Vaishno Devi – Katra-Srinagar Vande Bharat: অবশেষে শুরু হল ভারতের অন্যতম প্রতীক্ষিত রেলপথের নয়া অধ্যায়। শনিবার সকালে বৈষ্ণো দেবী কাটরা স্টেশন থেকে শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেল প্রথম কাটরা-শ্রীনগর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। অত্যাধুনিক এই ট্রেনে ছিলেন ৫৩০ জন যাত্রী, যারা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রওনা দিলেন ১৮৯ কিমি দীর্ঘ এক অভূতপূর্ব রেল যাত্রায়।
পাহাড় ভেদ করে, নদী অতিক্রম করে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং চমক’
এই রেলপথের ১১১ কিমি কাটরা থেকে বানিহাল পর্যন্ত, যার মধ্যে ৯৭ কিমি পথ ২৭টি সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে, এবং ৭ কিমি পথ ৪৯টি সেতুর উপর দিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের উচ্চতম চেনাব রেল ব্রিজ এবং ভারতের প্রথম কেবল-স্টেইড রেল ব্রিজ ‘অঞ্জি সেতু’। এই যাত্রায় ছিলেন ভূতত্ত্ববিদ মহম্মদ ইয়াসিন, যিনি নিজেই কাটরা-রিয়াসি রুটের একটি সুড়ঙ্গ খননের কাজে যুক্ত ছিলেন। “আমার ভাই এখনও জম্মু এয়ারপোর্টে, আর আমি প্রায় শ্রীনগরে পৌঁছে গেছি,” বলেন ইয়াসিন, যিনি ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছিলেন।
ভক্ত ও পর্যটকদেরও টানছে ঐতিহাসিক রেলযাত্রা
উত্তরপ্রদেশের সরকারি শিক্ষক দীপক গুপ্ত তাঁর দুই ভাইকে নিয়ে এই যাত্রায় ছিলেন। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল বৈষ্ণো দেবী দর্শন, কিন্তু বন্দে ভারত ট্রেনের টিকিট পাওয়া মাত্রই তাঁরা সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন।
৩৫ বছর পর কাশ্মীরে ফিরলেন আইটি ইঞ্জিনিয়ার
১৯৯০ সালে কাশ্মীর ছেড়ে আসা অনিল ভাট এবার তাঁর পরিবারকে নিয়ে ফিরলেন উপত্যকায়। বাবা-মা, স্ত্রী ও কিশোরী কন্যাকে নিয়ে তিনি বললেন, “আমার বাবা ২০ বছর পর কাশ্মীরে ফিরছেন। আমাদের একান্ত ইচ্ছে ছিল এই ট্রেন ও চেনাব ব্রিজের যাত্রা অনুভব করার।”
তিন ঘণ্টায় শ্রীনগর!
যাত্রীদের অনেকেই জানালেন, আগে যেখানে গাড়িতে ৮ ঘণ্টা লাগত, এখন সেই পথ পেরিয়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছনো যাচ্ছে। সফররত এক গৃহবধূ বললেন, “এই অভিজ্ঞতা ভুলব না। প্রযুক্তি সত্যিই অসাধ্যকে সাধন করেছেন।” “এই ট্রেন না থাকলে আমি ঈদ বাড়িতে কাটাতে পারতাম না। এখন এটা শুধুই যোগাযোগ নয়, প্রয়োজনের সময় শ্রীনগর থেকে বড় হাসপাতালেও যাতায়াত সহজ করে দেবে, বলছেন আরও এক যাত্রী”
কাটরা-শ্রীনগর রেলপথটি ৪৩,৭৮০ কোটির উদমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক প্রকল্পের (USBRL) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তুষারপ্রবণ অঞ্চলে চলার জন্য এতে রয়েছে হিটেড উইন্ডশিল্ড, ইনসুলেটেড টয়লেট, অ্যাডভান্সড হিটিং সিস্টেম। ভূমিকম্প প্রতিরোধে রয়েছে সিসমিক ড্যাম্পার। শীতকালে ট্রেন চলার আগে থাকবে বরফ সরানোর বিশেষ ইঞ্জিন।
নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে জোর
ট্রেনে সুরক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে CORAS কমান্ডো। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রয়েছে আলাদা কর্মী দল। ট্রেনটি সপ্তাহে ৬ দিন চলবে।