সুতপা ছিল খুবই মেধাবী। পাড়াতে তাঁর নাম ডাকও ছিল বেশ। সকলের সঙ্গে মিষ্টি ভাবেই কথা বলত, মেলামেশা করত। হিংসা ছিল না মনে। কিন্তু ওঁকে যে এরকম নৃশংস ভাবে খুন হতে হবে, তা ভেবে শিউরে উঠছেন মালদা শহরের এয়ারভিউ কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দারা।
স্বাধীনচেতা মেয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর কে.এন. কলেজের ছাত্রী ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় বহরমপুরের সূর্য সেন রোড এলাকায় অসংখ্য মানুষের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে সুতপা চৌধুরির (২০) শরীর ছিন্নভিন্ন করে দেয় অভিযুক্ত প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরি। এই প্রেমিক-প্রেমিকার দুজনেরই বাড়ি মালদাতে। পড়াশোনা এবং কাজের সুবাদে দুইজনেই বহরমপুরে ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদা থেকে কয়েক বছর আগে এদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। আর মাঝে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে শুরু হয় দুজনের মধ্যে দূরত্ব। আর তারপরেই সোমবার সন্ধ্যায় এই রোমহর্ষক ঘটনা। প্রকাশ্য রাস্তায় প্রেমিকাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বারবার কোপাচ্ছে অভিযুক্ত প্রেমিক। হাতে আবার রয়েছে বন্দুক। যার ভয়ে এগিয়ে আসার সাহস পাননি আশেপাশের লোকজন। এমন ছবি পথচলতি কিছু মানুষ মোবাইলেবন্দি করেন, তারপর সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। পরে অভিযুক্ত যুবককে পালানোর সময় একটি বেসরকারি বাস থেকে গ্রেফতার করে বহরমপুর থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন বহরমপুরে কলেজ ছাত্রী খুন: ‘মাননীয়া কখন অনুসন্ধান দল পাঠাচ্ছেন?’, কটাক্ষ শুভেন্দুর
এদিকে পুরো ঘটনায় রীতিমতো স্তম্ভিত মালদা শহরের এয়ারভিউ কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দারা। এই এলাকাটি ইংরেজবাজার পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড তৃণমূল কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, "সুতপা চৌধুরি খুব ভাল মেয়ে। ওর বাবা স্বাধীন চৌধুরি, পেশায় হাইস্কুল শিক্ষক। মা বাবলি চৌধুরি গৃহবধূ। সুতপা বহরমপুর কে.এন. কলেজের পদার্থবিদ্যার তৃতীয় বর্ষে পাঠরতা ছিল। আমরা শুনেছিলাম মালদার পুখুরিয়া থানা এলাকার এক যুবক সুশান্ত চৌধুরির সঙ্গে সুতপার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এনিয়ে অনেক গোলমাল হয়েছিল। তারপরে এমন ঘটনা ঘটল। ভাবতেই অবাক লাগছে, সুতপাকে এভাবে খুন করতে পারে তাঁর প্রেমিক।"
আরও পড়ুন প্রতিশোধ নিতে প্রাক্তন প্রেমিকাকে কুপিয়ে খুন, বহরমপুর কাণ্ডে রাতেই গ্রেফতার যুবক
মৃত ছাত্রী সুতপা চৌধুরির প্রতিবেশীদের বক্তব্য, মালদার পুখুরিয়া থানা এলাকার যুবক সুশান্ত চৌধুরির পিসির বাড়ি ইংরেজবাজার শহরের সুতপার এয়ারভিউ কমপ্লেক্সের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়। পিসির বাড়ি যাতায়াতের সুবাদেই সুতপার সঙ্গে সুশান্তের পরিচয় হয়। তারপরই কয়েক বছর ধরে ওদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এক মাস ধরে সুতপা এবং সুশান্তর মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয়। এই ঘটনার পিছনে ত্রিকোণ প্রেমের বিষয়ে জড়িয়ে রয়েছে বলে অনুমান পাড়ার একাংশ বাসিন্দাদের।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই সুতপার খুনের ঘটনায় গোটা পাড়া শোকস্তব্ধ। মৃত ছাত্রীর দেহ শনাক্ত করার জন্য পরিবারের লোকেরা ইতিমধ্যে বহরমপুর পৌঁছে গিয়েছেন। ময়নাতদন্তের পর ওই ছাত্রীর দেহ আনার ব্যবস্থা করা হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। অভিযুক্ত প্রেমিক সুশান্ত চৌধুরি খুন করার পর সেখান থেকে পালিয়ে বেসরকারি বাসে করে বাইরে কোথাও গা ঢাকার দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বহরমপুরের একটি জায়গায় নাকা চেকিং করার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় অভিযুক্ত ওই প্রেমিক।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান , প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হওয়া। এবং নতুন কোনও এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হওয়াকে ঘিরে এই খুনের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।