Panagarh Accident Case: চন্দননগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাড়ুয়া রায়পাড়ার পুরোনো দোতলা বাড়িতে আজ শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সরু একচিলতে গলির ধারে বাড়িটির বাইরে এলাকার মানুষজন এবং মিডিয়ার ভিড়। বাড়ির ভিতরে দুই বৃদ্ধা একরাশ চিন্তা নিয়ে বসে আছেন। বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যার মর্মান্তিক খবর এখনও তাঁদের কানে পৌঁছায়নি। গতকাল রাতে নিজস্ব ট্রুপ নিয়ে প্রোগ্রাম করতে বেরিয়েছিলেন ওই বাড়ির মেয়ে বছর ২৭ এর সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়। গন্তব্য ছিল গয়া। গতকাল রাতেই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে গাড়িতে চন্দননগর থেকে গয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন ওই তরুণী-সহ মোট পাঁচ জন। বুদবুদ থানা এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে তাদের গাড়ি তেল নেওয়ার জন্য দাঁড়ায়। অভিযোগ, সেই সময় কয়েক জন যুবক একটি গাড়িতে চেপে এসে কটূক্তি করতে থাকেন। তার পর তাঁরা গাড়ি নিয়ে আগের গাড়িটির পিছু ধাওয়া করেন।
প্রথম গাড়িটির চালক দ্রুত বেগে গাড়ি ছোটাতে থাকেন। পানাগড়় বাজারের রাইসমিল রোডের মুখে মত্ত যুবকদের গাড়ি তরুণীদের গাড়িটি আটকানোর চেষ্টা করে এবং সেটিতে ধাক্কা মারে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রথমে রাস্তার ধারের একটি দোকানে ধাক্কা মারে। তার পর একটি শৌচাগার এবং লোহার যন্ত্রাংশে ধাক্কা মেরে উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চন্দননগরের বাসিন্দা ওই তরুণীর।
খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ এসে দুটি গাড়িকে আটক করে। যদিও দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। এদিন চন্দননগর নাড়ুয়াতে সুতন্দ্রার বাড়িতে গেলে দেখা যায় থমথমে বাড়ি। গত বছর ক্যানসারে মারা যান সুতন্দ্রার বাবা সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি রেলের ঠিকাদার ছিলেন। সুতন্দ্রা একমাত্র সন্তান। মা তনুশ্রী খবর পেয়েই ভোরে পাড়ার লোকজনদের নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে গেছেন। বিশাল বাড়িতে রয়ে গেছেন বাড়ির অন্য দুই বৃদ্ধা। সুতন্দ্রার দিদিমা ও ঠাকুমা।
প্রতিবেশী অনাদি শঙ্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, খুবই মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে ছিল সুতন্দ্রা। নার্সারীতে সেন্ট অ্যান্টনি , মাধ্যমিক কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষা মন্দির এবং চন্দননগর ডুপ্লেক্স কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে নৃত্যকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ছোট থেকেই নাচ শিখতেন। পরবর্তীকালে তিনি শেখাতেও শুরু করেছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় শো এর জন্য ডাকও আসতো।
শ্যামল কুমার নামে ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নিজেকে গায়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, সুতন্দ্রা সাধারণত দূরে কোথাও শো হলে ট্রেনেই যেত। সম্ভবত ট্রেনের টিকিট না মেলায় গাড়ি ভাড়া করে যাচ্ছিল। একেই বলে নিয়তি। তবে এই ঘটনার পেছনে যে সমস্ত দুষ্কৃতীর হাত রয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে চরম শাস্তি দিতে হবে বলে তিনি দাবি করেন।