কোভিড আতঙ্কে ত্রস্ত বিশ্ব। চিন সহ বেশ কয়েকটি দেশে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনার নয়া স্ট্রেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও বিষয়টি নিয়ে ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’ বলেই এক বিবৃতি জারি করেছে। করোনা-সুনামি আটকাতে তৎপর কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই দফায় দফায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হয়েছে পর্যালোচনা বৈঠক। কলকাতা বিমান বন্দরেও জারি চুড়ান্ত সতর্কতা।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক বিমান যাত্রীদের উপরই কোভিড বিধি জারি করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে আগত প্রত্যেক যাত্রীর সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়ার শংসাপত্র থাকতে হবে। এছাড়া আগের মতোই করোনা বিধি মেনে বিমানবন্দরে দূরত্ববিধি মেনে চলা, সকলের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কোনও যাত্রীর মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আইসোলেট করা হবে।
কলকাতা বিমানবন্দরেও জারি চূড়ান্ত সতর্কতা। যে সকল যাত্রী বিদেশ থেকে ভারতে আসছেন বিমান বন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেক যাত্রীর থার্মাল স্ক্রিনিং টেস্ট ব্যবস্থা করা হয়েছে বিমানবন্দরের তরফে। পাশাপাশি কোভিড বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। কোনও যাত্রীর মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড প্রোটোকল মেনে তাঁর বিশেষ চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করা হবে বলেই জানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
আন্তর্জাতিক বিমানে আগত কোনও যাত্রীর কারোর মধ্যে কোভিড উপসর্গ দেখা দিলে বিমানবন্দরেই তাঁর র্যানডম কোভিড টেস্ট করা হবে। পাশাপাশি থাকছে আইসোলেশনের ব্যবস্থাও। বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা। কোনও যাত্রীর র্যানডম টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাঁকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা হবে এবং তাঁর নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। পাশাপাশি মোট যাত্রীর ২শতাংশের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে শনিবার থেকেই।
ভ্রমণ কালীন সময়ে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে বলেই জানানো হয়েছে বিমানবন্দরের তরফে। সমস্ত এয়ারলাইন্সকেও এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে যে ভ্রমণের সময় এবং সমস্ত এন্ট্রি পয়েন্টে যাত্রীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। শারীরিক দূরত্বের প্রতি নজর দেওয়ার পাশাপাশি কোন যাত্রীর মধ্যে লক্ষণগুলি পাওয়া যায়, তাহলে তাদের অবিলম্বে আইসোলেট করে এবং নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পরীক্ষার পর যদি কোনো যাত্রীর নমুনা পজিটিভ পাওয়া যায়, তাহলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য INSACOG ল্যাবে পাঠাতে হবে বলে নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
আরও পড়ুন: < উত্তর সিকিমে খাদে পিছলে পড়ল সেনার ট্রাক, নিহত ১৬ জওয়ান, জখম ৪ >
কোন সমস্যা হলে নিকটস্থ হেল্পডেস্ক বা হেল্পলাইন নম্বরে কল করতে বলা হয়েছে যাত্রীদের (১০৭৫)। কেন্দ্রের এই নির্দেশিকাতে আরও বলা হয়েছে যে বিমানবন্দরে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের র্যানডম টেস্টের প্রয়োজন নেই তবে করোনার উপসর্গ পাওয়া গেলে প্রোটোকলের অধীনে শিশুর কোভিড পরীক্ষা করা যেতে পারে।
বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া রাজ্যগুলোকে ভ্যাকসিনের সতর্কতামূলক ডোজের ওপর জোর দিতে আহ্বান জানান। একইসঙ্গে করোনা সতর্কতা বাডা়নোর কথা বলেন। করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। শীর্ষস্তরের মন্ত্রীগোষ্ঠীর সদস্য ও সরকারি শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে করোনা রুখতে সর্বাত্মক চেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চিনে করোনা বাড়ছে। সেকথা মাথায় রেখে দেশজুড়ে করোনার নমুনা পরীক্ষা বা জিনোম সিকোয়েন্সিং বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের সময় রাজ্যগুলোকে হাসপাতালের পরিকাঠামোর প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে বলেছেন। একইসঙ্গে তিনি জনগণ যাতে কোভিডবিধি মেনে চলেন, তা-ও নিশ্চিত করতে বলেন। বৈঠকে জনবহুল স্থানে মাস্ক পরার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, ‘করোনা এখনও শেষ হয়নি। চলমান নজরদারি ব্যবস্থা তাই জোরদার করা দরকার। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, ভেন্টিলেটর এবং স্টাফ-সহ হাসপাতালের পরিকাঠামোর প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে। যাবতীয় কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা হাসপাতালগুলোয় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন: < ‘করোনা মোকাবিলায় ভারত সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত’: জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া >
সংসদের উভয় কক্ষে ভাষণ দিয়ে মান্দাভিয়া বলেছেন, বিমানবন্দরে আগত আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের ওপর করোনা পরীক্ষা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে পরীক্ষা চলছে। আসন্ন উত্সব এবং ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতা গ্রহণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যগুলোকে বলা হয়েছে, যাতে তারা যথাযথভাবে কোভিডবিধি মেনে চলে। জনবহুল স্থানে শারীরিক দূরত্ববিধি, মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহারের মত বিধি যাতে সঠিকভাবে মানা হয়, তা দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে চিনে ব্যাপকহারে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে আগামী কয়েক মাসে দেশটিতে ১০ লক্ষেরও বেশি মৃত্যু হতে পারে। ওমিক্রনের সাব-ভেরিয়েন্ট BF.7 চিনের করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধির জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। এই BF.7-এর তিনটি সংক্রমণের ঘটনা ভারতে এখনও পর্যন্ত সনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথমটি সেপ্টেম্বরে ওড়িশায়, দ্বিতীয়টি সেপ্টেম্বরে এবং তৃতীয়টি নভেম্বরে গুজরাটে। তার মধ্যে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, গুজরাটে ওই সাব-ভেরিয়েন্টের দুটি ঘটনা সামনে এসেছে। তার মধ্যে সেপ্টেম্বরে ভাদোদরায় এবং নভেম্বরে আহমেদাবাদে। দুটি ক্ষেত্রেই উভয় রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।