টাকা রোজগারের আশায় সারা বছর ধরে এই একটা দিনের জন্যই ওঁরা হা পিত্যেশ করে বসে থাকেন। কিন্তু একটা দুর্ঘটনাতেই সব ওলটপালট হয়ে গেল। রোজগার তো হলই না, কোনওরকমে প্রাণ রক্ষা হল এই যা। চোখ বন্ধ করলেই দুর্ঘটনার বিভীষিকা তাড়া করে বেড়াচ্ছে কচুয়া ধামে ডালা ব্যবসায়ীদের। শুক্রবার ভোররাতে কচুয়াধামে পদপিষ্ট হয়ে দুর্ঘটনায় লোকসানের মুখে কয়েকজন ডালা ব্যবসায়ী। এতদিন ধরে জন্মাষ্টমীর দিন পুজোর ডালা নিয়ে কচুয়াধামে অস্থায়ী দোকান করে বসতেন সুমিতা মণ্ডল, সুকুমার মণ্ডল, রবীন সাধুখাঁরা। কিন্তু এবার খালি হাতেই কার্যত ঘরে ফিরতে হবে ওঁদের।

ওঁদের কথায়, রাত সাড়ে ১২টা থেকেই ভিড় শুরু হয়েছিল। রাত যত বাড়ছিল, ভিড় ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল। সেইসঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। আর বৃষ্টি থামতেই কচুয়াধামের ছবিটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল। হুড়োহুড়িতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব তছনছ হয়ে গেল। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ডালা ব্যবসায়ী রবীন সাধুঁখা বলছিলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি, আমার মেয়ে-জামাই পুকুরে পড়ে গিয়েছে। বাঁচাও বাঁচাও করছে। কোনওরকমে ওদের টেনে তুলি। দোকান ভেঙে গিয়েছে। টাকা-পয়সা জলে গিয়েছে। প্রাণে রক্ষা পেলাম এই যা’’। একই হাল হয়েছে সুকুমার মণ্ডল ও সুমিতা মণ্ডলদের। পুকুরের ধারে বেশ কয়েকটি দোকান ভেঙে পড়েছে। দোকানের জিনিসপত্রও পুকুরের জলে ভেসে গিয়েছে। এই ক্ষতি পূরণে এখন সরকারের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন ওঁরা।
আরও পড়ুন: লোকনাথধামের ভিড়কে টলাতে পারেনি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, কচুয়ায় চেনা মেজাজ
অন্যদিকে, অতিরিক্ত ভিড়ের জেরেই এই পরিণতি বলে মনে করছেন ওঁরা। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নিয়মিত জন্মাষ্টমীতে কচুয়াধামে দোকান নিয়ে বসতেন ওঁরা। কিন্তু এত ভিড় আগে কখনও দেখেননি। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওঁরা বলেন, ‘‘মুহূর্তের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে পড়ে যান সকলে’’। ব্যবসায় লোকসান হয়েছে ঠিকই, সেই মন খারাপ সত্ত্বেও প্রাণে যে রক্ষা পেয়েছেন ওঁরা, এতেই খানিকটা স্বস্তি পেয়েছেন। কিন্তু দুর্ঘটনার দৃশ্য চোখের সামনে ভাসলেই শিউরে উঠছেন ওঁরা।