যখন দিল্লিতে মোদি-মমতা বৈঠক নিয়ে রাজনীতির ময়দান সরগরম ঠিক তখন হুগলির চুঁচুড়ায় তৃণমূল বিধায়ক লাঠি-পেটা করছেন বিজেপির জেলা সহ সভাপতিকে। এই ভিডিও টুইট করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি ও তৃণমূল মোদী-মমতা বৈঠককে নিছকই প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতার বৈঠক বা সৌজন্যতা বলে দাবি করছে। এই বৈঠকই এখন এরাজ্যে বাম ও কংগ্রেসের রাজনীতির মূলধন। তাঁরা রে-রে করে মায়দানে নেমে পড়েছে। এর আগেও নানা পরিস্থিতিতে মোদী-মমতা বৈঠক হয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এই ইস্যুতে বাম-কংগ্রেস আদৌ কতটা রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পারবে? সেক্ষেত্রে বাংলায় বিজেপির সাংগঠনিক হাল কী হবে সেটা বিবেচনার বিষয়।
লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে বা সারা দেশে বিজেপি বিরোধী সার্বিক জোট গঠনের ধাক্কা জানান দিয়ে দিল রাষ্ট্রপতি ও উপ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এর পিছনে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকার কথাও উঠছে। তবে গেরুয়া বিরোধী জোটে তৃণমূল কী অবস্থান নেবে গত কয়েক দিনের দৌঁড়ঝাপে তা-ও অনেকটাই স্পষ্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এরাজ্যে অদূর ভবিষ্যতে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামেদের একমঞ্চে আর আসা তো কোনও মতেই সম্ভব নয়, মনে করছে অভিজ্ঞমহল।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজের দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে প্রার্থী করেও বাংলায় প্রচারে আসতে না দেওয়া, জগদীপ ধনকড়ের মতো প্রার্থী হওয়া সত্বেও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটদানে বিরত থাকা, তারপরই দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ইডির হাতে গ্রেফতারি, এবার দিল্লিতে মোদী-মমতা বৈঠক। 'মোদী-মমতা সেটিং'-এর একেবারে ষোলোকলা পূর্ণ বলে মনে করছে বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব।
একটা সময়ে এরাজ্যে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরে জোর চর্চা ছিল বিজেপিকে ঠেকাতে এখানে জোট বেঁধে লড়াই করতে হবে। বামেদের একাংশও মনে করতো প্রয়োজনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গেরুয়া শক্তিকে প্রতিরোধ করতে হবে। তবে এখন আর বামেদের কোনও অংশেই এমন দাবির সমর্থনে কোনও আলোচনাই শোনা যায় না। বরং 'সেটিং' তত্ত্ব নিয়ে বড় সওয়াল করে যাচ্ছেন বাম নেতৃত্ব। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইস্যুতে পথেও নামছে বাম-কংগ্রেস। কিন্তু যখন এরাজ্যে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে ঘরে-বাইরে প্রবল চাপে তৃণমূল কংগ্রেস তখন দিল্লির ৪৫ মিনিটের 'সৌজন্য বৈঠক' তৃণমূল-বিজেপির সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রমাদ গুনছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ।
আরও পড়ুন- ‘সেটিং’ তত্ত্বে অস্বস্তি? দিদি-মোদী কথার পরের দিনই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি শুভেন্দুর
মোদী-মমতা বৈঠকের পরই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এরাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন শুধু নয়, ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, সাম্প্রতিক একের পর এক ঘটনার পর মোদী-মমতা বৈঠক, উদ্বুদ্ধ রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে গেরুয়া শিবিরও নানা সিদ্ধান্ত নেবে।
রাজ্যে পঞ্চায়েত, বিধানসভা ও লোকসভার নিরিখে তৃণমূল শাসক, প্রধান বিরোধী বিজেপি। তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বামেদের আন্দোলন বৃদ্ধির রাশ যাতে হাতে না থাকে সেই কৌশলও চলতে থাকবে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের বিশেষ অভিজ্ঞতাও রয়েছে। বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও তারপর তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুধাবন করলেই তা স্পষ্ট হবে বলে মনে করে অভিজ্ঞমহল।