Durga Puja 2025: কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীর পুজো, ৪০০ বছরের ঐতিহ্যে আজও উজ্জ্বল দুর্গোৎসবের স্বকীয়তা

Rajrajeshwari Puja: প্রাচীন এই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো আজও নিজ গুণে অদ্বিতীয়। উৎসবের দিনগুলিতে রাজবাড়িতে ঢল নামে দর্শনার্থীদের।

Rajrajeshwari Puja: প্রাচীন এই রাজবাড়ির দুর্গাপুজো আজও নিজ গুণে অদ্বিতীয়। উৎসবের দিনগুলিতে রাজবাড়িতে ঢল নামে দর্শনার্থীদের।

author-image
Mousumi Das Patra
New Update
Krishnanagar Rajbari  ,Rajrajeshwari Puja,  Maharaja Krishnachandra,  Durga Puja heritage  ,Universal Durga Utsav  ,Neelkanth bird  ,Sandhi Puja  ,Sindur Khela,  Offerings of sugarcane and ash gourd,  Puja Bhog,  Bedeni Dak idol decoration,  Royal family Puja , Nadia district,কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি  ,রাজরাজেশ্বরী পূজা,  মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র  ,দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য , সার্বজনীন দুর্গোৎসব,  নীলকণ্ঠ পাখি,  সন্ধিপুজো,  সিঁদুরখেলা  ,আখ ও চালকুমড়ো বলি  ,পুজোর ভোগ,  প্রতিমার বেদেনি ডাক সাজ,  রাজপরিবারের পুজো,  নদিয়া জেলা

Durga Puja 2025: চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পুজো চলছে।

Krishnanagar Rajbari: একসময় ওড়ানো হতো নীলকণ্ঠ পাখি। এখন অবশ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারপরও বঙ্গে দুর্গাপুজোকে সার্বজনীন করা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রর কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজোও আজও তার স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। আজ থেকে ৩১৫ বছর আগে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রর জন্মগ্রহণ করেন। তার আগেই নদিয়া রাজপরিবারে রাজরাজেশ্বরীর পুজোর শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীর পুজো চারশো বছরের বেশি সময় ধরে হচ্ছে । মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রই প্রথম সর্বসাধারণের মধ্যে দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন যা পরবর্তী কালে সর্বজনীন পরিচিতি পায়।

Advertisment

রীতি অনুযায়ী মহালয়ার পরে প্রতিপদের দিন থেকে রাজরাজেশ্বরীর হোম জ্বালানো হয়। হোমে একটা সময় হোমে আস্ত একটা চন্দন গাছ প্রয়োজন হত। তবে আগের মতো কয়েক কুইন্টাল ঘি, বেল কাঠ পাতা, জল, মধু, ঘি, কলার মতো উপাচারের প্রয়োজন হয়। এই হোমের আগুন জ্বলে টানা নবমী পর্যন্ত। পরে হোমের আগুন নেভানো হয়। রাজরাজেশ্বরী পাটে আসীন হন বোধনের সময়ে। তাকে বেহারাদের কাঁধে চড়িয়ে রাজবাড়ির পঙ্খ অলঙ্কৃত দুর্গাদালানে অধিষ্ঠিত করা হয়। উল্টোরথের পরের দিন পাটপুজোর মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণের কাজ। প্রচলিত দুর্গা প্রতিমার থেকে রাজবাজেশ্বরী মূর্তি আলাদা। 

আরও পড়ুন- West Bengal News Live Updates: দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে মন্ত্রীদের কী কী দায়িত্ব? বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

