সাত দিন হরিয়ানা পুলিশের হাতে বাংলাদেশি অভিযোগে আটক থাকার পর অবশেষে ছাড়া পেয়ে মালদার গ্রামের বাড়িতে ফিরলেন সাতজন পরিযায়ী শ্রমিক। মঙ্গলবার সকালে ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজেদের বাড়িতে ফিরতেই তাদের জড়িয়ে ধরেন আত্মীয় পরিজনেরা। চাচোল মহকুমার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার রাঙ্গাইপুর এবং ঠাকুরটোলা এলাকার ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করতে যান মালদা জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট এলাকা তৃণমূল দলের নির্বাচিত সদস্য মর্জিনা খাতুন।
তিনিও হরিয়ানা থেকে ফেরত ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছ থেকে বিজেপি শাসিতই রাজ্যের পুলিশের ভয়াবহতার কথা শুনে হতবাক হয়ে যান। হরিয়ানার গুরুগ্রাম পুলিশের হাতে গত সাত দিন ধরে মালদার ওই সাতজন পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কি রকম আচরণ করেছে সে কথাও শুনেন স্থানীয় তৃণমূলের ওই দলনেত্রী। পাশাপাশি তিনি প্রতিবাদ করেন হরিয়ানা পুলিশের এমন আচরণ নিয়ে।
এদিন হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে ফেরত পরিযায়ী শ্রমিক ওসমান আলি বলেন , "গত এক সপ্তাহ ধরে আমাদের সেখানকার একটি ধরমশালায় আটকে রাখা হয়েছিল। সারাদিন ভারি কাজকর্ম করতে হতো। কখনও বাসন মাজা, আবার কখনও জামা কাপড় পরিষ্কার করার কাজ প্রত্যেকে করতে হতো। আমাদের সাতজনের পাশাপাশি কলকাতা এবং আসামের মোট ৩৪ জনকেই বাংলাদেশী অভিযোগে আটক করেছিল হরিয়ানা পুলিশ। মাঝেমধ্যে একজন পুলিশি পোশাকে অনেকগুলো স্টার লাগানো অফিসার এসে গুলি করে মারার ধমক পর্যন্ত দিত। আমরা ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত বৈধ নথি দেখিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা দেখতে চাই নি। আসাম দিয়ে আমাদের বাংলাদেশে পাঠানোর হুমকিও পর্যন্ত দেওয়া হয়।"
আর এক পরিযায়ী শ্রমিক আজমাল হোসেন বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জন্য আমরা হয়তো সুস্থভাবে ফিরে আসতে পেরেছি। আমাদের কাছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড , বাড়ির পুরনো দলিল সবই ছিল। কিন্তু হরিয়ানা পুলিশ দেখতে চাই নি। শুধু আমাদের বাংলাদেশী তকমা দিয়েই সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। কোন কথা বলতে গেলে গুলি করে মারারও ধমক দেওয়া হয়েছে। দিনে একবেলা মোটা চালের ভাত আর ডাল দেওয়া হতো। সাত দিন যেভাবে কেটেছে তা বলার অপেক্ষা নেই। এই ভয়াবহতা এখন ঘুমের মধ্যেও স্বপ্নে আসছে। তাই আর ওই রাজ্যে কাজ করতে যাব না।"
এদিকে হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল দলের বিধায়ক তথা রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরে রাষ্ট্রমন্ত্রী তাজমুল হোসেন বলেন , মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে আমার এলাকার এই পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক করে নেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছিলাম। এরপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখেছেন। রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে হরিয়ানা পুলিশ সাতজন পরিযায়ী শ্রমিককে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। "
তিনি আরও বলেন, "ওদের কাছে ভারতের সমস্ত নাগরিকত্বের পরিচয় রয়েছে। তারপরও কি করে বাংলাদেশী তকমা দেওয়া হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারগুলোকে বলেছি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে কাজ রয়েছে । সেসব ক্ষেত্রে আবেদন করলে সমস্ত সুবিধা মিলবে। কাউকে আর ভিন রাজ্যে যেতে হবে না।"