Malda News: ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ প্রশাসনকে দেখিয়েছে আমির শেখের (২২) পরিবার । তারপরেও কারচুপি করে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা আমির শেখকে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আর সেই আমিরকে নিজের দেশের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতেই তৎপর রাজ্য প্রশাসন।
ইতিমধ্যে জেলাশাসক নিতিল সিংহানিয়া নির্দেশে ওই পরিযায়ী শ্রমিক আমির শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে কথা বলেছেন কালিয়াচক ১ ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ হালদার। তিনি বলেন, 'প্রশাসনিক ভাবে ওই শ্রমিককে ফেরানোর জন্য চেষ্টা করা হবে। জেলা প্রশাসন এবং পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ যৌথভাবে বিষয়টি দেখছে বলেও পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে'।
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন তদন্ত করেছে। তদন্তে জানতে পেরেছি ওই পরিযায়ী শ্রমিক আমির শেখ কালিয়াচক থানার জালালপুরের বাসিন্দা। আমরা পরিবারকে সব রকম সহযোগিতা করছি এবং আমির শেখ কে যত দ্রুত হোক ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,প্রায় তিন মাস আগে জীবিকার সন্ধানে রাজস্থানে পাড়ি দেয় আমির। তার সঙ্গে ছিল ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ঠিকানার প্রমাণসহ ভারতের সমস্ত বৈধ পরিচয়পত্র। তা সত্ত্বেও, কোনও রকম পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই রাজস্থান পুলিশ তাকে "বাংলাদেশি নাগরিক" সন্দেহে গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ দুই মাস জেল হেফাজতে থাকার পর, চার দিন আগে তাকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বর্তমানে আমির বাংলাদেশে আটকে। কান্নাজড়ানো কণ্ঠে সেই ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আমিরকে বলতে শোনা গিয়েছে , "আমি ভারতীয়, আমাকে আমার ঘরে ফিরিয়ে নিন!" এই ঘটনার পর গোটা জালালপুর শোকে স্তব্ধ। পরিবারের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। মা কাঁদছেন, বাবা নির্বাক।
আমিরের এক কাকা আজমল শেখ বলেন, ভাইপোর ভারতের বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও নাগরিকত্ব প্রমাণ করা যদি সম্ভব না হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে। ইতিমধ্যে পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দারস্ত হয়েছে আমিরের পরিবার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আমিরের বাবা জেমস শেখ প্রথম পক্ষের স্ত্রী মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আমির প্রথম পক্ষের ছেলে। তারা দুই ভাই। গোটা পরিবারটি দিনমজুরের পেশার সঙ্গে যুক্ত।
আমিরের বাবা জেমস শেখ বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও দেখে ছেলেকে চিনতে পেরেছি। বাংলাদেশের কোথায় আছে সেটা জানা যায় নি। তিন মাস আগে ছেলে রাজস্থানে কাজ করতে গিয়েছিল। এরপর দুমাস আগে ওকে পুলিশ ধরে জেলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর চারদিন আগে রাজস্থান পুলিশ এবং বিএসএফ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। অথচ আমাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত পরিচয় রয়েছে। তারপরেও এরকম অত্যাচার করা হচ্ছে। এখন কি করে ছেলে ফিরে আসবে সেটাও আমাদের ভাবনার বাইরে। তাই প্রশাসনকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি।
শুক্রবার ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে কালিয়াচকের জালালপুর এলাকার ওই পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতে যান রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক আসিফ ফারুক। তিনি বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে কাজ করতে গেলে যদি এরকম অবস্থা হয়, তাহলে নিরাপত্তা কোথায়। অবিলম্বে প্রশাসনের এবিষয়ে হস্তক্ষেপের আবেদন জানানো হয়েছে।