকান মালিকের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন লাবনী ভৌমিক। ফোনে লাবণী ভৌমিকে সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিন বলেন, “আমি চোখের ডাক্তারই নই। আমি একজন অপ্টোমেট্রিস্ট। আমি চোখের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে চশমার পাওয়ার নির্ধারণ করে দিই মাত্র। আমি নিজেকে চক্ষু চিকিৎসক বলে কখনই দাবি করি না। ওষুধের দোকানদার তাঁর নাম দিয়ে সাইন বোর্ডে মিথ্যা কিছু লিখে থাকলে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।"