Junior Doctor's Protest-Nabanna: টানা তৃতীয় দিনেও রাজ্যের সঙ্গে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের আলোচনা শেষমেষ হল না। নবান্ন সভাঘরের ভিতর কী হচ্ছে তা রাজ্যবাসীকে জানতে দিতে হবে এমনই দাবি রেখেছিলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। লাইভ স্ট্রিমিং না হলে কোন ভাবেই আলোচনা নয়। রাজ্য সরকারকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে। এদিকে সরকারের তরফে কোন ভাবেই লাইভ সম্প্রচার হবে না বলে জানানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টানা ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলেছে টানটান স্নায়ুযুদ্ধ। আদৌ কী হবে আজকের বৈঠক? নাকি নবান্নের সভাঘরের সামনে থেকে ফেরত আসবেন জুনিয়র ডাক্তাররা? এই প্রশ্নে নজর ছিল গোটা বাংলার। অবশেষে টানা তৃতীয় দিনেও মিলল না কোন সমাধান সূত্র।
এ বিষয়ে মুখ্যসচিব বলেন, "আজকে ইমেল করেছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিপ্তে ওরা এখানে এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রী ৫টা থেকে অপেক্ষা করছেন। ওরা ৩২ জন এসেছে। আমরা ওদের আসতে অনুমতি দিয়েছি। ওদের একটা ইস্যু আছে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের। আমরা ভিডিও রেকর্ডিংয়ের কথা বলেছিলাম। ওরা লাইভ স্ট্রিমিংয়ে অনড়। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাইছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করছেন। এখনও ওরা মিটিং হলে আসে নি। ওদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। ওদের যা দাবি আছে, সুপ্রিম কোর্টের যা নির্দেশ আছে সবকিছুই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আমরা অনুরোধ করব ওরা মিটিংয়ে আসুক"।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে আন্দলনরত চিকিৎসকরা। বাতিল হয় আজকের বৈঠক। এরপর এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "পৌনে ৫টা থেকে প্রায় সাতটা বাজে! আমরা ২ ঘন্টা ১০ মিনিট অপেক্ষা করেছি, আমার ভেবেছিলাম তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আমরা প্রথমে চিঠি দিয়েছিলাম, মুখ্যসচিব, ডিজি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ হোম সেক্রেটারি আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা বলেছিলাম খোলা মনে আসুন, কোনও একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে নয়। আলোচনার মাধ্যমে পাঁচটা নতুন কথা আসতে পারে। কথা বললে সমাধান হয়। এর আগেও গতকাল ও গত পরশু অপেক্ষা করেছিলাম তাঁরা আসেনি।'
মমতা আরও বলেন, "আমাদের কাজ হচ্ছে তাঁদের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া। আজকেও মুখ্যসচিব তাদের চিঠি দিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। আগের বার ঘটনা ছিল ভিন্ন। সুপ্রিম কোর্ট বা সিবিআইয়ের কাছে ছিল না। আমরা আজকের বৈঠকে রেকর্ডিংয়ের সুযোগ রেখেছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট যেটা পারে আমরা তা পারি না। এই নিয়ে কোন আলোচনা আইনত সঠিক নয়। যেহেতু তদন্ত বিচারাধীন, আগামী ১৭ তারিখ শুনানি। তাই লাইভ সম্প্রচারে আমাদের কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। আমরা ভিতরে যখন সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে, সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তখন রেকর্ডিং করার ব্যবস্থা রেখেছিলাম। আমরা ওনাদের ৪.৪৫ মিনিটে আসতে বলেছিলাম। তারা অনেকটা দেরি করে এসেছেন। তাতেও আমরা কিছু মনে করিনি। বাংলার মানুষের একটা আবেগ আছে। আমরা সবাই চাই নির্যাতিতা বিচার পাক। এটা আমাদের হাতে নেই। সিবিআই তদন্ত করছে বলে আমি কোনও মতামত জানাব না। আজ আমাদের আলোচনা ছিল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গঠনমূলক উন্নতি, তাদের সেফটি ও সিকিউরিটি। টেলিকাস্টের বিষয়েও আমরা ওপেন মাইন্ড, কিন্তু এই মামলা বিচারাধীন। আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। আমরা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলাম। আমরা খোলা মন নিয়ে আলোচনা চেয়েছিলাম। যদি মিটিংটা সফল হত আমরা যৌথভাবে প্রেস মিট করতে পারতাম। আমরা ভেবেছিলাম খোলামেলা আলোচনায় রাগারাগি না করে ডাক্তার ও রোগীদের স্বার্থে মানবিক ভাবে আলোচনা করবে।"
এদিন, সাংবাদিক সম্মেলনের পরই নবান্ন ছেড়ে বেরিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তার কিছুক্ষণ পর নবান্নের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা বলেন, 'আমরা খুব বিনীত ভাবে জানাতে চাই, আমরা চেয়ারের জন্য কোনও আলোচনা করতে আসিনি। আপনি ভুল ভেবেছেন। আমরা এসেছিলাম ন্যায়বিচারের দাবিতে। যাতে আলোচনা হয়, সেই দাবিতে এসেছিলাম।' তাঁরা আরও বলেন, 'চেয়ারের জন্য নয়, চেয়ারের উপর ভরসা রয়েছে বলেই আলোচনার টেবিলে বসতে চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে আমরা হতাশ। আমরা এখনও আশা রাখছি। এই চেয়ারের প্রতি আমাদের ভরসা এখনও আছে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি এখনও।' সাংবাদিক বৈঠকের পর পুনরায় স্বাস্থ্য ভবনের ধরনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা।
কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী দেখুন
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ছোটদের ক্ষমা করা আমাদের সৌজন্য। সেটা আমরা মেনে চলছি। ১৫ জন বলার পরও ওরা ৩৪ জন এসেছেন তাও মেনে নিয়েছি। কেন ঢুকলেন না আমরা জানি না। ওদের সাহায্য করার জন্য আমি চন্দ্রিমা ছাড়া কাউকে ডাকিনি। যাতে তাঁরা খোলামেলা আলোচনা করতে পারে। আমি ৩ বার চেষ্টা করলাম। ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে ২৭ জন মারা গিয়েছেন, সাত লক্ষ পরিষেবা পাননি, দেড় হাজার সিরিয়াস রোগী দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন। ১১ বছরে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ঢালাও উন্নতি করেছি। কর্মবিরতির জেরে যাদের মৃত্যু তাদের জন্য আমরা সহানুভুতি জানাবো না? আমার হৃদয় কাঁদছে সবার জন্য। বিনা চিকিৎসায় কত রোগী মারা গেছেন তার পরিসংখ্যান নেওয়ার কাজ করছে রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্ট সময় দিয়ে দিয়েছে। তারপরও কোন অ্যাকশন নিইনি। অনেক সিনিয়ার ডাক্তার কষ্ট করেও কাজ করছেন। তাদের অভিনন্দন। ডাক্তারদের কাছে আবেদন কাজে যোগ দিন, রোগীদের সেবা দিন। এরপরও বসতে চাইলেও আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। ধৈর্য্য ধরাটাও একটা পরীক্ষা। আমাকে অনেক অপমান অসম্মান করা হয়েছে। অনেকে জানতেন না এর মধ্যে রঙ আছে, ওরা বিচার নয় ওরা চায় চেয়ার, আমি পদত্যাগ করতেও রাজি। আমি চাই তিলোত্তমা বিচার পাক, সাধারণ মানুষ বিচার পাক"।
নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন | Press conference at Nabannaনবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন | Press conference at Nabanna
Posted by Mamata Banerjee on Thursday, September 12, 2024
১৫ নয় ৩০ জনকেই অনুমতি রাজ্যের
নবান্নে ১৫ জন নয়, ৩০ জন প্রতিনিধিই গেলেন জুনিয়র ডাক্তারদের। সেকথা ই-মেল মারফত মুখ্যসচিবকে জানিয়েই বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ বাসে করে তাঁরা নবান্নের উদ্দেশে রওনা দেন। নবান্ন চত্বরে বাস থেকে নেমেই বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। নবান্নের গেটে প্রত্যেকের নাম-পরিচয় লিখে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে নবান্নে সূত্রে খবর, বৈঠকের লাইভ সম্প্রচারে না জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন - হল না শেষ রক্ষা, প্রয়াত সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ-স্বরূপ মোট ৫ দফা দাবিতে সল্টলেক স্বাস্থ্য ভবনের একটানা অবস্থান-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার আবারও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে ডাকল রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ইমেল পাঠিয়ে বৈঠকে বসার আবেদন জানিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় নবান্নে বৈঠকে ডাকা হয়েছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের।
আরও পড়ুন - নির্যাতিতার শরীরে উল্লিখিত 'হিউম্যান বাইট' কার? রহস্যভেদে বাম্পার পদক্ষেপ CBI-র
আজ বিকেল পাঁচটায় নবান্নে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে ডাকলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বিকেল ৪:৪৫-এর মধ্যে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দলকে নবান্নে পৌঁছে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। মুখ্যসচিব আন্দোলনকারীদের চিঠি লিখে জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন। তবে বৈঠকের লাইভ সম্প্রচার করা সম্ভব নয় বলে চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যসচিব। যদিও স্বচ্ছতার স্বার্থে বৈঠকের ভিডিও রেকর্ডিং করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাঁচ দফা দাবিতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের একটানা সেই আন্দোলনে বহু সাধারণ মানুষ গিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। বহু মানুষ নিজেদের উদ্যোগে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের খাবার, জল সরবরাহ করছেন। জুনিয়র ডাক্তাররা স্বাস্থ্য ভবনের একাধিক কর্তার পদত্যাগ দাবি-সহ আরও বেশ কয়েকটি দাবি রেখেছেন। সেই দাবি আদায়েই একটানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। মুখ্যসচিব এদিন তাঁর চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন- Manik Bhattacharya: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, জামিন পেলেন মানিক ভট্টাচার্য
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে ইমেল পাঠিয়ে মুখ্যসচিব লিখেছেন, "রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবার জন্য আপনাদের সঙ্গে রাজ্য সরকার বৈঠকে বসতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও মাথায় রাখা দরকার। আমরা আলোচনায় বসতে চাই।"
আরও পড়ুন- বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ধেয়ে এল পাথর, চপ্পল! তুমুল সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ধুন্ধুমার