New Update
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/26/ZRNEBfifOleeQ1t9NjB3.jpg)
Maha Shivratri 2025: রাজ্যজুড়ে দিকে দিকে শিব মন্দির তৈরির পিছনে অনেকেরই অজানা এক কাহিনী শোনালেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ।
Maha Shivratri 2025: রাজ্যজুড়ে দিকে দিকে শিব মন্দির তৈরির পিছনে অনেকেরই অজানা এক কাহিনী শোনালেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ।
Shivratri 2025: বাংলার দিকে দিকে অজস্র শিব মন্দির রয়েছে। একটা সময় নাকি এরাজ্যে শিব মন্দির তৈরির আগ্রহ প্রবলভাবে বেড়ে গিয়েছিল। আর এই প্রবণতার পিছনে ছিল বর্গী হামলার আতঙ্ক। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদের মতে বর্গী আক্রমণ থেকে বাঁচতেই একটা সময়ে বাংলা জুড়ে শিব মন্দির তৈরির আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। বর্ধমানের অলি-গলিতে শিব মন্দির দেখা যায়। বর্ধমানের দিকে দিকে শিব মন্দির গড়ে ওঠার পিছনেও দারুণ এক তথ্য দিয়েছেন ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ।
এ রাজ্যে শিব মন্দিরের প্রসঙ্গ এলেই প্রথম আসে বর্ধমানের নাম। এই বর্ধমানেই রয়েছে ১০৮ শিব মন্দির। শিবরাত্রিতে (Maha Shivratri 2025) এখানে পুজো দিতে ঢল নেমে যায় পুণ্যার্থীদের। দুই বর্ধমানের পাশাপাশি লাগোয়া জেলাগুলি ছাড়াও ভিন রাজ্য থেকেও এখানে বহু ভক্ত পুজো দিতে আসেন। শিবরাত্রি উপলক্ষে মন্দির চত্বরে সাত দিন ব্যাপী মেলা বসে। মহাশিবরাত্রির পুজো উপলক্ষে এলাকায় উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়।
বর্ধমানের ১০৮ শিব মন্দিরের খ্যাতি দেশজোড়া। পাশাপাশি ভিন রাজ্য থেকেও বছরভর অগণিত ভক্ত আসেন এই ১০৮ শিব মন্দিরে। জানা যায়, কয়েকশো বছর আগে বর্ধমানের নবাবহাটে এই মন্দির গড়ে তুলেছিলেন মহারানি বিষণ কুমারী। সেই মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় গোটা দেশ থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরা এসেছিলেন। জানা যায়, ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে এই ১০৮ শিব মন্দির তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। মন্দির নির্মাণ শেষ হয় ১৭৯০ সালে।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: কুমোরটুলিতে ট্রলিব্যাগে দেহ, ধৃত মা-মায়েকে জেরায় হাড়হিম তথ্য পেল পুলিশ
এলাকায় জনশ্রুতি, ঠিক সেই সময় বর্ধমান সংলগ্ন নবাবহাট এলাকায় ব্যাপক মহামারীতে কাতারে কাতারে মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। নিদারুণ সেই শোক ভোলাতেই এলাকার বাসিন্দাদের ভগবানের উপর বিশ্বাস আনতে নবাবহাটে এই ১০৮ শিব মন্দির গড়ে তুলেছিলেন বর্ধমানের রানিমা। ১০৮ শিব মন্দিরের পাশাপাশি এখানে অতিরিক্ত আরও একটি মন্দির রয়েছে।
সব মিলিয়ে মন্দিরের সংখ্যা ১০৯।
বর্ধমানের আরো এক জাগ্রত শিব বাবা বর্ধমানেশ্বর। এই শিবলিঙ্গটি ১৯৭২ সালে বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জের কাছে একটি পুকুর খুঁড়ে মিলেছে। পুকুরটি সংস্কারের কাজ চলছিল। সেই সময় সংস্কারের কাজ করা শ্রমিকরা প্রায় ৬ ফুট উচ্চতারও বেশি ওই শিবলিঙ্গটি তুলে আনেন। তারপর থেকে আলামগঞ্জে এই শিবলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা হয়। বাবা বর্ধমানেশ্বর রূপে পুজিত হন মহাদেব। শিবরাত্রির দিন কাতারে কাতারে ভক্ত বর্ধমানেশ্বর মন্দিরে ভিড় জমান। শ্রাবণ মাসে এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ভক্ত ভিড় জমান বর্ধমানেশ্বর মন্দিরে। বর্ধমানের পাশাপাশি গোটা রাজ্যেই জেলায়-জেলায় বহু শিব মন্দির রয়েছে। তারকেশ্বরের মন্দিরও তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও আরও অনেক ছোট-বড় শিব মন্দির রয়েছে বাংলার কোণায়-কোণায়।
আরও পড়ুন- Digital Arrest: কলকাতার নাকের ডগায় ২ মাস 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' দম্পতি, দফায়-দফায় ৫২ লক্ষ টাকা 'লুঠ'
১৭৪০ থেকে ১৭৫০ সালের মধ্যে মূলত বর্গী আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেই বাংলার দিকে দিকে শিব মন্দির তৈরি হয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে। এমনই ধারণা পোষণ করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশও। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, "বর্গী আক্রমণ থেকে বাঁচতে বর্ধমানে শিব মন্দির তৈরির আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। ভাস্কর পণ্ডিত (যুদ্ধে পারদর্শী বর্গী নেতা) নাকি শিবের পূজারী ছিলেন। যেখানে শিব মন্দির থাকত সেখানে তিনি আক্রমণ করতেন না বলে জনশ্রুতি। ১৭৪০-১৭৫৫ সালে গ্রামে-গ্রামে দক্ষিণ বা পূর্ব দিকে শিব মন্দির তৈরির একটি চল গোটা বাংলা জুড়ে হয়েছিল। মারাঠা দস্যুরা দক্ষিণ দিক থেকে আসত, তারা শিবমন্দির দেখতে পেলে আক্রমণ করত না। এটা একটা লোক-গল্প। বর্ধমানের মাহারাজাও নাকি এই কারণেই গ্রামে-গ্রামে শিব মন্দির বানাতে শুরু করেন। যদিও পরে মারাঠা আক্রমণ থেমে যায়। পরেও অনেক শিব মন্দির তৈরি হয়। তবে গোটা বাংলা-জুড়েই অধিক মাত্রায় শিব মন্দির তৈরির পিছনে বর্গী আক্রমণের আতঙ্কই অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকেই।"