/indian-express-bangla/media/media_files/2025/04/02/3kJwoBvnsVxUzcKHyyCo.jpg)
নববর্ষেই ইতিহাস সৃষ্টি! রেলের দুরন্ত কীর্তি এখন জোর চর্চায়, 'ভ্রমণ বিপ্লবে' তাক লাগাবে বাংলা
howrah to bankura via masagram: বাংলা নববর্ষে তৈরি হতে চলেছে নতুন এক ইতিহাস! ট্রেনে চেপে সরাসরি বাঁকুড়া থেকে মসাগ্রাম হয়ে হাওড়া স্টেশন পৌছানোর জন্য মুখিয়ে আছেন দুই জেলার মানুষ।
রেল যাত্রীদের দুঃখের অবসান ঘটাতে অনেক দিন আগেই পূর্ব রেল ও দক্ষিণ পূর্ব রেল পথের মিলন ঘটানো হয়েছে।তবে পথের মিলন ঘটে গেলেও ঘটেনি দুঃখের অবসান। তাই এখনও অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করেই কলকাতায় পৌছাতে হচ্ছে বাঁকুড়া সহ দক্ষিণ দামোদর এলাকার বাসিন্দাদের।তার কারণে বি.ডি.আর রেল আজও বহন করে চলেছে 'বড় দুঃখের রেলের’ তকমা । বি.ডি.আর রেলের যাত্রীরা চাইছেন,এমন তকমার ইতি ঘটাতে রেল দফতর বাংলা নববর্ষেই বাঁকুড়া থেকে সরাসরি মসাগ্রাম হয়ে হাওড়া স্টেশন পৌছানোর ট্রেন পরিষেবা চালু করুক।
ভারতের প্রাচীন রেল পথ গুলির অন্যতম হল বি.ডি.আর। অর্থাৎ বাঁকুড়া দামোদর রেলওয়ে বা বাঁকুড়া দামোদর নদী উপত্যকা রেলওয়ে। দেশ তখন পরাধীন। ইংরেজ শাসন কালে সূচনা হয় বাঁকুড়া দামোদর রেলওয়ের। ইতিহাস ঘেঁটে জানা গিয়েছে,'সূচনা কালে বি.ডি.আর ’ম্যাকলেওড’স লাইট রেলওয়েজ কোম্পানি’ দ্বারা পরিচালিত ছিল’। পরে ১৯১৪ সালের ৩০ মার্চ বাঁকুড়া-দামোদর রিভার রেলওয়ে কোম্পানি নথিভুক্ত হয়। তারপর ওই বছরের ১ মে শুরু হয় 'ন্যারো গেজ’ লাইন নির্মাণের কাজ।১৯১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাঁকুড়া থেকে অধুনা পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ন্যারোগেজ লাইনটি চালু হয়।এই রেল পথই সেই সময় বাঁকুড়া ও অবিভক্ত বর্ধমান জেলার মধ্যে সংযোগ রক্ষা করত।
'রামনবমীতে জয় শ্রী রামের গুঁজ, তাকত দেখাবে হিন্দু', বললেন শুভেন্দু
ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে 'বি.ডি.আর' রেলের উপর নজর পড়ে ভারতীয় রেলের। ১৯৬৭ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে অধিগ্রহণ করে 'বি.ডি.আর’ কে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে লোকসানে চলার কারণে 'বি.ডি.আর’ এর প্রতি আগ্রহ হারায় দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে। ১৯৯৫ সালে এই রেল উঠিয়ে দেওয়া হয়। ভারতীয় রেল দফতরের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেন না বাঁকুড়া ও বর্ধমান জেলার বাসিন্দারা। তারা পুণরায় ’বি.ডি.আর’ রেল চালুর দাবি তুলে চলেন। দাবির বিষয়টি নিয়ে তারা বারে বারে ভারতীয় রেল দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণও করে যান।
কেন্দ্রে এনডিএ সরকার গঠিত হওয়ার পর অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হন। সেই মন্ত্রী সভায় ভারতের রেলমন্ত্রী করা হয় তদানিন্তন এনডিএ সরকারের অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেস দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রেলমন্ত্রী হওয়ার পর বি.ডি.আর’ কে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার সিদ্ধান্ত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্যোগেই পুরানো ন্যারো গেজ লাইনটিকে ব্রড গেজ লাইনে রুপান্তরিত করার পরিকল্পনা গৃহীত হয় । ঠিক হয়,সাউথ ইস্টার্ণ রেলওয়ের অধীন 'বি.