History of Mota Shiva or Buro Shiva of Bengal: দেবাদিদেব ভগবান শিবের উপাসনা করেন কাতারে কাতারে পুণ্যার্থী। এরাজ্যের দিকে দিকে রয়েছে বহু শিব মন্দির। এমন বেশ কিছু শিব মন্দির তৈরির পেছনে রয়েছে এক স্বর্ণালী অতীত। বাংলার তিন প্রান্তে রয়েছে 'মোটা শিবের' মন্দির। কেন এই বিশেষ নামকরণ? বিশেষ এই প্রতিবেদনে বাংলার তিন প্রান্তের তিন 'মোটা শিব' বা 'বুড়ো শিব' নিয়ে অজানা নানা কাহিনী বর্ণনা করা হল।
বর্ধমানের আলমগঞ্জে ১৯৭২ সালে একটি পুকুর খননের কাজ চলছিল। সেই সময় শ্রমিকরা সেই এলাকা থেকে বিশাল একটি কালো পাথর দেখতে পান। পাথরটি তোলা হলে দেখা যায় সেটি একটি বিশাল শিবলিঙ্গ। পরবর্তী সময়ে সরকারি তত্ত্বাবধানে সেই শিবলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা হয়। পুরাতত্ত্ব বিভাগ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেই সময় জানিয়েছিল, উদ্ধার হওয়া শিবলিঙ্গটি ১৭০০ বছরের প্রাচীন। রাজা কনিষ্ক ওই শিবলিঙ্গের পুজো করতেন। কুষাণ যুগের সেই শিব 'মোটা শিব' নামে খ্যাত। পরবর্তী সময়ে এই শিবলিঙ্গের নামকরণ হয় 'বর্ধমানেশ্বর'। প্রতি বছর শিবরাত্রিতে বর্ধমানের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিব ভক্তরা মোটা শিবের পুজো দিতে ভিড় জমান। এমনকী ভিন রাজ্য থেকেও বহু পুণ্যার্থী শিবরাত্রির দিন বর্ধমানে আসেন মোটা শিবের পুজো দিতে। শিবরাত্রির দিন থেকে এখানে সাত দিনব্যাপী বিরাট মেলা বসে। রীতিমতো উৎসবের মেজাজ তৈরি হয় মন্দির প্রাঙ্গণে।
এমনই আরও একটি 'মোটা শিব'-এর মন্দির রয়েছে খাস কলকাতা শহরেই। সাড়ে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্বর্ণালী ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে উত্তর কলকাতার নিমতলা শ্মশানের কাছের এই শিব মন্দিরটি। মন্দিরের গা বেয়ে বট-অশ্বত্থের ঝুরি নেমেছে। প্রাচীন এই মন্দির দূর থেকে দেখলে মনে হবে অনেকটা শিবের জটার মতোই। আটচালা এই মন্দিরেই রয়েছে বিশাল আকারের একটি শিবলিঙ্গ। ফি দিন এই মন্দিরে ঢল নামান বহু পুণ্যার্থী। জানা যায়, ১৭১৬ সালে হাটখোলার দত্ত পরিবারের মদনমোহন দত্তের দুই পুত্র এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আরও পড়ুন- Maha Shivratri 2025: বর্গী হামলা থেকে বাঁচতেই বাংলাজুড়ে শিব মন্দির তৈরির আগ্রহ বাড়ে, মত বিশিষ্ট ইতিহাসবিদের
সম্প্রতি নিমতলা শ্মশানের কাছে এই দুর্গেশ্বর মোটা মহাদেবের মন্দির হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই 'মোটা শিব' অত্যন্ত জাগ্রত বলে মনে করেন ভক্তরা। বহুবার এই মন্দিরের সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মন্দির সংস্কারের কাজ থমকে গিয়েছে। হাজারও বিশ্বাস নিয়ে বছরভর এই দুর্গেশ্বর মোটা মহাদেবের মন্দিরে ঢল নামান পুণ্যার্থীরা। তাঁদের বিশ্বাস, অপার ভক্তিতে মোটা মহাদেবের কাছে মনস্কামনা জানানো হলে তা পূর্ণ হয়।
বাংলার আরও এক 'মোটা শিব' বা বুড়ো শিবের মন্দির বলে পরিচিত নদিয়ার মাজদিয়ার শিব নিবাস। মহা শিবরাত্রি (Maha Shiv Ratri 2025) তিথিতে কাতারে কাতারে ভক্তের ভিড়ে গমগম করে ওঠে এই মন্দির। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবনিবাসে ভক্তদের বিপুল সমাগম ঘটে। শিবরাত্রির পণ্য তিথিতে লাইন দিয়ে পালা করে শিবের মাথায় জল ঢালেন ভক্তরা। সেই সঙ্গে গোটা মন্দির 'হর হর মহাদেব' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে পড়ে। এবারও তার অন্যথা হয়নি। নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, শিবরাত্রির সময় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাজদিয়ায় এই বুড়ো শিবের মন্দিরে ভিড় জমান ভক্তরা।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: কুমোরটুলিতে ট্রলিব্যাগে দেহ, ধৃত মা-মায়েকে জেরায় হাড়হিম তথ্য পেল পুলিশ
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, মাজদিয়ার এই শিব মন্দিরটি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্বকালে তৈরি হয়। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র বর্গিদের আক্রমণ থেকে বাঁচতেই তাঁর রাজধানী কৃষ্ণনগর থেকে রাজ্যপাট সরিয়ে এনেছিলেন এই এলাকায়। বিশাল আকারের রাজপ্রাসাদ গড়ার পাশাপাশি এখানেই তিনি তৈরি করেন অসংখ্য শিব মন্দির। সেই থেকে গোটা গ্রামের নাম হয়ে যায় শিব নিবাস। এখানে ১৭৫৪ সালে প্রথম যে মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল সেটিই মূল শিব মন্দির। যার নাম রাজরাজেশ্বর। স্থানীয়রা এই মন্দিরকেই বলেন 'বুড়ো শিবের' মন্দির। কেউ কেউ বলেন মোটা শিবের মন্দির।