/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/27/puja-2025-09-27-14-58-35.jpg)
Durga Puja 2025: শতবর্ষ প্রাচীন এই পুজো ঘিরে এলাকায় নানা গল্প প্রচলিত আছে।
সাদা টিকটিকি যেন দেবীর দূত। সাদা টিকটিকি না এলে আজও পুজো খুঁত হয়েছে ভাবা হয়। কেন আসে এই টিকটিকি তা নিয়ে বহু দিন ধরে চর্চা চলছে। ভাগীরথী নদী পাড়ের মাটিয়ারীর রাম সীতা মন্দিরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির সাদা টিকটিকি, পুজো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা অব্যাহত। প্রায় তিনশো বছর ধরে হওয়া দুর্গা পুজো আজও আগের মতো রীতি নীতি মেনে করা হয়। রাম সীতা মন্দিরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো দেখতে দূর দুরান্ত মানুষ আসেন। প্রণাম করেন। মনস্কামনা পূর্ণ হলে পুজো দেন। পুজোর আগে মাস খানেক আগে থেকেই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি জুড়ে চলে ঝাড়পোঁছের কাজ। পঞ্চমীর আগেই প্রতিমাকে সাজানো সম্পূর্ণ হয়ে যায়। দেবীকে এখানে ডাকের সাজে সজ্জিত করার হয়।
বন্দ্যোপাধ্যায়দের পেল্লাই বাড়িটার উঁচু থাম, বড় দালান, নিস্তব্ধতার মাঝে কার্নিশে পায়রাদের বকবকানিতে কিছু সময়ে জন্য দর্শনার্থীদের মন অন্যরকম হয়ে যায়। জমিদার বাড়িত পুজোতে রথের দিন খড়ে মাটি দেওয়া হয়। শুরু হয়ে যায় পুজোর প্রস্তুতি। বাড়ির কর্তারা পুজো নিয়ে খুব ভাবে। পুজোর কোনরকম খুঁত তারা রাখতে চাইনা। মাটিয়ারীর এই জমিদার বাড়িতে রয়েছে স্বপ্ন দেওয়া রাম সীতা মন্দির। জমিদার বলরাম বন্দ্যোপাধ্যায় রাম সীতার স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়িতে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন।
এই বাড়িতে দূরদূরান্তর থেকে ভক্তরা থেকে সাধারণ মানুষও আসেন।ওই একই সময় স্থানীয় মানুষের কথা ভেবে বলরাম বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গা পুজোর সূচনা করেন। সেই পুজো আজও একই নিয়ম নীতি নিষ্ঠার সঙ্গে হচ্ছে।আগের মতোই পঞ্চমীর পর সন্ধ্যায় ষষ্ঠীর বোধন বসে। ষষ্ঠী থেকেই দেবীকে অন্ন ভোগ দেওয়া হয়।
থাকে ছ' রকমের ভাজা, চার রকমের তরকারি ,অন্ন, পরমান্ন, চাটনি, দই, মিষ্টি। সপ্তমীতে থাকে সাত ভাজা, পোলাও, খিচুড়ি, অন্ন, পরমান্ন, চাটনি, মিষ্টি, দই। অষ্টমীতে আট ভাজা, চার রকমের তরকারি পোলাও,খিচুড়ি, অন্ন, পরমান্ন, চাটনি, দই, মিষ্টি। নবমীর দিন চালকুমড়োর তরকারি, ন'ভাজা, পোলাও , খিচুড়ি, অন্ন, পরমান্ন, চাটনি, দই থাকে। দশমীতে দেবীকে খই, দই ভোগ দেওয়া হয়। প্রতিদিন রাতে দেবীকে মালপোয়া, আদোলসা, কলার বড়া, সুজি, সুজির খিচুড়ি দেওয়া হয়। বাড়িতে রাম সীতা মন্দির থাকায় বলি হয় না।
আরও পড়ুন-নবরাত্রিতে আরও চড়ল সোনার দর! আজ কতটা দামি হলুদ ধাতু?
তাই দেবীকে আখ উৎসর্গ করা পুজোটা হয় বৈষ্ণব মতে।এই বাড়িতে রামসীতার মূর্তি থাকায় সব পুত্রের সঙ্গে রাম শব্দটি যুক্ত রাখা হয়। আগে দুর্গা দেবীর সঙ্গে ঘোড়ামুখী সিংহ থাকত। কিন্ত পাল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার রূপের কিছু পার্থক্য এসেছে। এখন ঘোড়ামুখী হয় না, সাদা সিংহ হয়। বন্দ্যোপাধ্যায়দের বাড়ির পুজো কর্তারা পুজো নিয়ে খুব ভাবে। যখন এ নিয়ে খুব ভাবাভাবি করেন তখনই নদীতে হাজির হয় সাদা টিকটিকি। এই সাদা টিকটিকি কেন আসে তা নিয়ে বহু দিন ধরে চর্চা চলছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভাগীরথী নদীতে এ দৃশ্য দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড়ও করেন। ভাগীরথী নদীতে উমার বিসর্জনের সময় লাল ফোটা দেওয়া এই সাদা টিকটিকি আসার অর্থ পুজো ঠিক ভাবে হয়েছে। না এলেই পুজোয় খুঁত হয়েছে ভাবা হয়। সাদা এই টিকটিকিকে দেবীর দূত বলে মনে করে মাটিয়ারীর এই জমিদার পরিবারের লোকজন। প্রতিমা নিরঞ্জনের পর গঙ্গায় ভেসে থাকে কয়েকটা লালা ফোঁটা দেওয়া সাদা টিকটিকি।
আরও পড়ুন- প্রবল কম্পন! দুলে উঠল ভারত, চরম আতঙ্কে ঘরছাড়া মানুষজন, তুমুল চাঞ্চল্যে হুলস্থূল
এই টিকটিকিগুলোকে ধরে এনে বাড়ির পুজো মণ্ডপে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর আর ওই টিকটিকিগুলোকে দেখা যায় না। টিকটিকি না এলে মনে করা পুজোয় কোন খুঁত হয়েছে।ওরা যেন দেবীর দূত হয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে বাড়ির কর্তা রাম নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আমাদের রাম সীতা মন্দিরটা হয়েছে আমাদের পূর্বসুরীদের স্বপ্ন দেখা অনুযায়ী। ওই একই সময়ে দুর্গাপুজো শুরু হয়। বংশ পরম্পরা একই রীতি নীতি মেনে পুজো হয়ে আসছে।'