New Update
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/07/12/snake-worship-2025-07-12-09-10-35.jpg)
cobra puja: বছরের পর বছর ধরে অপার ভক্তিতে বিষধর কেউটে সাপকেই দেবীজ্ঞানে পুজো করেন এতল্লাটের বাসিন্দারা।
Jhankeshwari snake goddess worship: বাংলার এই প্রান্তে গ্রামের পর গ্রামে বাড়ি-বাড়ি বিষধর এই কেউটে সাপ ঘুরে বেড়ায়। প্রতি বাড়ির রান্নাঘর থেকে শুরু করে শোওয়ার ঘর, সর্বত্র এদের অবাধ বিচরণ।
cobra puja: বছরের পর বছর ধরে অপার ভক্তিতে বিষধর কেউটে সাপকেই দেবীজ্ঞানে পুজো করেন এতল্লাটের বাসিন্দারা।
human‑snake coexistence tradition: কারও কাছে তিনি পরিচিত 'ঝাঁকলাই' নামে। আবার কেউ তাঁকে বলেন 'ঝঙ্কেশ্বরী'। এমনই নানা নামে যিনি পরিচিতি তিনি আসলে হলেন বিষধর কেউটে সাপ। বংশ পরম্পরায় প্রতি বছর আষাড়ের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে তাঁকেই দেবীজ্ঞানে পুজো করে আসছেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ও মঙ্গলকোটের সাতটি গ্রামের বাসিন্দারা।
মহা ধুমধাম করে শুক্রবার 'ঝাঁকলাই'য়ের পুজো হল ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর এবং মঙ্গলকোটের ছোট পোশলা, পলসোনা, মুশারু এবং নিগন গ্রামে। আগে এই সাতটি গ্রামে ঝাঁকলাইয়ের অবাধ বিচরণ থাকলেও বর্তমানে ভাতারের বড়পোশলা এবং মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, মুশারু ও পলসোনা গ্রামে এখনও ঝাঁকলাই সাপ দেখা দেয়। এই গ্রামগুলিতে এদিন জ্যান্ত 'ঝাঁকলাই' সাপকেই দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়।
এলাকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ঝাঁকলাই বিষধর হলেও সে কাউকে কামড়ায় না। কোনও কারণে কাউকে ছোবল দিলে দেবীর মন্দিরের মাটি তার শরীরে লেপে দিলেই তিনি নাকি বিষমুক্ত হয়ে যান। এই বিশ্বাস আঁকড়ে আজও ঝাঁকলাই সাপকে সঙ্গে নিয়েই ঘর করেন এই সব গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তাঁদের গ্রামে রান্নাঘর থেকে শোওয়ার ঘর এবং গ্রামের মন্দির, সর্বত্রই বিষধর কেউটে প্রজাতির ঝাঁকলাই সাপের অবাধ বিচরণ দেখা যায়।
গ্রামগুলিতে এই ঝাঁকলাই সাপ নিয়ে অনেক লোককথা প্রচলিত আছে। এলাকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস, ঝাঁকলাই আসলে 'কালনাগিনী'। লক্ষ্মীন্দরকে লোহার বাসরঘরে দংশন করার পর পালানোর সময় বেহুলা তাকে লক্ষ্য করে ’কাজললতা’ ছুঁড়ে মারেন। এই ’কাজললতার’ আঘাতে কালনাগিনীর লেজ কেটে যায়। ঝাঁকলাইয়েরও লেজও নাকি তাই কাটা।
পলসোনার বাসিন্দাদের কথায় জানা যায়, পলসোনা গ্রামে একটা 'ডাঙা' আছে। সেই 'ডাঙা'র নাম 'খুনগোর'। এলাকায় জনশ্রুতি, বেহুলার 'শাপে' কালিয়াদহের কলনাগিনী মর্তে এসে 'খুনগোর ডাঙায়' বসবাস করতে শুরু করে। গ্রামের বাসিন্দা মুরারীমোহন চক্রবর্তীকে নাকি স্বপ্নাদেশে কালনাগিনী তার পুজো করার কথা জানায়। সেই থেকেই পলসোনা গ্রামে ঝাঁকলাইয়ের পুজো হয়ে আসছে। ঝাঁকলাইয়ের গায়ের রং কালচে বাদামি। যেসব গ্রামে ঝাঁকলাই সাপ দেখা যায় সেই সব গ্রামে সচরাচর অন্য কোনও বিষধর সাপ দেখা যায় না। ঝাঁকলাই রাতে বের হয় না। এমনকী এই সাপ এলাকা ছেড়েও বের হয় না।
আরও পড়ুন- Kolkata weather Update: বর্ষার রুদ্র রূপ দেখবে গোটা বাংলা! ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জেলায়-জেলায়
ঝাঁকলাই নিয়ে গ্রামের মানুষজনের ধর্মীয় বিশ্বাস যাই থাক বিজ্ঞানমঞ্চ বিষয়টিকে অন্য ভাবে দেখতেই আগ্রহী। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “সাপ এমনিতেই ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণী। কোনও কারণ ছাড়া সাপ কামড়ায় না। তাছাড়া ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে ভাতার ও মঙ্গলকোটের ওই সাতটি গ্রামের মানুষেরা সাপকে বিরক্ত করেন না। তার কারণে উভয়ের মধ্যে সহাবস্থান তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিনের সহাবস্থানের ফলে ওই সব গ্রামগুলিতে সাপের কামড়ের ঘটনা খুবই কম। তবে এই সাপের বিষ আছে। কামড়ালে হাসপাতালে যেতেই হবে।"