ডি.আর’ রেল লাইনটিকে পূর্ব বর্ধমানের মসাগ্রামে থাকা ইস্টার্ন রেলের হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার লাইনের সঙ্গে যুক্ত করার। পরিকল্পনা মত অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেলে কাজও শুরু হয়ে যায়।তারই মধ্যে কেন্দ্রে সরকার বদল ও রেলমন্ত্রী বদল ঘটলেও কাজে ব্যঘাত ঘটেনি।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/04/02/kxWKJBXF5FKG4tAyiZY3.jpg)
প্রথম দফায় বাঁকুড়া থেকে সোনামুখী পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার ব্রড গেজ লাইন তৈরির কাজ ২০০৫ সালে শুরু হয়। তারপর ২০০৮ সালে চালু হয় সোনামুখী থেকে পূর্ব বর্ধমানের রায়নগর পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ লাইন।এরপর শুরু হয় রায়নগর থেকে মসাগ্রাম পর্যন্ত লাইন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ। দামোদর টপকে লাইন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম ও দাদপুরের মাঝে দামোদরের উপর রেল সেতু তৈরি করা হয়।সেতু তৈরি হয়ে যেতেই লাইন রায়নগর থেকে মসাগ্রাম পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজও সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
প্রথম দিকে 'বি.ডি.আর’ রেল পথে ’ডি.এম.ইউ’ ট্রেন চলাচল করলেও এখন আর তা নেই। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বাঁকুড়া-মসাগ্রাম পর্যন্ত রেল পথের বৈদ্যুতীকরণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েযায়। একই সময়ে শুরু হয়ে যায় ’জংশন স্টেশনের’ মর্যাদা পাওয়া মসাগ্রাম স্টেশনকে নতুন রুপ দেওয়ার কাজ।২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষের দিক থেকে এই রেল পথে 'মেমু ট্রেন’ চালু করা হয়। সর্বশেষ পর্যায়ে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে তৈরি হয় নতুন ইতিহাস। মসাগ্রাম জংশনে সাউথ ইস্টান রেলের অধীন 'বি.ডি.আর’ রেলের লাইনকে জুড়ে দেওয়া হয় ইস্টার্ন রেলের অধীন হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখার লাইনের সঙ্গে।এখন বাঁকুড়া থেকে ট্রেনে চেপে সরাসরি ১৮৫ কিলোমিটার দূরের হাওড়া স্টেশন পৌছে যাওয়া শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।
মহাকাশ থেকে হিমালয়ের ‘অপার সৌন্দর্য’, রাতের ভারতের বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগে ভাসলেন সুনিতা
ভারতের রেল দফতর বাংলা নববর্ষে বাঁকুড়া-হাওড়া ভায়া মসাগ্রাম রেল পথে ট্রেন পরিষেবা চালু করে দেবে,এমনটাই আশা করে আছেন দুই জেলার বাসিন্দারা। বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সেই জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে। এই রেল চলাচাল শুরু করা নিয়ে সাংসদ সৌমিত্র খাঁ দীর্ঘদিন ধরে সংসদে দাবি করে আসছেন।বাঁকুড়া থেকে ভায়া মশাগ্রাম হয়ে হাওড়া পর্যন্ত নতুন ইন্টারসিটি ট্রেনের জন্যেও তিনি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন মঞ্জুর হয়েছে।তার চিঠিও চলে এসেছে। তাঁকে লেখা কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের চিঠিটি তিনি প্রকাশ করেছেন । তারই সাথে তিনি প্রকাশ্যে এনেছেন বাঁকুড়া-হাওড়া ভায়া মসাগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচলের সম্ভাব্য টাইম টেবিল।