Advertisment

এই মূর্তি তৈরি করতেন সাধন পাল। ১৯৬৭ সালে তিনি মারা যান। তারপর থেকেই দেবী মূর্তির পরিবর্তন হয়েছে। এখানে দেবী দুর্গার সামনের দু’টি হাতই বড়, পিছনের আটটি হাত আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট। দেবীর গায়ে থাকে বর্ম। দেবী যুদ্ধের বেশে সজ্জিত। পিছনে অর্ধগোলাকৃতি সাবেক বাংলা চালির এক দিকে আঁকা থাকে দশাবতার, অন্য দিকে দশমহাবিদ্যা। মাঝে থাকেন পঞ্চানন শিব। দেবীর বাহন পৌরাণিক সিংহ। সামনে থাকে ঝুলন্ত অভ্রধারা। প্রতিমার সাজেরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। প্রচলিত ডাকের সাজের চেয়ে আলাদা।

আরও পড়ুন-Purba Bardhaman News:বাবার সঙ্গে বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুরতে যাওয়া হয়নি, অভিমানে ষষ্ঠ শ্রেণির এই পড়ুয়া যা ঘটাল...

একে বলা হয় ‘বেদেনি ডাক’। এখন কামান দেগে সন্ধিপুজো না হলেও আজও পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সন্ধিপুজো। রাজবাড়ির সন্ধিপুজো দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। প্রথা মতোই থাকে ১০৮টি পদ্মফুল ও ১০৮টি প্রজ্বলিত প্রদীপ। আগে দুর্গাপুজোতে হতো ছাগবলি। এখন অবশ্য শুধু মাত্র আখ ও চালকুমড়োর বলি হয়। পুজোর ভোগ মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায়।  খিচুড়ি, ভাজা, ছ্যাঁচড়া সহ একাধিক তরকারি, চাটনি, সুজি,পায়েস। সপ্তমীতে  সাত রকমের ভাজা হয়। অষ্টমীতে পোলাও, ছানার ডালনার সঙ্গে ভাত, আট রকম ভাজা, মিষ্টি, ক্ষীর সহ একাধিক পদ থাকে। নবমীতে নয় রকম ভাজা, তিন রকম মাছ, ভাত, মিষ্টি থাকে। দশমীতে গলা ভাত, সিঙি মাছ, খই, ফল, দই, চিড়ে ভোগ দেওয়া হয়। দশমী মানেই আকাশে বাতাসে বিষাদের সুর।

আরও পড়ুন-Historic Bridge: ঐতিহ্যের নির্মাণে রঙের ছোঁয়া, দুর্গোৎসবের আগে কচিকাঁচাদের তুলির আঁচড় রবীন্দ্রনাথ-গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত সেতুতে

সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন রাজপরিবারের গৃহকর্ত্রী অমৃতা রায়। ২০০২ সালে তিনি সিঁদুর খেলা শুরু করেন। সকাল থেকেই  রাজবাড়িতে ভিড় করেন অসংখ্য  মহিলারা। রীতি মেনে চলে দেবী বরণ, এরপরই শুরু হয় সিঁদুরখেলা। সকলের মঙ্গল কামনায় এই সিঁদুরখেলা হয়। দেবীকে নাট মন্দির  থেকে বের করে ঢাক ঢোলের শব্দে রাজবাজেশ্বরীকে রাজবাড়ির পুকুরে বিসর্জনের আগে সাত পাকে ঘোরানো হয়। দেবীকে দেখতে পুকুর পাড়ে মানুষ জমায়েত হয়ে প্রণাম করেন। আগে রাজবাজেশ্বরীর বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যেত কৃষ্ণনগরে প্রতিমার বিসর্জন।

সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু রদ বদল হলেও কৃষ্ণনাগরিকদের মণিকোঠায় রাজবাজেশ্বরী আজও থেকে গিয়েছেন। পুজো শেষ হতে  দশমীর দিন ওড়ানো হতো নীলকণ্ঠ পাখি। এখন অবশ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বর্তমান গৃহকর্ত্রী অমৃতা রায় বলেন, 'আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হতো। এখন তো তা সম্ভব নয়। তবে আগের মতো সমস্ত কিছু মেনে পুজোটা হয়। আর সিঁদুরখেলা পুজোর অঙ্গ। সারা বছর সকলে অপেক্ষায় থাকি। একটা মিলন সংযোগ হয়।'

Bengali News Today Krishnanagar Durga Puja 2025