মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়া প্রস্তাবের পর বাংলার চিকিৎসক মহল প্রশ্ন তুলেছে সিভিক পুলিশের পর এবার কি সিভিক ডাক্তার? শুক্রবার তিন বছরের ডাক্তারি ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা যায় কিনা তা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে পিছনে গূঢ় উদ্দেশ্য দেখছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ। অবিলম্বে এই প্রস্তাবের ভাবনা থেকে দূরে সরে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাস মনে করেন, 'এটা একেবারেই অবৈজ্ঞানিক ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী পদক্ষেপ।' তিনি বলেন, কারণ, 'ডাক্তারি শিক্ষাক্রমের একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে যা সারা বিশ্বজুড়েই চলে। সেই মানদণ্ডে পাঁচ বছরের নীচে কোনও ডাক্তারি কোর্স হতে পারে না। এভাবে চটজলদি এই ধরনের কোর্স কোনওটাই ডাক্তারি কোর্সের সমকক্ষ হতে পারে না। এটা মানুষের ক্ষতি করবে।' এই ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরতি থাকার দাবি তাঁর।
মুখ্যমন্ত্রীর নয়া প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যজুড়েই বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ এই ডিপ্লোমা কোর্স কোনও ভাবে যাতে চালু না হয় সেই দাবি করেছেন। এই কোর্সের পিছনে অন্য উদ্দেশ্যও দেখছেন তাঁরা। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, 'এর পিছনে একটা উদ্দেশ্য আছে। প্রাইভেট হাসপাতাল দিয়ে কিছু ব্যবসা করাবে। এই ধরনের কোর্স নিয়ে ব্যবসা হবে। কেউ বোধহয় প্রস্তাব দিয়েছে। এর পিছনে গূঢ় উদ্দেশ্য আছে। এই সব দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হবে। তাহলে স্থায়ী নিয়োগ করতে হবে না। এমনিতেই তো বন্ড ডাক্তার দিয়ে চালাচ্ছে। কোনও নিয়োগ নেই। এর পরে গ্রামে পোস্টিং দিতে চুক্তিভিত্তিক হবে।'
আরও পড়ুন- ডাক্তারিতেও ডিপ্লোমা কোর্স, আমলাদের ভাবতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
১০০০ জন মানুষ প্রতি একজন ডাক্তার থাকার কথা। এই অনুপাত অনেকটাই কাছাকাছি আছে বলে মনে করেন ডা. সজল বিশ্বাস, ডা. মানস গুমটারা। ডা. সজল বিশ্বাসের দাবি, 'ডাক্তার কম রয়েছে এটা সর্বৈব মিথ্যা কথা। তথ্য থাকলেও মিথ্যা বলছেন। এই মুহূর্তে যা চিকিৎসক ও জনগণের অনুপাত খুব কাছাকাছি। ১২৩৫ -এ ১ জন। প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে, ২ বছরের মধ্যে সারপ্লাস হয়ে যাবে।' ডা. মানস গুমটা বলেন, 'মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। দেশে এই মুহূর্তে ৫৪২টি মেডিক্যাল কলেজে ৮২ হাজার আসন রয়েছে। এই রাজ্যে আছে ৪৮০০। এতো সিভিক পুলিশের মতো সিভিক ডাক্তার তৈরির প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।'
আরও পড়ুন- বিদ্যুৎ গতিতে আছড়ে পড়বে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’! আজ থেকেই আবহাওয়ায় ‘তুলকালাম’ বদল!
চিকিৎসক সংগঠনগুলির দাবি, সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ হচ্ছে না। নিয়োগ হলে ডাক্তার পেত। অনুমোদিত পোস্ট খালি হয়ে রয়েছে। ডাক্তারের অভাব আছে তা নয়। ডিপ্লোমা কোর্সের উদ্দেশ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়েছে সেই দায় এড়াতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। চটকদার কথা বলছেন, মানুষ এখন এটার পিছনে ছুটবে। সরকারি হাসপাতাল যদি এই ধরনের কোয়াক দ্বারা পরিচালিত হয় তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। মানুষ কর্পোরেট হাসপাতালে যেতে বাধ্য হবে। সজলবাবুর মতে, 'ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের এই পরিকল্পনা আছে। অতএব অনুমতি পেতেই পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নয়। মুখ্যমন্ত্রী এই ডাক্তার দিয়ে নিজেদের পরিবারের চিকিৎসা করান। তাহলে মানুষ চিকিৎসা করবে।'
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভেবেই পাচ্ছেন না ডিপ্লোমা কোর্স কি করে মাথায় এল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সৌমেন দাস বলেন, 'এটা হলে ডাক্তারিতে কোনও উপকার হবে না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা লাটে উঠবে। ওনার সব সময় শর্টকাটে করার ইচ্ছা থাকে। কেউ নেই কি ওনাকে শুভ বুদ্ধি দিতে পারে? এটা খুব খারাপ হচ্ছে।'