/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/23/kumartuli-ganesh-idols-kolkata-2025-08-23-11-41-48.jpg)
জনপ্রিয়তায় বিশ্বকর্মাকেও টেক্কা গণপতি বাপ্পার
Ganesh Chaturthi 2025: কলকাতার কুমোরটুলির সরু গলিতে এখন উৎসবের আমেজ। একের পর এক শিল্পীরা তুলির শেষ টান দিতে ব্যস্ত। সামনেই গণেশ চতুর্থী। কুমোরটুলি জুড়ে চলছে গনেশ মূর্তি গড়ার শেষ মুহূর্তের কাজ। মাটির উপর তুলির টান, শৈল্পিক নিপুণতা আর ঐতিহ্যবাহী হাতের ছোঁয়ায় যেন 'প্রাণ পাচ্ছে' মূর্তিগুলি।
যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। উৎসবের আগে চাহিদাও আকাশছোঁয়া। লাভের আশায় দিনরাত নাওয়া-খাওয়া ভুলে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা মূর্তি তৈরির কাজ করে চলেছেন। তবে নিন্মচাপের ভ্রূকুটি যেন কপালে ভাঁজ ফেলেছে শিল্পীদের।
দক্ষ তুলির টান আর ঐতিহ্যবাহী নিপুণতার সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির মূর্তি যেন 'জীবন্ত' হয়ে উঠছে। তবে এ বার গণেশ চতুর্থীর আগে প্রস্তুতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহাওয়ার খামখেয়ালি। কখনও রোদ, কখনও বৃষ্টির লুকোচুরি খেলায় সমস্যায় পড়েছেন কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা।
আরও পড়ুন-ইলিশের আগুন দামে মন খারাপ ভোজনরসিকদের, দিন কয়েকেই নাগালে রূপোলি শষ্য? কী জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা?
প্লাস্টিকের অস্থায়ী ছাউনি তলে সারি সারি অসমাপ্ত গণেশ মূর্তি সাজানো। হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এলে শিল্পীরা দৌড়ে মূর্তিগুলি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন ঘরের ভিতর। বারবার রোদ-বৃষ্টি খামখেয়ালিতে মাটির প্রতিমা শুকোনো, রং করা এবং অলঙ্করণে দেরি হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন শিল্পীরা। অনেক বড় আয়োজক চেয়েছিলেন রবিবারের মধ্যেই প্রতিমা হাতে পেতে। কিন্তু দেরি হওয়ায় তাদেরও চিন্তা বাড়ছে।
শিল্পী কার্তিক পাল বলেন, “উৎসবের আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। কিন্তু বৃষ্টি-রোদের লুকোচুরি আমাদের সমস্যায় ফেলছে। রোদে শুকোতে দিলেই বৃষ্টি শুরু হচ্ছে তখন আবার মূর্তিগুলি ভেতরে নিতে হচ্ছে। প্রতিমা শুকোতে দেরি হলে রং করা আর সাজানোর কাজও আটকে যাচ্ছে।”
প্রতিবারের মতো এ বারও কুমোরটুলি থেকে প্রায় এক হাজারের বেশি গণেশ মূর্তি যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। বড়বাজার, লেক টাউন, সল্টলেক, নিউটাউন, যাদবপুর এবং বেহালার মত অঞ্চল থেকে এসেছে প্রচুর অর্ডার। জানাচ্ছেন শিল্পীরা। কেবল মৃৎশিল্পী নন, পূজো উদ্যোক্তারাও বৃষ্টির কারণে সমানভাবে উদ্বিগ্ন। তারা জানাচ্ছেন, প্যান্ডেল তৈরি ও সাজসজ্জার কাজও বৃষ্টির জন্য দেরি হচ্ছে। তবু সমস্ত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সময়মতো প্রতিমা ও প্যান্ডেল প্রস্তুত করতে বদ্ধপরিকর শিল্পী ও উদ্যোক্তারা। কুমোরটুলিতে শিল্পীরা ছাউনি টাঙিয়ে, ফ্যান দিয়ে প্রতিমা শুকিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন-টানা ৩ দিন মন্দিরে লুকিয়ে প্রাণ রক্ষা বাংলার মুসলিম যুবকের, ভিনরাজ্যে হাড়হিম ঘটনা!
শিল্পী কালীচরণ পাল জানাচ্ছেন, সাম্প্রতিক সময়ে গণেশ পূজার জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বেড়েছে। তাঁর কথায়, “প্রায় ৩০ শতাংশ গণেশ পূজা বেড়েছে। আগে আমরা ৩০টা প্রতিমা বানাতাম, এখন হাজার হাজার বানাতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো গণেশ পূজা বিষ্ণকর্মা পূজাকেও ছাড়িয়ে যাবে।” শিল্পী সুমিতা পাল বলেন, “আমরা নিজেদের মতো করে শৈল্পিক ছোঁয়া আনি। এতে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।” এ বছর বড়সড় আয়োজনে কিছুটা ভাটা পড়লেও কম বাজেটের প্রতিমার চাহিদা বেড়েছে।
শিল্পী খোকন পাল বলেন, “মানুষ এখন ছোট মাপের, সাশ্রয়ী প্রতিমা চাইছেন। অতিরিক্ত সাজসজ্জার জন্য অনেকেই বাড়তি খরচ করতে চাইছেন না।” চাপ সামলেও কুমোরটুলির প্রতিটি গলিতে এখন উৎসবের উন্মাদনা। প্রতিমাশিল্পীরা আশাবাদী, সময়মতো গণেশ চতুর্থীর জন্য প্রস্তুত হবে প্রতিটি প্রতিমা।