Nadia News: 'রাজবাড়ি না থাকলে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে থাকত নদীয়া', স্বাধীনতার সেদিনের স্মৃতি আজও শিহরণ জাগায়

Nadia News: সেসময় মহারানী জোতির্ম্যয়ী দেবী, কংগ্রেস নেতা তারকদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, স্মরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নদীয়াকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার জোরালো দাবি তুলেছিলেন।

Nadia News: সেসময় মহারানী জোতির্ম্যয়ী দেবী, কংগ্রেস নেতা তারকদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, স্মরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নদীয়াকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার জোরালো দাবি তুলেছিলেন।

author-image
Mousumi Das Patra
New Update
cats

৩ দিন পর স্বাধীনতা পাওয়া আজও নদীয়া বাসীর কাছে বিস্ময়ের

Nadia News: ৩ দিন পর স্বাধীনতা পাওয়া আজও নদীয়া বাসীর কাছে বিস্ময়ের। চারিদিকে যখন স্বাধীনতার উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল তখনই সকলে থমকে গিয়েছিল। শুধুমাত্র অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর একটি ঘোষণাতে নদীয়ার মানুষ দিক বেদিক হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই ১৫ আগস্ট  ভারতের স্বাধীনতা লাভে নদীয়া বাসীকে বুকে চাপা কান্না নিয়ে বিমর্ষে কাটাতে হয়েছে। চারপাশে দেশ হারানোর যন্ত্রণা প্রকট। 

Advertisment

আরও পড়ুন- 'ভোট চুরি' শব্দেই সংবিধানের অপমান! জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা, বিরোধীদের দাবির মাঝেই গর্জে উঠল কমিশন

বাতাসে প্রবল ভাবে হাজারো গুজব। ভারতের গভর্নর জেনারেল স্যর র‍্যাডক্লিফের ভুল ম্যাপে নদীয়ার অবস্থান তখন পূর্ব পাকিস্তানে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সর্বত্র স্বাধীন হলেও র‍্যাডক্লিফের ভুল ম্যাপে নদীয়া চলে যায় পূর্ব পাকিস্তানে।  ব্যাপক ভাবে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। 

Advertisment

প্রায় তিন দিন পর ১৭ অগস্ট বিকেলে ঘোষণা করা হয়, কৃষ্ণনগর ও রানাঘাটের ভারতে অন্তর্ভুক্তির কথা। সেই সমস্ত স্থানে ১৮ অগস্ট মহা সমারোহে উদযাপিত হয় স্বাধীনতা দিবস। আজও সেই স্মৃতি বয়ে চলে প্রায় ৩ দিন পর স্বাধীনতা পাওয়া ওই সমস্ত এলাকার মানুষজনরা। 

সেসময় মহারানী জোতির্ম্যয়ী দেবী, কংগ্রেস নেতা তারকদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, স্মরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নদীয়াকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার জোরালো দাবি তুলেছিলেন। জানা যায়, এই সময় মহারাজা সৌরীশচন্দ্র নিজের মন্ত্রীদের সঙ্গে জরুরি সভা করেন। 

publive-image

ফোর্ট উইলিয়াম কমান্ডার ইন চিফ ফ্রান্সিস বুচারের সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য যোগাযোগ করেন। রাতারাতি সেনাও মোতায়েন হয়। একইসঙ্গে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যটেনকে বোঝানো হয় নদীয়া পাকিস্তানে যেতে পারে না। 

গোটা বিষয়টি ভাইসরয় বুঝতে পারেন। সেই মতো বাউন্ডারি কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে জরুরি নির্দেশ যায়। রাজার সঙ্গে কথা বলে  প্রয়োজনীয় সংশোধন করার বিষয় নিয়ে। এই গোটা বিষয়টি করতে আড়াই দিন সময় গড়িয়ে যায়।

 শেষে মানচিত্রে বদল ঘটানো হয়। তাদের সংগ্রাম, তৎপরতায়  মানচিত্রের বদল ঘটে যায়। পশ্চাদপদ হয় র‍্যাডক্লিফ লাইন। ১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্ট দুপুরে সমগ্র নদীয়া অন্তর্ভুক্ত হয় ভারতের। এ সম্পর্কীয় যাবতীয়  জটিলতা, এদেশের কলকাতা থেকে দিল্লি বিভিন্ন প্রান্তের প্রশাসনিক স্তরে দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে  ১৭ অগস্ট বিকেলে নতুন বিজ্ঞপ্তি  জারি হয়।

রেডিওতে মধ্যরাতে নদীয়ার ভারত ভুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়। পরের দিন সকালে রাজবাড়িতে স্বাধীন ভারতের পতাকা তোলা হয়। সে সময় সারা রাজবাড়ি আলোয় ভরে উঠেছিল। বেজেছিল বাজনা। ১৮ আগস্ট  নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর লাইব্রেরি, রাজবাড়ি সহ একাধিক স্থানে স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তোলন করা হয়। তারপরই মর্যাদার সঙ্গে এই দিনটি নদীয়ায় উদযাপিত হয়। শিবনিবাস, রানাঘাট, কৃষ্ণনগরে নেতাজী ব্রিগেড বা শান্তিপুরের মতো অনেক জায়গাতে দিনটি যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়। 

আরও পড়ুন-বাংলায় কবে থেকে চালু SIR? কী জবাব কমিশনের?

এ নিয়ে রাজবাড়ির বর্তমান গৃহকর্ত্রী অমৃতা রায় বলেন, 'রাজবাড়ি না থাকলে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে থাকতো নদীয়া। অন্য জাতি, দেশ, ভাষা, ধর্মের পরিচয়ে থাকত নদীয়া। এছাড়া নদীয়ার সংস্কৃতিটা হারিয়ে যেত। এজন্য রাজবাড়ির উপরও অত্যাচার হয়েছে'।  

এই দিনটা নেতাজী ব্রিগেডের সদস্যরা মিছিল করে কৃষ্ণনগর পোস্ট অফিস মোড়ে  আসে৷ পতাকাও তোলা হয়। এ প্রসঙ্গে নেতাজী ব্রিগেডের কর্তা অসিত সাহা বলেন, 'আমরা সমস্ত কিছু স্মরণ করে ১৮ আগস্ট দিনটি গুরুত্ব সহকারে পালন করি।' কৃষ্ণগঞ্জের শিবনিবাসেও এই দিনটিতে  প্রভাত ফেরি নিয়ে বের হয়। চূর্ণি নদীতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মহিলাদের বাইচ প্রতিযোগিতা সহ একাধিক অনুষ্ঠান হয়।

Independence Day Nadia