/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/02/cats-2025-10-02-12-53-38.jpg)
বিজয়ার দিনে 'বিশেষ' আয়োজন কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে, কারণ জানলে অবাক হবেন
দেশবাসীর মঙ্গল কামনায় রাজরাজেশ্বরীর পুজোতে সূচনা হয়েছিল যাত্রামঙ্গলের। দেশ দশের মঙ্গলে দশমীর দিন পুজো শেষে এই যাত্রামঙ্গলের পর মহারাজারা ঠাকুরদালান থেকে শুভদৃষ্টি সেরে রাজপ্রাসাদে ঢুকতেন৷ আগের মতই কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে চারশো বছরের বেশি সময় ধরে নদীয়া রাজবাড়িতে এই প্রথা এখনও চলে আসছে। পুরনো প্রথা মেনে হয়ে আসছে শত্রুবধও।
বঙ্গে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ি রাজরাজেশ্বরীর পুজো আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রই প্রথম সর্বসাধারণের মধ্যে দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন যা পরবর্তীকালে সর্বজনীন পরিচিতি পেয়েছিল। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির যাত্রামঙ্গল নিয়ে নদীয়াবাসীর বিশ্বাস রয়েছে। একটা সময় রাজতন্ত্র ছিল। তখন রাজবাড়ি, রাজা, রাণী, হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া- আলাদা আদপ কায়দা ছিল। সেসব আজ আর নেই। তবে রাজরাজেশ্বরীর পুজো, নিয়মের মধ্যে থাকা যাত্রামঙ্গল এখনও রয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- আপ্লুত দেশবাসী! গান্ধীর আত্মনির্ভর ও উন্নত ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার শপথ প্রধানমন্ত্রী মোদীর
তবে আগের মতো জ্যান্ত হাতি-ঘোড়া আজ আর থাকে না। কিন্ত মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়ার প্রতীকী দর্শন করানোর মাধ্যমে সমস্ত কিছু রক্ষা করা হয়। এই শুভদৃষ্টিতে দক্ষিণাবর্ত অগ্নি, গণিকা, ঘি, দুধ, দই, ধান, ঘাস, মোষ, ঘোড়া, হাতি, জ্যান্ত মাছ, সদ্য কাটা মাংস,ফুল,সোনা, গাঁজা, পতাকা ইত্যাদি থাকে৷ রাজ রাজেশ্বরীকে বরণের পর সিঁদুর খেলা হয়। এই খেলা শেষ হতেই ঠাকুরদালানে দাঁড়িয়ে নদীয়ারাজের মহারাজকে এ সমস্ত দেখাতেন পুরোহিত। দশমীর শেষে রাজপরিবারের সদস্যরা প্রতীকী সমস্ত কিছু দর্শন করে প্রাসাদে প্রবেশ করে। এতে মানুষের মঙ্গল হয়। সমৃদ্ধি আসবে এই কামনা করেই যাত্রামঙ্গল হয়। রাজবাড়ির পুজোর প্রথম থেকেই যাত্রামঙ্গল হচ্ছে। কোন দিনই এই যাত্রামঙ্গল বন্ধ হয়নি।এমনকি করোনা আবহেও এই প্রথার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এর মাধ্যমে আলাদা নিয়ম ঐতিহ্য রক্ষা হয়৷
যাত্রামঙ্গল কি, কেন এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ির গৃহকর্ত্রী অমৃতা রায় বলেন, যাত্রামঙ্গল মানে আরেকটা বছরের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষাটা ভালো মন্দ সবটা রেখেই যাত্রা করা। তাই দুধ, দই, ধান, দুব্য , মোষ, ঘোড়া, হাতি, জ্যান্ত মাছ, সদ্য কাটা মাংস,ফুল,সোনা- সব দেখবে। ছেলেরা ডান পা এগিয়ে দিয়ে শুরু করবে। বলবে - যাত্রামঙ্গল। আর মেয়েরা বা পা এগিয়ে দিয়ে শুরু করবে। বলবে - যাত্রামঙ্গল। মাঝখানে আর কাউকে দাঁড়ান যাবে না।সোজা রাজপ্রাসাদে ঢুকে গিয়ে ঠাকুর ঘরে যেতে হবে। বলা হয় মা ভালো ভাবে চলে গিয়েছ। মা আবার পরের বার এসো। সকলকে আশীর্বাদ করো। যেন সবার মঙ্গল হয়।'
অমৃতা রায় আরও বলেন, 'পুজোর প্রথম থেকেই এই প্রথা চলে আসছে।' রাজবাজেশ্বরীকে নাট মন্দির থেকে বের করে ঢাক ঢোলের শব্দে রাজবাড়ির পুকুরে বিসর্জনের আগে সাত পাকে ঘোরানো হয়।দেবীকে দেখতে পুকুর পাড়ে জমায়েত হওয়া মানুষ প্রণাম করেন। আগে রাজবাজেশ্বরীর বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যেত কৃষ্ণনগরে প্রতিমার বিসর্জন। প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে পুরনো প্রথা অনুসারে বোধনের বেলতলায় কাঁচা মাটির তৈরি শত্রুর প্রতীকী মূর্তিকে, তীর-ধনুক দিয়ে শত্রুবধ করেন রাজবাড়ির গৃহকর্তা। এখনও রাজবাড়ির গৃহকর্তা সৌমীশ্চন্দ্র রায় এই প্রথা মানেন। সকলের মঙ্গল কামনাও করেন।আগে দশমীর দিন ওড়ানো হতো নীলকণ্ঠ পাখি। এখন অবশ্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিকেলে দেশের শত্রুকে প্রতীকী করে মাটির তৈরি করা হয়। রাজাবাড়ির গৃহকর্তা তীর ধনুক দিয়ে সেই শত্রুকে বধ করেন। মানুষের বিশ্বাস এতে দুঃখ কষ্ট এক বছর হবে না। এ নিয়ে রাজবাড়ির বর্তমান গৃহকর্তা মনীশচন্দ্র রায় বলেন,' এখানে একসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে , কিন্তু সেভাবে কিছু হয়নি। রাজ রাজেশ্বরীর আশীর্বাদে রয়েছে।