বন্দে ভারতের সূচনায় মায়ের প্রয়াণের কারণে আসতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে, বেলা বাড়়তেই পৌঁছে গিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সহ একাধিক কেন্দ্রীয়মন্ত্রী। এসেছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, সর্বভারতীয় বিজেপির সহ সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসগ দিলীপ ঘোষরা। উপস্থিত অগ্নিমিত্রা পাল সহ একাধিক বিজেপি বিধায়ক। হাওড়া স্টেশন গেরুয়াময়। এর মধ্যেই বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ বন্দে ভারতের সূচনায় হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পৌছন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। আর তখনই উঠল 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান।
মুখ্যমন্ত্রী এসে হাওড়ার ২৩ নম্বর স্টেশনে দাঁড়ানো বন্দে ভারত ট্রেনটির সামনের দিকে দাঁড়ান। সেই সময় উল্টোদিকের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকরা 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিতে থাকেন। অপ্রীতকর ঘটনা ঘটতে পারে অনুমান করেই খোদ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যান। কথা বলেন তাঁরা। দর্শকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে স্লোগান থামানোর কথা জানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবে কর্ণপাত করেনি উত্তেজিত জনতা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তারপর দেখা যায় গোটা ঘটনা রাজ্যপালকে জানাচ্ছেন মমতা।
বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার বিজেপির উৎসাহী কর্মীদের হাত নেড়ে স্লোগান থানামোর আর্জি জানান। এমনকী মাইকেও সেই আর্জি জানানো হয়। বন্দে ভারত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ভারত সরকারের অনুষ্ঠান বলে জানান তিনি।
স্লোগান বিতর্কের জেরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উঠতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলমন্ত্রীর শত অনুরোধেও মঞ্চে উঠতে রাজি হননি মমতা। তবে তার মধ্যেই নাম ঘোষণা হওয়ায়, মঞ্চে গিয়ে বলে পড়েন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নিশিথ প্রামানিক, সুভাষ সরকার, জন বার্লারা।
মঞ্চের নীচেই চেয়ারে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যে এই ঘটনায় অসন্তুষ্ট, তা বুঝিয়ে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক সাড়ে ১১টায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আরও পড়ুন- মমতাকে জয়শ্রীরাম: ‘ওরা সৌজন্যের অযোগ্য’, দাবি ফিরহাদের, ‘রক্তে রাম’- পাল্টা বললেন লকেট
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই মাতৃ বিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই মাতৃ বিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া-তারাতলা মেট্রো প্রকল্পকে নিজের স্বপ্নের প্রকল্প বলে জানান। তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আজ দুঃখের দিন। ঈশ্বরের কাছে আপনাকে শক্তি যোগানোর আবেদন করছি। কিন্তু এরপরও আপনি এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেওয়ায় আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যেহেতু মায়ের শেষকৃত্য সেরে এসেছেন তাই আপনি আপনার বাকি সব কাজ বাতিল করে একটু বিশ্রাম নিন। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে আজ আমার অত্যন্ত খুশির দিন, এটা আমার কাছে স্বপ্নের প্রকল্প। আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম তখন হাওড়া-তারাতলা মেট্রো প্রকল্পের সূচনা করেছিলাম। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল এর উদ্বোধন করেছিলেন। এ জন্য তৎকালীন কলকাতার চেয়ারম্যান শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। কারণ তিনি এই প্রকল্পের জন্য জমি ঝোহার করে দিয়েছিলেন। ধন্যবাদ পুর ও নগরোন্নয়মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও। যেসব প্রকল্পের আজ উদ্বোধন হচ্ছে সেই পাঁচটার মধ্যে চারটেই আমার রেলমন্ত্রী থাকালীন হয়েছে। এই প্রকল্পের আজ আপনি সূচনা করায় আমি খুবই খুশি। মতুন ট্রেন বন্দে ভারত এখানে দিয়েছেন আপনি। সেটা খুব ভালো। এর জন্য আপনাকে, রেলমন্ত্রী ও পূর্ব রেলের জিএমকে ধন্যবাদ। মেট্রোর কাজ চলায় বেহালাবাসী গত ১০ বছরের বহু কষ্ট সহ্য করেছেন। কিন্তু তারপর যে মেট্রোর চলা শুরু হল তার জন্য বেহালাবাসীর মত আমিও খুশি। এটা ছিল সকলের স্বপ্নের প্রকল্প।'
হাওড়ার এদিনের 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান কয়েক বছর আগে ভিক্টোরিয়ায় নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানেও উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ভাষণ দিতে শুরু করতেই উঠেছিল 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান। ক্ষুব্ধ মমতা ভাষণ থামিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে গিয়েছিলেন। আর এবার হাওড়ায় রেলের অনুষ্ঠান মঞ্চেই উঠলেন না তিনি। বক্তব্য পেশ করলেন মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর ফিরে যাওয়ার সময়ও ওঠে 'জয় শ্রীরাম স্লোগান'।
<আরও পড়ুন- বাংলার রেল মানচিত্রে নয়া যুগের সূচনা, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা প্রধানমন্ত্রীর>