এক নিরাপত্তা আধিকারিকের মানবিকতায় সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে নিজের ঘরে ফিরল ভিন রাজ্যের মানসিক অবসাদগ্রস্ত এক যুবক। গায়ে ছেঁড়া জামা প্যান্ট, মাথায় উস্কোখুস্কো চুল, নিজের নাম এবং স্কুলের নাম ছাড়া কিছুই জানা ছিল না বছর কুড়ির ওই যুবকের। সাঁতরাগাছি স্টেশনে তাঁর উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাঁতরাগাছির জিআরপির। কিন্তু কোথায় বাড়ি? কী উদ্দেশ্য এই যুবকের? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া গেল উত্তরপ্রদেশেই। সাঁতরাগাছির জিআরপি (সাধারণ)-এর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক উত্তম কুমার বন্দোপাধ্যায়ের নিরলস চেষ্টার পর অবশেষে ঘরে ফিরল উত্তরপ্রদেশের হিমাংশু।
ঠিক কী হয়েছিল?
সাঁতরাগাছি জিআরপি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সাঁতরাগাছি স্টেশনে এক মানসিক অবসাদগ্রস্ত যুবককে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন জিআরপির এক কনস্টেবল। পরে তাঁকে সাঁতরাগাছির জিআরপি (সাধারণ)-এর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক উত্তম কুমার বন্দোপাধ্যায়ের কাছে নিয়ে আসা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সেখানেই জানা যায়, আপাতদৃষ্টিতে বছর কুড়ির যুবকের নাম হিমাংশু, এবং সে সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনো করত। কিন্তু তাঁর পরিবার এবং বাড়ির কোনও খবর জানা যায়নি তাঁর কাছ থেকে। প্রাথমিকভাবে হিমাংশুকে ‘চাইল্ডলাইন’ এবং ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার’ সংস্থা দুটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হাতে তুলে দিতে চাইলেও বয়সসীমা বেশি থাকায় দুই সংস্থার কেউই তাঁকে নিতে চায়নি, এমনটাই খবর।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে নাকাল সাঁতরাগাছি, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
এদিকে, বালকটিকে কোনওভাবেই ছেড়ে দিতে নারাজ ছিলেন জিআরপির আধিকারিক। উত্তমবাবু বলেন, “সিকিউরিটি কমিশনার বিবেকানন্দ নারায়ণের অনুমতি নিয়ে নিজের উদ্যোগেই বালকটিকে বাড়ি ফেরানোর কাজ শুরু করি।" এমনকি নিজেদের হেফাজতে রেখেই নতুন জামাকাপড় পরিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয় জিআরপির পক্ষ থেকে। তারপর শুরু হয় হিমাংশুর পরিবারের খোঁজখবরের কাজ। হিমাংশুর কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন অসংলগ্ন তথ্য থেকে খোঁজ মেলে উত্তরপ্রদেশের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলের। পরবর্তীতে সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে হিমাংশুর পরিবারের খবর পাওয়া যায় বলেই জানান উত্তমবাবু।
আরও পড়ুন: লাইব্রেরিতে ভিড় টানতে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত হাওড়ায়
পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাঁতরাগাছি জিআরপির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক জানতে পারেন, ৩১ জানুয়ারি নিজের উত্তরপ্রদেশের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন এই যুবক। এরপর আর তাঁর কোনও খোঁজ পায়নি পরিবার। ছোটবেলাতেই মাতৃহীন হিমাংশুর খবর না পেয়ে পুত্রশোকে মাস তিনেক আগেই মারা যান হিমাংশুর বাবাও। ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে আসেন হিমাংশুর কাকা এবং খুড়তুতো ভাই। সেখানেই নিয়ম মেনে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় হিমাংশুকে। পরিবারের পক্ষ থেকে জিআরপি আধিকারিক উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে জানানো হয়, জিআরপি-র মানবিকতার ফলেই ঘরের ছেলেকে ফিরে পেলেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই রেলের সাহায্য নিয়ে হিমাংশুকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশে রওনা দিয়েছে পরিবারটি।
হাওড়া জেলার সব খবর পড়ুন এখানে