২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী ২০২৩-এ পঞ্চায়েত নির্বাচন। ২০২৪-এ লোকসভার মহারণ। রাজ্যে তৃণমূলের জেলা স্তরের কমিটি গঠনের কাজ চলছে। শীঘ্রই তা ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। এই নয়া কমিটি গঠন নিয়ে ইতিমধ্যে ব্লকে-ব্লকে বিস্তর চর্চা চলছে। এবারের কমিটি গঠনে রাজনৈতিক মহল তাকিয়ে রয়েছে একসময় দলের ঘোষিত 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি কার্যকর হয় কিনা সেদিকেও।
নতুন কমিটি ঘোষণা করে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাঁপাতে চলেছে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু নয়া কমিটি ঘোষণা হওয়ার আগে ব্লকগুলিতে মূল দায়িত্বে কে তা বোঝা একপ্রকার দায় হয়ে গিয়েছে দলীয় কর্মীদের কাছে। দলের একাংশ এই পরিস্থিতির অবসানের জন্য চাইছেন দ্রুত কমিটি ঘোষণা করুক শীর্ষ নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, স্ক্রিনিংয়ের কাজ হয়ে খসড়া কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তা এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়।
এরই মধ্যে সামনেই ২১ জুলাই ধর্মতলায় শহিদ দিবস। ওই দিন দলের নেতা-কর্মীদের পথ চলার দিক ঘোষণা করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু'বছর পর আনুষ্ঠানিক ভাবে শহিদ দিবসে জয়েনিং-এর চমক থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নয়া কমিটি ২১ জুলাইয়ের আগে না পরে ঘোষণা হবে তা নিয়ে মশগুল অব্যাহত দলের অন্দর মহলে।
এর আগে একাধিকবার 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি নিয়ে জোরালো সওয়াল করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজে আগামী ১০ বছর কোনও মন্ত্রিত্ব নেবেন না বলেও ঘোষণা করেছিলেন। এই সময়কালটা অভিষেক সাংগঠনিক কাজে নিজেকে নিমজ্জিত রাখবেন। জানা গিয়েছে, তখন সিদ্ধান্ত ছিল একমাত্র দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
আরও পড়ুন- ‘দুর্নীতিতে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িত শুভেন্দুও’, গ্রেফতারের দাবিতে পথে নামছে তৃণমূল
এক সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, দল আমার ক্ষেত্রে ছাড় রেখেছে কেন ওরাই জানে। এই ব্যবস্থা চলার কিছু দিন পরেই এই সংখ্যাটা বাড়তে থাকে। কলকাতা পুরসভা নির্বাচন নিয়েই মূলত দলের অভ্যন্তরে বিতর্কের সূত্রপাত। মেয়র ঘোষণার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন না অভিষেক। চুলোয় ওঠে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সংগঠন ঢেলে সাজাতে এই নীতির কোনও বিকল্প নেই। দলের একাংশ মন্ত্রিত্ব, পুরসভা, জেলাপরিষদ অর্থাৎ প্রশাসন সামলাবে, অপর অংশ সরাসরি সংগঠন মজবুত করার দায়িত্বে থাকবে। এতে একদিকে যেমন কারও একার ওপর বেশি চাপ পড়বে না পাশাপাশি শ'য়ে-শ'য়ে নয়া নেতৃত্ব উঠে আসবে। দলের তরুণ প্রজন্ম আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবে। তবে এই নীতি কার্যকরী হলে অনেকের সুখ-সাম্রাজ্যে বজ্রাঘাত পড়বে বলে মনে করে অভিজ্ঞ মহল।
পর পর তিনবার রাজ্যে ক্ষমতায় বসার পর বিরোধীরা এখনও ঘর গুছিয়ে উঠতে পারেনি। আসানসোলের মতো বিপুল ভোটে জয়ী লোকসভার আসন ৩ লক্ষের বেশি ভোটে তৃণমূলের কাছে হারতে হয়েছে বিজেপিকে। ব্যারাকপুর লোকসভার বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং-ও ফের তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। বিজেপির ঘর ভাঙছে তো ভাঙছেই। এই পরিস্থিতিতে নতুন কমিটিতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি নেয় কীনা সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।