এনআরএসকাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ল গোটা দেশে। শুক্রবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পা মিলিয়েছেন চিকিৎসকরা। কেউ কেউ কালো ব্যাজ পরেই রোগী দেখছেন। এদিকে, ৪ দিন পর এখনও অচলাবস্থা কাটল না কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তবে আজ সকালে খুলেছে এনআরএসের জরুরি বিভাগ। কিন্তু নামমাত্রই চলছে পরিষেবা। এখনও আন্দোলনে অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা। দুই সিনিয়র চিকিৎসকই কার্যত পাহাড়া দিচ্ছেন এমার্জেন্সি ওয়ার্ড। এনআরএসকাণ্ডে আজ ফের রাজ্যপালের দ্বারস্থ হচ্ছেন চিকিৎসকরা। এদিন দুপুরে রাজভবনে যাওয়ার কথা চিকিৎসকদের ৬টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের। পাশাপাশি এদিনও বিকেলে ফের এনআরএস থেকে মিছিলে হাঁটবেন জুনিয়র ডাক্তাররা। অন্যদিকে, রাজ্যের জেলায় জেলায় সরকারি হাসপাতালেও বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন।
সোমবার (১০ জুন): ঘটনার সূত্রপাত, সোমবার। গত ১০ জুন রাতে এনআরএসে মৃত্যু হয় মহম্মদ সৈয়দের(৭৪)। চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর চড়াও হন নিহতের পরিজনরা। ২টি ট্রাকে করে বাইরে থেকে লোক এনে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। মারধরে গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়। জখম হন আরেক জুনিয়র ডাক্তার যশ টেকওয়ানি।
আরও পড়ুন: NRS doctors’ protest Live: এনআরএসকাণ্ডে বিপুল সংখ্যক গণইস্তফা আরজিকরে
মঙ্গলবার (১১ জুন): এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। বেলা গড়ালে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতাল। এনআরএসে গেলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ডাক্তাররা। ‘ডক্টরস ফোরাম’-এর নেতৃত্বে সাংবাদিক সম্মেলন করে মঙ্গলবার বিকেলে জানানো হয়, ১২ জুন রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ থাকবে। তবে এমার্জেন্সি বিভাগ খোলা রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, এনআরএসে ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করে পুলিশ। ধৃতরা সকলেই নিহত রোগীর পরিজন বলে জানা গিয়েছে। তবে ধৃতদের কারওরই নাম প্রকাশ্যে আনেনি পুলিশ।
বুধবার (১২ জুন): রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করা হয়। বন্ধ থাকে আউটডোর। এমনকি, এনআরএস, এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যালে জরুরি পরিষেবাও থমকে যায়। যার জেরে চরম হয়রানির মুখে পড়েন রোগীরা। বেলা গড়াতে নীলরতন সরকার হাসপাতালে আসেন অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ডাঃ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আন্দোলনরত জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কার্যত থমকে যায় চিকিৎসা পরিষেবা। এর জেরে চরম ভোগান্তির শিকার হন রোগীরা। কলকাতায় দফায় দফায় বিক্ষোভে শামিল হন রোগীদের একাংশ।
আরও পড়ুন: নবান্নে জরুরি বৈঠকে মমতা, খোলা চিঠি সিনিয়র ডাক্তারদের
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন): জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে কার্যত ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এদিনও এনআরএস-সহ বেশ কিছু হাসপাতালে কর্মবিরতি চলে। হঠাৎই এসএসকেএমে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাক্তারদের ৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করার নির্দেশ দেন। তা না হলে এসমা আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মমতা। এমনকী নির্দেশ না মানলে হস্টেল খালি করারও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার হুঁশিয়ারির পরই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ঘিরে আরও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির প্রতিবাদে এদিন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সিনিয়র ডাক্তারদের খোলা চিঠি পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নে জরুরি বৈঠকও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে, এ ইস্যুতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হন জুনিয়র ডাক্তাররা। রাতে ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে ইস্তফা দেন এনআরএসের অধ্যক্ষ ও সুপার।
শুক্রবার (১৪ জুন): এনআরএসে সকালে খোলে জরুরি বিভাগ। কিন্তু সে অর্থে জরুরি পরিষেবা চালু হয়নি। এদিন দেশজুড়ে এনআরএসকাণ্ডে বিক্ষোভে শামিল হন চিকিৎসকরা। কালো ব্যাজ পড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি আইএমএ-র। কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লির এইমস কর্তৃপক্ষ। এদিন আরজি করে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক গণইস্তফা দেন। ইস্তফা দেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ২ চিকিৎসক। শুক্রবার এনআরএসে যান অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনরা। মুখ্যমন্ত্রীকে এনআরএসে আসার আর্জি জানান অপর্ণারা। নবান্নে সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকের পরই জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বিকেল ৫টার মধ্যে নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের ডেকে পাঠান মমতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই ডাক ফিরিয়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। গতকাল রাতেমুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে এনআরএসে যান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। কিন্তু কোনও রফা মেলেনি। শুক্রবার রাতে এনআরএসে প্রহৃত ডাঃ পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে দেখতে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। মমতাকে হস্তক্ষেপের নির্দেশ দিয়ে চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।
শনিবার (১৫ জুন): মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে নবান্নে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তাররা। এনআরএসের ঘটনায় রাজ্যকে ফের অ্যাডভাইজরি পাঠালো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এদিকে, আজও এনআরএসে বন্ধ আউটডোর। আজ কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের ৩৪ জন ডাক্তার ইস্তফা দেন। আপাতত আন্দোলন চলছে...