New Update
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/03/04/V0swUlQsHg4NywjYLlUN.jpg)
বাবার মুখাগ্নি করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, মেধাধী স্বর্ণাভ'র মানসিক দৃঢ়তাকে কুর্নিশ গোটা বাংলার Photograph: (প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় )
বাবার মুখাগ্নি করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, মেধাধী স্বর্ণাভ'র মানসিক দৃঢ়তাকে কুর্নিশ গোটা বাংলার Photograph: (প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় )
Inspirational News: বাবার মুখাগ্নি করে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। মেধাধী স্বর্ণাভ'র মানসিক দৃঢ়তাকে কুর্নিশ গোটা বাংলার।
বাবাকে সঙ্গে নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ছেলের। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে তা আর হল না। পরীক্ষা শুরুর একদিন আগে সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বাবার। মুখাগ্নি করে সেই ছেলে সোমবার বাবাকে ছাড়াই পরণে ধুতি আর গায়ে এক খন্ড সাদা কাপড় পরেই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছায় মেধাবী স্বর্ণাভ। পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মালডাঙা আর এম ইনস্টিটিউশন পরীক্ষা কেন্দ্রে ওই অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে দেখে তখন সকলেরই চোখে জল । স্বর্ণাভর এই মানসিক দৃঢ়তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন, স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। সেই সঙ্গে তাঁরা স্বর্ণাভর সাফল্য কামনাও করেছেন।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী স্বর্ণাভ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি মন্তেশ্বর গ্রামে। সেখানকার সাগরবালা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র স্বর্ণাভ। তাঁর বাবা মলয় চট্টোপাধ্যায় কলকাতার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত ছিলেন। গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন । চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয় ।
বাবা মারা যাওয়ার খবর শনিবার রাতেই পৌছায় স্বর্ণাভর বাড়িতে। বাড়ির লোকজনের কাছে বাবার মৃত্যু হওয়ার কথা জেনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে স্বর্ণাভর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। স্বামীর মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন স্বর্ণাভর মা মৌসুমী দেবী। রবিবার দুপুরে নবদ্বীপ শ্মশাণ ঘাটে মলয় চট্টোপাধ্যায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় । বাবার মুখাগ্নি সারে ছেলে স্বর্ণাভ। বাবাকে চিরতরে হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়লেও স্বর্ণাভ তাঁর বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য মানসিক ভাবে নিজেকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তোলে। বাবার মুখাগ্নি সেরে বাড়িতে ফিরে শোকের ছায়ায় ভরা বাড়িতে বসেই সে শুরু করে দেয় বইয়ের পাতায় চোখ বোলানো। পরদিন সকাল হতেই স্বর্ণাভ পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দেয়। পরনে ধুতি, গায়ে সাদা একটুকরো কাপড় পরেই সোমবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই স্বর্ণাভ পৌছে যায় পরীক্ষাকেন্দ্র পৌঁছে পরীক্ষায় বসেন তিনি।
পরীক্ষা শেষে বাইরে বেরিয়ে স্বর্ণাভ জানায়,তাঁর পরীক্ষা ভাল হয়েছে। বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য সবকটা পরীক্ষা তাঁকে ভালভাবে দিতেই হবে। কি ছিল বাবার স্বপ্ন? উত্তরে স্বর্ণাভ বলে ,“আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করবো,এই স্বপ্ন আমার বাবা দেখতেন। কলকাতার নামী কলেজে আমাকে ভর্তি করারও স্বপ্ন ছিল আমার বাবার। আমার বাবা আজ আর নেই । তবে আমাকে আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে"।
স্বর্ণাভর মা মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় এদিন চোখের জল মুছতে মুছতেই বলেন,“স্বর্ণাভ ছোট থেকেই পড়াশুনায় ভাল। সেকারণেই ছেলেকে নিয়ে আমার স্বামীর অনেক স্বপ্ন ছিল । ছোট থেকে বাবার হাত ধরেই ছেলে পরীক্ষা দিতে যেত। এবার বাবাকে ছাড়াই ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যেতে হল । কলকাতার নামী কলেজে ভর্তি করে ছেলেকে পড়াবেন বলে আমার স্বামী আগে থেকেই কলকাতায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে রেখে ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই আমার স্বামী অকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এর থেকে বড় বেদনার আর কি হতে পারে"!