International Mother Language Day 2025: আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ইতিহাসে জড়িয়ে বাঙালির গর্ব, অহংকার!

International Mother Language Day 2025: ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৮৮টি দেশ তাকে সমর্থন জানায়। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
আপডেট করা হয়েছে
New Update
international mother language day 2025

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ইতিহাসে জড়িয়ে বাঙালির গর্ব, অহংকার Photograph: (ফাইল চিত্র)

Mother Language Day 2024 history and significance:  ভাষা হল নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম। সেই ভাষা যদি জন্ম পরবর্তী সময় থেকে শিখে আসা ভাষা হয়, আমাদের পালনকারী মায়ের মুখের ভাষা হয়, তবে তার গুরুত্বই আলাদা। সেই ভাষাই হল আমাদের মাতৃভাষা। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যার ইতিহাসে জড়িয়ে বাঙালির গর্ব, বাঙালির অহংকার। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় মাতৃভাষা আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সারা বিশ্বে জুড়ে আজকের এই দিনটি সাড়ম্বরে পালিত হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সাল থেকে এই দিনটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস"হিসাবে।  
 
আমাদের জীবনে ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভাষার মাধ্যমেই আমরা আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে এবং একে অপরের সাথে কথা বলি। প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভাষা আছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। যার লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে মাতৃভাষা সংরক্ষণ এবং প্রচারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ভাষা কেবল যোগাযোগের একটি অংশ নয়, এটি আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ও। যদি আমরা ভারতের কথা বলি, আমাদের দেশে অনেক ভাষা প্রচলিত। যা প্রতিটি রাজ্য এবং তার বাসিন্দাদের পরিচয় হয়ে ওঠে।  বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে যে বিক্ষোভ সংঘটিত হয় সেই বিক্ষোভে ঢাকায় চারজন বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এই দিনটি তাই ভাষা শহিদ দিবস হিসেবেও পরিচিত।

Advertisment

এই বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের  রজতজয়ন্তী। ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের লক্ষ্য হলো 'বিপন্ন ভাষা রক্ষা এবং মানুষের ভাষাগত অধিকারকে সম্মান করার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া'। শিক্ষামূলক কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মাতৃভাষা নিয়ে  আলোচনা ইত্যাদি নানান অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালন করা হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। 

দ্রুত গতিতে পাশ কাটিয়ে চেপে দিল লরি, সৌরভের গাড়িতে পরপর ধাক্কা, কেমন আছেন মহারাজ?

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাংলা তথা আপামোর বাঙ্গালির জীবনে যার মূল্য অপরিসীম, ইতিহাসে জড়িয়ে বাঙালির গর্ব, অহংকার। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৮৮টি দেশ তাকে সমর্থন জানায়। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

Advertisment

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস:-
ভাষা শহিদ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাংলাদেশে জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবেও পালিত হয়। এর ইতিহাসের সূত্রপাত হয়েছিল ভারত ভাগের পর। দেশভাগের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ সেই সময় পূর্ব পাকিস্তান। সেখানকার বাঙালির ওপর জোর করে উর্দুভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। পালটা গর্জে ওঠে বাঙালি। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর, পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় শুরু হয় ভাষাবিক্ষোভ। ১৯৪৮ সালের মার্চে সীমিত ভাষা আন্দোলন হয়। যার চরম প্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে আসেন। পালটা, পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি চালায়। যাতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামের মত কয়েকজন ছাত্র ও যুবক নিহত হন।

বাংলা ভাষা প্রচলন বিল
প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হস্টেলে জড় হন। পরদিন, ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও পূর্ব পাকিস্তানের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। ভাষাশহিদদের স্মৃতিতে ২৩ ফেব্রুয়ারি, রাতারাতি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল প্রাঙ্গণে তৈরি হয় স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু, পাকিস্তান প্রশাসন সেই স্মৃতিস্তম্ভ ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। তাতে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। সেখানে ৭ মে আয়োজিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বা প্রাদেশিক সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। দিনটা ছিল ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, ১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সেদেশের সংসদে 'বাংলা ভাষা প্রচলন বিল' পাশ হয়। যা কার্যকর হয় ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ।

রাতের কলকাতায় শোভন-বৈশাখীর গাড়িকে টার্গেট, পরপর ধাক্কা....! তারপর?

কানাডার দুই বাঙালির প্রচেষ্টা
১৯৯৮ সালে কানাডার ভাংকুভারের দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব কোফি আন্নানের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানিয়েছিলেন। চিঠিটি রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের তৎকালীন প্রধান তথ্য আধিকারিক হাসান ফেরদৌসের নজরে আসে। ১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি, ফেরদৌস পালটা রফিকুলকে অনুরোধ করেন, রাষ্ট্রসংঘের কোনও সদস্য দেশকে দিয়ে এই আবেদন করাতে। এরপরই রফিকুল, 'মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে একটি সংগঠন আবদুস সালামকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন। এই সংগঠনে ইংরেজিভাষী, জার্মানভাষী, ক্যান্টোনিভাষী ও কাচ্চিভাষীরাও যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব কোফি আন্নানকে, 'অ্যা গ্রুপ অফ মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড' নামে এক সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেন। সেই চিঠির কপি পাঠানো হয়েছিল রাষ্ট্রসংঘে কানাডার দূত ডেভিড ফাওলারের কাছেও।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে মাতৃভাষা দিবসের প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। ১৮৮টি দেশ তাকে সমর্থন জানায়। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিনটি রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশগুলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এরপর ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার, রাষ্ট্রসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হবে বলে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালের মে মাসে রাষ্ট্রসংঘের ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। এই দিনটি বাংলাদেশের মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের কথাও তুলে ধরে। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একটি বিশেষ থিম নিয়ে আয়োজন করা হয়। ২০২৫ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য হল "ভাষার গুরুত্ব: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজতজয়ন্তী উদযাপন।"

International Mother Language Day 2025