Advertisment

জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড: মমতার কাছে পরিবার, তদন্তে অখুশি বন্ধুর মা

মায়ারানী পাল বলেন, “এর মধ্যে গুরুতর রহস্য আছে। উৎপল একা এই খুন করেনি। তাছাড়া সামান্য কয়েক হাজার টকার জন্য ও কেন আমার ছেলে এবং তার পরিবারকে শেষ করে দিতে যাবে?”

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
jiaganj triple murder

শুক্রবার নবান্নে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে দেখা করেন জিয়াগঞ্জের নিহত বন্ধু প্রকাশ পালের আত্মীয়-স্বজনরা। ছবি- পার্থ পাল

মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে সপরিবার শিক্ষক খুনে পুলিশ উৎপল বেহেরাকে গ্রেফতার করার পরেও ঘটনার প্রকৃত তদন্তের দাবি নিয়ে শুক্রবার পাল পরিবার যখন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করছেন, ঠিক তখন জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানের বাসিন্দা নিহত বন্ধুপ্রকাশ পালের বাড়িতে এসে হাজির হন ছয়-সদস্যের বিশেষ হেটেরোজিনিয়াস ফরেন্সিক দল (বায়োলজি, ফিজিক্স ও সিনিয়র ফরেন্সিক সায়েন্টিস্টদের নিয়ে গঠিত)। দীর্ঘক্ষণ তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

Advertisment

এই বিশেষজ্ঞ দলটি বন্ধুপ্রকাশের বাড়ির ভিতরের আনাচে কানাচে সর্বত্র খুঁটিনাটি পরীক্ষার পর নমুনা সংগ্রহ করেন। উৎসুক কৌতূহলীদের এদিন ঘেঁষতেই দেওয়া হয়নি ওই চত্বরে। ওই ফরেন্সিক দলের দায়িত্বে থাকা ডঃ চিত্রাক্ষ ঘোষ জানান, "এই মুহূর্তে বিশেষ কিছু বলা সম্ভব নয়, আমরা ইন্ডোর সিন অফ অকারেন্স থেকে রক্তের নমুনা, ডিজিটাল এভিডেন্স-সহ আরও কিছু জিনিস সংগ্রহ করলাম। এগুলোর পুনরায় ফরেন্সিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে"।

আরও পড়ুন: ‘দ্বিতীয় স্ত্রী বিদেশি হলেই নোবেল মিলছে’, অভিজিৎ প্রসঙ্গে বেলাগাম রাহুল সিনহা

অন্যদিকে, মৃতের মা মায়ারানী পালের মন্তব্যে নতুন করে ওই হত্যাকান্ড নিয়ে রহস্যের দানা বাঁধল। মায়াদেবী ফের দাবি করেছেন , “উৎপল বেহেরা একা নয়। এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে রয়েছে বড় চক্রান্ত। পুরনো শত্রুতার জেরেই খুন করা হয়েছে আমার ছেলে ও তার পরিবারকে। আমি পুলিশকে বলেছি এই খুনের গভীরে তদন্ত হওয়া দরকার।"

ইতিমধ্যে বিজয়া দশমীর দুপুরে জিয়াগঞ্জ থানার লেবুবাগান এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি পাল ও তাঁদের শিশু পুত্র অঙ্গন পালের খুনের ঘটনার সাত দিনের মাথায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে উৎপল বেহেরা ওরফে মনোজকে।

Jiyaganj জিয়াগঞ্জে নিহতের বাড়িতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। ছবি: পরাগ মজুমদার

আরও পড়ুন: ‘আমার আর মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে যা ঘটেছে, তা নিয়ে কখনই মুখ খুলিনি’, ফের বিস্ফোরক রাজ্যপাল

