২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পাখি পড়ার মতো দলের নেতা-কর্মীদের পাঠ দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে গুরুতর সমস্যা তাই তিনি এদিনের সভায় সশরীরে হাজির ছিলেন না। ভার্চুয়ালি তাঁকে দেখা গেলেও বক্তব্য রাখেননি দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। এক ঘন্টা সাত মিনিটের বক্তব্যে বিস্তারিত ভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের বোঝালেন ফের তিনিই আন্দোলনের হাল ধরছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের রাশ যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই রয়েছে সেই বার্তাই ফের দেওয়া হল। পুরনোদের সঙ্গে লড়াইয়ের স্মৃতি কথাও শোনা গেল তাঁর গলায়।
আরও পড়ুন- পার্থ, কেষ্ট, বালু, মানিক, জেলে, ‘বদলা’র আগুনে জ্বলছেন মমতা! দিলেন ভীষণ হুঁশিয়ারি!
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ বসেন অভিষেক। তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রথম দিকে দলের প্রবীণ নেতৃত্বের একটা অংশ সরাসরি বিরোধিতা করছিল। তবে আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচন থেকে এই হাওয়া কিছুটা ঘুরতে থাকে। যদিও তারপরেও আদি-নব্য তৃণমূলের বিতর্ক থেকে গিয়েছে। সম্প্রতি দিল্লিতে রাজ্যের পাওনাগন্ডা আদায়ে দলের প্রবীন নেতৃত্বকে অভিষেককে সঙ্গ দিতে দেখা গিয়েছিল। একসময় তাঁর তীব্র সমালোচক শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছে অভিষেকের পাশে থাকতে। পরে রাজভবনের সামনে সভামঞ্চেই অভিষেকের নেতৃত্বে প্রবীণ সাংসদ ও নেতৃত্ব হাজির ছিলেন। সেই সময় পায়ের ব্যাথার জন্য বিশ্রামে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিগত কয়েকদিন আবার অভিষেককে প্রকাশ্যে সেভাবে দেখা যায়নি। এরই মধ্যে জেলা সভাপতি ও চেয়ারম্যানদের নাম ঘোষণা নিয়েও দলের অন্দরে চাপা বিতর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল।
আরও পড়ুন- ‘পাপিষ্ঠরা যেতেই বিশ্বকাপে ভারতের পরাজয়’, বিতর্ক উস্কে রাহুলের দাবিকেই মান্যতা মমতার!
এদিন শুরু থেকে দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল তুঙ্গে রাখতে একের পর এক টোটকা দিতে থাকেন তৃণমূল নেত্রী। কিভাবে বার বার এক কথা প্রচার করে বিজেপিকে জব্দ করা যায় সেকথাও বুঝিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তৃণমূল সুপ্রিমো রাজ্যের বুথে বুথে আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। আগামী ২ ও ৩ ডিসেম্বর রাজ্যের বুথে বুথে মিছিলের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে রাজ্যের প্রাপ্য নিয়ে দিল্লি অভিযানের ডাক দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। সেখানে থাকবেন সাংসদরাও। তিনি নিজে ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এদিন এটাও স্পষ্ট করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে কেষ্ট(অনুব্রত মন্ডল), মানিক ভট্টাচার্য থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের পিছনে রয়েছেন মমতা। তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনের কথাও মনে করিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত মন্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বা অন্য গ্রেফতার বিধায়কদের নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বরং পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের কয়েকদিনের মধ্যেই দল বহিষ্কার করেছে, মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তবু যে দলনেত্রী তাঁর পাশে রয়েছেন সেই বার্তাই দিলেন এদিন।
আরও পড়ুন- আর শুধু অভিষেক নয়, এবার দিল্লি অভিযানের নেতৃত্বে মমতা, চ্যালেঞ্জ মোদীকে!
রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতা যে দুর্দিনের সঙ্গীদের ভুলে যাননি সেই বার্তাই দিতে চাইলেন। তা নাহলে দল বা সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম কেন নিয়েছেন তিনি? বাকি গ্রেফতার হওয়া তাঁর সঙ্গীরা পুরনো পদেই বহাল রয়েছেন। পুরনো কর্মীরা যে দলের অন্যতম শক্তি তা বেমালুম বোঝেন পোড়খাওয়া নেত্রী। দলের রাশ যে এখনও তাঁরই হাতে তাও একপ্রকার ফের বুঝিয়ে দিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, লোকসভা নির্বাচন উৎরাতে তৃণমূলের ভরসা যে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
আরও পড়ুন- আরএসএসের কাছে ‘কাতর’ আর্জি মমতার, ‘ধরা পড়ে যাচ্ছেন’- পাল্টা চাঁচাছোলা সংঘ
আরও পড়ুন- তৃণমূলের লোকজনের জন্য যেন কোনও কারখানার গেট বন্ধ না হয়: মমতা