দলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণের অভিযোগ ঢাকা-চাপা দিতে এবার আসরে খোদ তৃণমূল বিধায়ক। নির্যাতিতাকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার নিদান দেওয়ার অভিযোগ শাসকদলের বিধায়কের বিরুদ্ধে।
তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ তুলে মালদহের কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক মহিলা। মারাত্মক এই অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে দেয় পুলিশ। তবে এরই মধ্যে সালিশি করে ওই মহিলাকে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নেওয়ার নিদান দেন বৈষ্ণবনগরের তৃণমূল বিধায়ক চন্দনা সরকার, এমনই অভিযোগ। যদিও তাঁর এই সালিশির মধ্যে ভুল কিছু দেখছেন না তৃণমূল বিধায়ক নিজে। গ্রামে এই ধরনের সালিশি হয়েই তাকে বলে দাবি তাঁর। এই ঘটনাকেই তীব্র কটাক্ষ বিজেপির।
বৈষ্ণবনগরের এক মহিলা কালিয়াচক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, বীরনগর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পল্টু মণ্ডলের বিরুদ্ধে। পল্টুর বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস এবং ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কালিয়াচক থানা ৪১৭ এবং ৩৭৬ ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এরই মাঝে সালিশি সভা করে পুরো বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ বৈষ্ণব নগরের তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন- শুভেন্দুর গড়েই তৃণমূল ঠেকাতে রাম-বাম জোট! তুফানী ঝড়ে উড়ে গেল জোড়াফুল
এদিকে, নির্যাতিতার অভিযোগ তাঁর স্বামী ভিন রাজ্যে কাজ করেন। পঞ্চায়েত প্রধান পল্টু মন্ডল তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার সহবাস করেন। গত তিন মাস ধরে পল্টু মণ্ডল তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না রাখায় তিনি বিধায়কের কাছে যান। এরপরই বাড়িতে ডেকে টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয় বলে অভিযোগ নির্যাতিতার।
এই বিষয়ে বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক চন্দনা সরকার বলেন, ''উভয় পক্ষই আমাদের কাছে এসেছিল। গ্রামের মানুষের উপস্থিতিতে দেড় লক্ষ টাকা প্রধানকে দিতে বলেছি সব কিছু মিটিয়ে নেওয়ার জন্য। গ্রামে এই ধরনের বিচার হয়ে থাকে।'' এমনকী নির্যাতিতার চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বৈষ্ণবনগরের তৃণমূল বিধায়ক।
আরও পড়ুন- নিয়োগ দুর্নীতি মামলা: চরম অসন্তুষ্ট বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, SIT-এর তদন্তকারী বদলের হুঁশিয়ারি
এদিকে, এই ঘটনা সামনে আসতেই তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দক্ষিণ মালদহ সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, ''পশ্চিমবঙ্গের নারী মর্যাদা নিয়ে বড় বড় কথা বলেন তৃণমূল নেতারা। আরেকজন তৃণমূল বিধায়ক দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে সালিশি সভা করে মিটিয়ে দিচ্ছেন। এর থেকে লজ্জার কিছু আর হতে পারে না। এরপর তৃণমূল ঘোষণা করে দিক আইন আদালত কিছু থাকবে না এখানে তৃণমূলের শাসন চলবে।''
এই বিষয়ে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ''একবার কেস রেজিস্টার হলে কেউ এই ভাবে কেস তুলে নিতে পারে না। বিধায়ক নিজে এই ধরনের কাজ করতে পারেন না। কেউ যদি দোষী হয় সরকার ব্যবস্থা নেবে।'' যদিও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ধর্ষণের সেই প্রধান পল্টু মণ্ডলকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এই বিষয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ''এখন তৃণমুল কংগ্রেসের নেতারা চাকরি, শরীর কোনও কিছু ছাড়ছে না। সব এখন লুঠ করছে। বিধায়কের মতো পদে বসে থাকার পর যদি এই রকম কথা বলে তার যোগ্যতাই নেই ওই পদে থাকার। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত ওই বিধায়ককে সাসপেন্ড করে নতুন করে ভোট করা উচিত।''