এদিকে তার সঙ্গে পুলিশ হেফাজতে কথা বলে ফের এক দফা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাগরদিঘি থানায় ডেকে পাঠানো হয় মৃত শিক্ষকের মা মায়ারানী পাল ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের। জেলা পুলিশের ডাক পেয়ে সাগরদিঘি থানায় বৃহস্পতিবার রাতে যান নিহত বিউটি পালের বাবা সুখেনচন্দ্র মণ্ডল ও মা চন্দনা মণ্ডল। ওই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে স্বয়ং জেলা পুলিশ সুপার শ্রী মুকেশ কুমারও ছিলেন। উৎপল বেহেরাই যে বন্ধুপ্রকাশ ও তাঁর পরিবারকে খুন করেছে, সেই জবানবন্দি শোনানো হয় তাঁদের। দেখানো হয় জিয়াগঞ্জ সদর ঘাট থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজও। যেখানে উৎপলের জিয়াগঞ্জ শহরে প্রবেশ ও খুন করে ফিরে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এর পরেও কিন্তু মৃতের মায়ের মন থেকে সন্দেহ দূর করতে পারেনি পুলিশ।

আরও পড়ুন- জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ড: বন্ধুর ‘অভিশপ্ত বাড়ির’ দিকে তাকাচ্ছেন না আতঙ্কিত প্রতিবেশীরা

বরং দীর্ঘ পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পর থানা থেকে বেরিয়ে মায়ারানী পাল বলেন, “এর মধ্যে গুরুতর রহস্য আছে। উৎপল একা এই খুন করেনি। তাছাড়া সামান্য কয়েক হাজার টকার জন্য ও কেন আমার ছেলে এবং তার পরিবারকে শেষ করে দিতে যাবে?” বন্ধুপ্রকাশের মাসতুতো ভাই রাজেশ ঘোষ বলেন, “উৎপল অত্যন্ত সৎ এবং সাদামাঠা ছেলে। ও গরীব হতে পারে কিন্তু কারও এক পয়সা নষ্ট করেছে বলে দুর্নাম নেই। সেই ছেলে এমন কাজ করতে পারে বলে মানতেই পারছি না।” এই কাজ মনোজ করতে পারে বলে মানতে পারছেন না সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা রমেশ ঘোষ, সরোজ মিত্ররাও। তাঁদের দাবি, “পাল পরিবারের সঙ্গে তো ওদের ওঠাবসা ছিল। কোনও কাজ পড়লেই তো বন্ধুপ্রকাশের কাছে ছুটে যেত উৎপল । সেই উৎপল এত বড় ক্ষতি করতে পারে আমরা ভাবতে পারছি না, বিশ্বাসও হচ্ছে না।"

আরও পড়ুন: ‘নোবেলজয়ী অভিষেকবাবু’, মমতার মন্তব্যে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি

বন্ধুপ্রকাশের সাহাপুরের বাড়ির অনতিদূরে রেল লাইন ঘেঁষা বাড়িতে কার্যত ঘরবন্দি হয়ে আছে উৎপলের পরিবার। ছেলে খুনের দায়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর থেকে খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন উৎপলের বাবা মাধব বেহেরা ও তার মা খ্যান্ত বেহেরা। তাঁদের দাবি, “আমরা গরীব হতে পারি, কিন্তু কোনোদিন কারও ক্ষতি করিনি। আমাদের ছেলে এই কাজ করতে পারে বলে বিশ্বাস করি না। ওর সঙ্গে কথা বলতে পারলে তবেই আসল ঘটনা জানতে পারব।’’

পাঁচ মিনিটে এক ব্যক্তির হাতে তিন তিনটি খুন নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এইসব প্রশ্নের জবাবে জেলা পুলিশ সুপার শ্রী মুকেশ বলেন, “সমস্ত লিঙ্ক খতিয়ে দেখে এবং ধৃত যুবককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত চলছে। তবে মৃতের পরিবার পুলিশের তদন্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।"

শুক্রবার শেষ পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, এদিন পুলিশ ধৃত উৎপলের জামাইবাবু কানাইগঞ্জের বাসিন্দা পুলক সরকার ও দিদি শ্রাবণী সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই সময় পুলিশের পাশাপাশি তিন-সদস্যের একটি সিআইডি দলও উপস্থিত ছিল।

Mamata Banerjee Murshidabad Murder
Advertisment