Kali Puja 2024-Durlava Kali Temple: এই কালীর পুজোর ভোগ নিবেদন করা হয় শিয়ালকে। বর্ধমানের দুর্লভা কালী মন্দিরের (Durlava Kali Mandir) সেই ভোগ
'শিবাভোগ' নামে বিশেষ পরিচিত। ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বর্ধমানের লাকুর্ডিতে পূজিতা হয়ে আসছেন ‘দুর্লভা কালী’ (Durlava Kali)। এই কালীর উপাসনাস্থল ও উপাসনার পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। যে কাহিনী আজও জনমনে শিহরণ জাগায়।
এক সময়ে বর্ধমানের লাকুর্ডি এবং তার আশপাশের এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। শিয়াল সহ হিংস্র সব জন্তু-জানোয়ারের আনাগোনা ছিল সেখানে। এমন দুর্গম স্থানে 'দুর্লভ' নামের এক কালী সাধক নাকি কালীর আরাধনা করতেন। সেই কারণে এখানকার কালী 'দুর্লভা কালী' নামে পরিচিতি পায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। অতীতের দুর্গম স্থান এখন শহুরে রূপ পেয়েছে। তবে 'দুর্লভা কালী' আজও আঁকড়ে আছে সাবেকি ঐতিহ্যকে।
'দুর্লভা কালী'র পুজো নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। কথিত আছে, পৈতে হয়ে যাওয়ার পর গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গলে ঢাকা লাকুর্ডি এলাকায় চলে এসে সেখানেই তিনি থাকতে শুরু করেন। একদিন সেখানকার একটি পুকুরে স্নান করতে নেমে তিনি একটি প্রস্তরমূর্তি পান। সেই রাতেই নাকি তিনি দেবী দুর্লভা মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। সেই স্বপ্নাদেশ মেনে লাকুর্ডির জঙ্গল আবৃত স্থানে তালপাতার ছাউনি তৈরি করে সেখানেই তিনি মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করে দুর্লভা কালীর আরাধনা শুরু করেন।
আরও পড়ুন- Kali Puja 2024: কালীমূর্তির পায়ে কাঁটা ফুটিয়ে রক্ত বের করেছিলেন, মহারাজকে শ্যামার প্রাণের প্রমাণ দেন কমলাকান্ত
গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী যখন দুর্লভা কালীর আরাধনা শুরু করেন তখন বর্ধমানের মহারাজা ছিলেন বিজয়চাঁদ মহতাব। তিনি একদিন শিকার করতে বেরিয়ে পৌছে যান জঙ্গল আবৃত লাকুর্ডি এলাকায়। সেদিন তিনি দেখেন, তালপাতার ছাউনি দেওয়া জায়গায় বসে এক সন্ন্যাসী সাধনা করছেন। ওই দিনটায় ছিল আমাবস্যা। কথিত আছে, "অমাবস্যার ওই রাতে বিজয়চাঁদ মহতাবকে পূর্ণিমার চাঁদ দেখান গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী।" গোকুলানন্দর এমন ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হন মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব। তিনি লাকুর্ডিতে মন্দির তৈরির জন্য গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারীকে জমি দান করেন।
আরও পড়ুন- West Bengal Weather Update: রোদ ঝলমলে আকাশের আড়ালেই নিকষ কালো মেঘ? কালীপুজোয় ঝেঁপে বৃষ্টি জেলায় জেলায়?
সেই জমিতে দুর্লভা কালীর পুজোর মন্দির সহ তিনটি শিব মন্দিরও মহারাজ গড়ে দেন। মন্দির গড়ে উঠলে সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেবী দুর্লভার মূর্তি। ’দুর্লভা কালী’ নাম নিয়ে মন্দিরের সেবায়েতদের ব্যাখ্যা অবশ্য ভিন্ন। তাঁদের ব্যাখ্যা, গোকুলানন্দ দেহত্যাগ করার পর মহারাজ বিজয়চাঁদ মহতাব মন্দিরে পুজোর জন্য দুর্লভ ভট্টাচার্য নামে এক পুরোহিতকে নিয়োগ করেন। সেই পুরোহিতের নাম অনুসারেই দেবী পরিচিতি পান ’দুর্লভা কালী’ নামে।
আরও পড়ুন- Kali Puja 2024: ডাকাতদের হাতে পুজোর শুরু, পাঁচ-বোনের এই কালীপুজোর নিয়ম জানলে অবাক হবেন
আরও পড়ুন- Eastern Rail: ঝাঁ চকচকে ঘর, নামমাত্র খরচ! জনপ্রিয় এই পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে এবার থাকুন রেলের 'অতিথি' হয়ে
দুর্লভা মায়ের পুজো শুধুমাত্র কালী পুজোর (Kali Puja) সময় ঘটা করে হয়, এমনটা নয়। দুর্গাপুজোর (Durga Puja) চার দিন মন্দিরে পূজিত হন দেবী দুর্লভা। আর কার্তিকের আমাবস্যা তিথিতে রাতভর দেবী দুর্লভার পুজোপাঠ হয়। সেবায়েতরা জানান, দেবীর মূর্তিটি প্রথমে মাটির ছিল। পরে অষ্টধাতুর দেবী মূর্তি তৈরি করা হয়। সেই মূর্তিটি চুরি হয়ে যাওয়ার পর তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব বেল কাঠের মূর্তি তৈরি করে দেন। কিন্তু সময়ের ফেরে বেলকাঠের মূর্তিতে ঘুণ ধরে গেলে তৈরি করা হয় সিমেন্টের দেবী মূর্তি। সেই মূর্তিটিও বেশি দিন টেকেনি। অল্প দিনের মধ্যেই সিমেন্টের মূর্তিতে ফাটল ধরে যায়।এরপর ভট্টাচার্য পরিবার রাজস্থান থেকে শ্বেতপাথরের মূর্তি তৈরি করিয়ে নিয়ে আসেন। দেবী দুর্লভার শ্বেতপাথরের সেই মূর্তিরই এখন পুজোপাঠ হয় মন্দিরে।