কর্মজীবন শুরু করেন এসডিপিও ডায়মন্ড হারবার হিসেবে। শোনা যায়, সুদর্শন চেহারা এবং নায়কোচিত হাবভাবের দৌলতে স্থানীয়রা সেই সময় বলিউডের জনপ্রিয় নায়কের নামে তাঁর নাম দিয়েছিলেন 'আমির খান'। এই নামকরণের পেছনে ছিল বেশ কিছুটা স্নেহ, সম্ভবত কিছুটা হালকা চালের হিরো ওয়ারশিপও। কিন্তু ১৯৯১ ব্যাচের সেই তরুণ আইপিএস অফিসার অনুজ শর্মাই আজ কলকাতার নগরপাল। এখন আর কেউ বোধহয় 'আমির খান' বলেন না তাঁকে।
প্রায় দু'দশক ধরে জল গড়িয়েছে অনেকটাই। কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশে একের পর এক গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন অনুজ। যেমন ২০০২ সালে মেদিনীপুর জেলা পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর তিনি হন পূর্ব মেদিনীপুরের প্রথম সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (এসপি)। এর পর কলকাতা পুলিশের ডিসি (ডেপুটি কমিশনার) সাউথ, ডিসি ইএসডি (ইস্টার্ন সাবার্বান ডিভিশন), ডিসি সদর। সেখান থেকে ডিআইজি (ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল) বর্ধমান রেঞ্জ, আইজি (ইন্সপেক্টর জেনারেল) আইন শৃঙ্খলা, এবং এডিজি (অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল) আইন শৃঙ্খলা।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন রাজীব কুমার
কর্মজীবনে অত্যন্ত সুদক্ষ অফিসার হিসেবে পরিচিত অনুজ আদতে উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনৌয়ের বাসিন্দা। সেখানকার প্রখ্যাত স্কুল লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজে স্কুলজীবন কাটিয়ে ১৯৮৫ সালে লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯০ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পাশ করেন অনুুজ। এরপরই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া এবং সাফল্য।
অনুজ শর্মা সম্প্রতি খবরের শিরোনামে আসেন কিঞ্চিৎ অপ্রীতিকর কারণেই। এ মাসের গোড়ার দিকে রাজ্য সরকার বনাম সিবিআই দ্বন্দ্বের জেরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্যের মুখ্য সচিবকে একটি নির্দেশ দেয়। সে নির্দেশে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নায় ‘হাজির হওয়ার জন্য’, অর্থাৎ 'রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ' করার জন্য, পাঁচজন আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ওই অফিসারদের কেন্দ্র যে পদক দিয়েছে, তাও কেড়ে নেওয়া হবে বলেও কথা ওঠে। সেই তালিকায় ছিল অনুজ শর্মার নামও। বিষয়টি আপাতত ধামাচাপা পড়ে আছে, যেহেতু সরকারিভাবে কোনো নির্দেশ জারি করা হয়েছে বলে খবর নেই।
আরও পড়ুন: রাজীব কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের অন্দরে ঘুরছে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ! কী লেখা তাতে?
আজ, অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যভার গ্রহণ করলেন অনুজ। সামনেই রয়েছে সাধারণ নির্বাচনের ঝড়। অনুষঙ্গ হিসেবে রয়েছে রাজ্য-কেন্দ্র দ্বৈরথ। তাঁর পূর্বসূরি রাজীব কুমার আজ তাঁকে কাজ বুঝিয়ে দিয়েই দিল্লির উড়ান ধরেছেন বলে খবর। আগামীকাল সারদা চিট ফান্ড মামলায় সিবিআই তদন্তের সাহায্যার্থে সুপ্রিম কোর্টে সশরীরে হাজিরা দিতে হতে পারে তাঁকে। কাজেই কলকাতা পুলিশের অন্দরে কিঞ্চিৎ টালমাটাল সময়েই নতুন পদে বহাল হলেন অনুজ শর্মা। অভিজ্ঞ এই অফিসারের অভিজ্ঞতার সবটাই কাজে লাগানোর সময় আসন্ন।