RG Kar Incident: আরজি কর কাণ্ডে উত্তাল বাংলা! কৌশলী তৃণমূল, কখনও 'ফোঁস' আবার কখনও সংযমের বার্তা!
RG Kar Incident: আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদের নতুন ভাষা দেখছে বাংলা। দিকে দিকে নাগরিক সমাজের আন্দোলন-রাত দখল কর্মসূচি। এই পরিস্থিতিতে কৌশলী পদক্ষেপ শাসকদল তৃণমূলের। কোথাও গরম আবার কোথাও নরমে।
RG Kar Incident: আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদের নতুন ভাষা দেখছে বাংলা। দিকে দিকে নাগরিক সমাজের আন্দোলন-রাত দখল কর্মসূচি। এই পরিস্থিতিতে কৌশলী পদক্ষেপ শাসকদল তৃণমূলের। কোথাও গরম আবার কোথাও নরমে।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি উত্তাল পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন?
RG Kar Case: আরজি করে নৃশংস খুনের ঘটনার পর ২৬ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতো তৃণমূল কংগ্রেসও পথে নেমেছে। দোষীদের ফাঁসির দাবিতে অবস্থান, বিক্ষোভ, মিছিল করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি বিচারের দাবিতে রাজ্যের সর্বত্র রাজনীতির ব্যানার ছাড়া অংখ্য অরাজনৈতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। কিন্তু এরই মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সাংসদ, বিধায়ক, ছোট-বড়-মাঝারি নেতাদের মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক দানা বেঁধেছে। চরম অস্বস্তিতে দল। এমনকী পরিস্থিতি সামলাতে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংযত থাকার বিবৃতি দিয়েছেন। আরজি কর আবহে তৃণমূলের সার্বিক অবস্থান ঘোরালো দেখছে রাজনৈতিক মহল।
Advertisment
রামায়ণে সঞ্জীবনী আনতে গিয়ে একেবারে গন্ধমাদন পাহাড় তুলে এনেছিলেন হনুমান। তৃণমূল সুপ্রিমো ২৭ আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভায় ফোঁস করতে বলেছিলেন। পাশাপাশি "বদলা নয়, বদল চাই", সংজ্ঞা বদলের কিঞ্চিৎ ঈঙ্গিত দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। নানা দিকে দলের ছোট-বড়-মাঝারি নেতাদের মধ্যে ফোঁসের মাত্রা যে লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে তা বেমালুম টের পাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের তৃণমূল নেতাকে এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাবধানবানী দিয়েছেন। তাতেও কতটা কুরুচিকর বা বেফাঁস মন্তব্য আটকানো যাবে তাতে সন্দেহ রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
প্রথম দফায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ চেয়ে বসেছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়। তাঁর মন্তব্যে অনড় বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেছিলেন এই প্রবীণ সাংসদ। আরজি করের প্রাক্তন প্রিন্সিপ্যাল সন্দীপ ঘোষ গ্রেফতারের দিন সোশাল মিডিয়ায় সুখেন্দু শেখর মিডল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রশ্ন করছেন, নেক্সট? এই সাংসদ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র জাগো বাংলার সাংসদ। অন্যদিকে সন্দীপ ঘোষ আরজি করে ইস্তফা দেওয়ার পর কার্যত প্রাইজ পোস্টিং দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। একরকম বাধ্য হয়ে গতকাল, মঙ্গলবার কড়া পদক্ষেপ করেছে। তবু তাঁর বিরুদ্ধে এতদিনে কোনও তদন্ত কমিটি করেনি স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। তৃণমূলের আরেক মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কখন কি বলছেন তা বুঝতে রীতিমতো ভিরমি খাচ্ছে রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূল কংগ্রেস আরজি কর ইস্যুতে স্থানীয় ভাবে প্রতিবাদ সভা, মিছিল করছে। দোষীদের ফাঁসির দাবি তুলছে। এই ধরনের সভা থেকেই মূলত হুমকি মন্তব্য, কুরুচিকর বক্তব্য রাখছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে বিধায়ক লাভলি মৈত্র বলেছেন, "বদলা না নেওয়ার কারণেই তাঁরা এখনও ঘুরে বেড়ান।" মঙ্গলবারই লাভলির মন্তব্যের বিরুদ্ধে সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সায়ন। ওইদিনই জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে করা বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমাজমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করে ক্ষমা চেয়েছেন আরেক তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক।
তৃণমূলের অন্যদের ছাড়িয় গিয়েছেন অশোকনগরের তৃণমূল নেতা অতীশ সরকার। তিনি বলেছেন, "যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফেসবুকে গালাগালি করছেন, কুৎসা করছেন, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্র নিয়ে গালাগালি করছেন, আপনার বাড়ির দরজায় আপনার মা-বোনকে বিকৃত ছবি করে টাঙিয়ে দিয়ে আসব, শুনে রাখবেন আজকে দাঁড়িয়ে বলে গেলাম। সাবধান হয়ে যান। তৃণমূল ধৈর্য্য নিয়ে বসে আছে। আমরা যদি সকাল-সন্ধে পাড়ায়-পাড়ায় একটু ফোঁস করি তাহলে বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন তো?" এই তৃণমূল নেতাকে দল এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বামুন চকের দাপুটে তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত মুনমুন মোল্লা। বারুইপুর হাসপাতালে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য। চিকিৎসক তাঁকে অপেক্ষা করতে বলায় তিনি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন। তারপরেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের দিকে তিনি তেড়ে যান ও তাঁকে হুমকি দেন বলে অভিযোগ। বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী, বিষ্ণুপুরের তৃণমূল নেতা, ক্যানিং পশ্চিমের তৃণমূল বিধায়ক পরেশ রাম দাস-সহ এই তালিকা বেশ দীর্ঘ।
দলীয় কর্মীদের কী বার্তা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের?
এরইমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় গণ্ডি ছাড়িয়ে জনপ্রতিনিধিদের আরও নম্র এবং সহানুভূতিশীল হতে বলেছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, 'আমি তৃণমূলের সকলকে অনুরোধ করছি চিকিৎসক বা নাগরিক সমাজের উদ্দেশে কটূ কথা বলা বন্ধ করুন। প্রত্যেকেরই প্রতিবাদ করার এবং নিজের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। এটাই পশ্চিমবঙ্গকে অন্যান্য বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে আলাদা করেছে। আমরা বুলডোজার মডেল এবং রাজনৈতিক নিপীড়ণের কৌশলের বিরুদ্ধে আন্তরিক ভাবে লড়াই করেছি।'
আজ, বুধবার রাতে আরজি কর কাণ্ডের বিচারের দাবিতে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে রাজ্যের সর্বত্র। অরাজনৈতিক আহ্বানে এই কর্মসূচি রূপায়নের ডাক দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জুনিয়র চিকিৎসকরাও কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। একদিকে ফোঁস, আরেকদিকে সংযত থাকার আহ্বান। তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধি থেকে ছোট-বড় নেতার ভূমিকার দিকে নজর থাকছে রাজনৈতিক মহলের। দলের নিয়ন্ত্রণহীন না কৌশল, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।