Advertisment

অনাদরে বিভূতিভূষণের বসতবাড়ি-পৈতৃক ভিটে, দেখভালের ভার নিক রাজ্য, চায় পরিবার

জমি লুঠেরাদের দৌরাত্ম্যে প্রবাদপ্রতীম সাহিত্যিকের পৈতৃক ভিটের অস্তিত্ব আজ প্রায় বিপন্ন।

author-image
Joyprakash Das
New Update
govt should takes responsibility to maintatnence bibhutibhusan's property, wants family

কালজয়ী সাহিত্যিকের পৈতৃক ভিটের জমি লুঠ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।

উত্তর ২৪ পরগনার চালকি-ব্যারাকপুরে ছোটবেলা কেটেছে পথের পাঁচালির স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যদিও চালকি-ব্যারাকপুর এখন ব্যারাকপুর-শ্রীপল্লী নামে পরিচিত। বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারে চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই প্রবাদপ্রতীম কথা সাহিত্যিকের নাম। জীবনের শেষ দিকে দীর্ঘ বছর থেকেছেন এই গ্রামের বাড়িতেই। সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অবহেলা-অনাদরে-জমি লুটে পৈতৃক ভিটের অস্তিত্বই আজ প্রায় বিপন্ন। অন্যদিকে খ্যাতনামা সাহিত্যিকের বসতবাটির দিকেও নজর নেই কারও। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাটি ও পৈতৃক ভিটে নিয়ে মুখে খুলেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

Advertisment

সাহিত্যিকের গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি ছিল, সাহিত্যিকের পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এলে রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ হত। বিভূতিভূষণের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, সরকার ও স্থানীয় মানুষজন সঠিক উদ্যোগ নিলে তো বেশ ভালই। মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বা দূর থেকে সব সামলানো সম্ভব নয়। লেখকের স্মৃতিতে লাইব্রেরি, গবেষণাগার, প্রেক্ষাগৃহ অনেক কিছুই হতে পারে। তাঁরাও সঠিক রক্ষনাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর ব্যারাকপুর-শ্রীপল্লীতে বিভূতিভূষণের ভিটে। অন্যদিকে তাঁর পরিবার এখন থাকে এই জেলারই অপরপ্রান্ত ব্যারাকপুর শহরে। ১৯৫৭ সালে এই বাড়িটি তৈরি করেন বিভূতিভূষণের স্ত্রী রমা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিভূতিভূষণের পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়স তখন ১০ বছর মাত্র। ২০১০-এ পরলোকগমন করেন ঔপন্যাসিক-ছোটগল্পকার তারাদাসবাবু। ব্যারাকপুর রেল স্টেশনের ২-৩ মিনিট পায়ে হাঁটা দূরত্বেই প্রয়াত তারাদাসবাবুর বাড়ি। বর্তমান বসতবাটি বানিয়েছিলেন আমার ঠাকুমা রমা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন- বেহাত হচ্ছে জমি, অনাদরে বিভূতিভূষণের ভিটে, বাঁচানোর অদম্য লড়াই শিক্ষকের

এই বাড়িতেই থাকেন তারাদাসবাবুর স্ত্রী প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁদের সন্তান তথা বিভূতিভূষণের নাতি অধ্যাপক তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়। অপর নাতি তৃণাঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে কর্মরত। বাড়ির আনাচে-কানাচে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির স্পষ্ট ছাপ। বিভূতিভূষণ স্মারক সমিতি ট্রাস্ট মাঝে-মধ্যে লেখকের স্মরণে নানা অনুষ্ঠান করে থাকে।

মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমরা চাই সাহিত্যিকের বসতভিটেতে গবেষণাগার, পাঠাগার, প্রেক্ষাগৃহ, উৎসুক পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে একার প্রয়াসে তা সম্ভব নয়। তাছাড়া ব্যারাকপুর থেকে দৌড়ঝাঁপ করে দেখভাল করাও মুশকিল। সেক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিলে আমরা সঙ্গে থাকব। এর আগে স্থানীয় বিধায়ক গোপাল শেঠ এই প্রসঙ্গে আলোচনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তা শেষমেষ ফলপ্রসূ হয়নি। সরকারের তরফে লিখিত প্রস্তাব দিলে আমরা বৈঠকে বসতে রাজি আছি।'

আরও পড়ুন- আজ দিল্লিতে মমতা, ‘দিদি-মোদী সেটিং’ তত্ত্বে সুর চড়া করছে বিরোধীরা

সত্যজিত রায় সরকারি অর্থানুকূল্যে 'পথের পাঁচালি' সিনেমা করে জগৎজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন। শুধু তিনিই নন বিভূতিভূষণের লেখনিতে শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ সমৃদ্ধ হয়েছে। অভিযাত্রিকের পরিচালক শুভ্রজিত মিত্র দেখা করতে এসেছিলেন ব্যারাকপুরের বাড়িতে। বিভূতিভূষণের লেখা নিয়ে সিনেমা করলেও অনেক পরিচালক অবশ্য এই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।

তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এখনও দাদুর অনেক চিঠি অপ্রকাশিত রয়েছে। অপ্রকাশিত কিছু ডায়েরিও আছে। 'পথের পাঁচালি' সহ নানা গ্রন্থের পাণ্ডুলিপিও রয়েছে তাঁদের কাছে। একাধিক লেখা নিয়ে সিনেমা হয়েছে। স্বত্ব চলে যাওয়ার পর এখন তাঁর লেখা নিয়ে সিনেমা করলেও অনেকেই আর কোনও যোগাযোগ রাখে না।'

Bengali Literature West Bengal pather panchali bengali poetry
Advertisment