/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/25/iMoOMTnIRwBoGJUvtIGD.jpg)
Bablu Yadav Panagarh Case: কে এই বাবলু যাদব? পানাগড় কাণ্ডে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে ছিল এই প্রভাবশালী যুবক
Panagarh Eveteasing Case: রবিবার গভীর রাত্রে পানাগড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে চন্দননগরের বাসিন্দা তরুণী সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের (২৭)। এই মৃত্যুর ঘটনায় পানাগড়ের কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে কটুক্তির অভিযোগ ওঠে। যে সাদা রংয়ের গাড়িতে করে ওই যুবতীকে কটুক্তি করার অভিযোগ ওঠে সেই গাড়ির মধ্যে ছিলেন গাড়ির মালিক বাবলু যাদব। রবিবার দুর্ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছাড়া বাবলু ও গাড়িতে থাকা বাকিরা। কাঁকসা থানার পুলিশ বাবলু যাদব-সহ বাকিদের সন্ধান চালাচ্ছে। মঙ্গলবার বাবলু যাদবের বাড়িতে যান এসিপি সুমন কুমার জয়সওয়াল। ঘটনার দুদিন কেটে গেলেও এখনও বাবলু যাদবকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার বাসিন্দাদের। বাবলু যাদবের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কেন এই বাবলু যাদব কে এখনও পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারছে না? সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সকলে।
কে এই বাবলু যাদব?
এলাকা সূত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রায় দশ বছর আগে এসে পানাগড় বাজারের কাওয়ারি মার্কেটে এক ব্যক্তির দোকানে কাজ শুরু করেন বাবলু। সেখান থেকে পরে লোহার যন্ত্রাংশ অল্প পরিমাণে কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেন। মূলত ছোট এবং বড় গাড়ির স্প্রিং পাতির ব্যবসা করতেন তিনি। পরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক বাংলাদেশের বাসিন্দা ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। পানাগড়ে কাওয়ারি মার্কেটে মূলত পুরনো গাড়ির স্পেয়ার পার্টস কেনাবেচার বিরাট এলাকা জুড়ে ব্যবসা চলে। অবৈধ গাড়ির কেনাবেচা হয়। মূলত এখানে ভিন রাজ্য থেকে বড় এবং ছোট গাড়ি কিনে এনে সেগুলিকে কাটাই করে তার সমস্ত যন্ত্রাংশ আলাদা করার পর লোহার কেজি দরে বিক্রি করা হয়। সেখান থেকেই গাড়ির স্প্রিং পাতি কিনে সেগুলি অবৈধভাবে বাংলাদেশ পাচার করত বাংলাদেশি এক ব্যবসায়ীর হাত ধরে।
এই ব্যবসা শুরু করার পর মাত্র ২ বছরের মধ্যে রীতিমত ফুলেফেঁপে ওঠেন এই বাবলু যাদব। কাওয়ারি মার্কেটের মধ্যে একজন বড় ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর পরিচিতি বাড়ে। স্প্রিং পাতির ব্যবসার সঙ্গে চোরাই গাড়ি ও পুরনো গাড়ি কিনে সেগুলি বেআইনিভাবে কাটাই করে শুরু হয় আরও একটি ব্যবসা। পুলিশের নজর এড়িয়ে রমরমিয়ে চলত তাঁর ব্যবসা। গত এক বছর আগে ভিনরাজ্য থেকে একটি লরি কিনে এনে পানাগড় বাইপাসের ধারে একটি ফাঁকা জায়গায় লরিটি কাটাই করার সময় বুদবুদ থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ধরে। বাবলু যাদবের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। বুদবুদ থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় বাবলু যাদব ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা। বাজেয়াপ্ত হয় ভিন রাজ্যের একটি গাড়ির বিভিন্ন পার্টস ও লরির যন্ত্রাংশ।
আরও পড়ুন 'লক্ষ্মীরাই তো চলে যাচ্ছে, লক্ষীর ভাণ্ডার নেবে কে?', প্রশ্ন পানাগড়ে মৃত তরুণীর শোকাহত মায়ের
আদালতে পেশ করার পর তাঁরা পরে জামিনে মুক্তি পান। রবিবার গভীর রাত্রে সেই বাবলু যাদব গাড়ির মধ্যে ছিলেন বলে দাবি করেছেন কাঁকসার এসিপি সুমন কুমার জয়সওয়াল। যদিও এসিপি জানিয়েছেন তাঁরা বাবলু যাদবকে শীঘ্রই গ্রেফতার করবে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার কাঁকসা থানায় ঘটনার তদন্তে নামে সিআইডি দলের আধিকারিকরা। এদিন কাঁকসা থানায় আটক হওয়ার দুর্ঘটনাগ্রস্থ দুটি গাড়ি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি গাড়ি দুটির ছবি ও নমুনা সংগ্রহ করেন সিআইডি আধিকারিকরা। পাশাপাশি পানাগড়ের রাইস মিল মোড়ে দুর্ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখেন তাঁরা। এদিন কাঁকসা থানার পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গোটা এলাকা ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেয়। ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয় দুই সিভিক ভলেন্টিয়ারকে। যদিও এদিন পুলিশের পক্ষ থেকে সিআইডির হাতে অফিশিয়ালি কোনও তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন পানাগড়ে গাড়ি উল্টে মৃত তরুণী, ইভটিজিং তত্ত্ব উড়িয়ে চমকে দেওয়া দাবি পুলিশের!
অন্যদিকে মঙ্গলবার বিকেলে কাঁকসা থানায় আসেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি ইস্ট অভিষেক গুপ্তা। এদিন তিনি দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ি দুটি খতিয়ে দেখেন। এদিন সাংবাদিকরা ডিসিপিকে ঘটনার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে গেলে। সাংবাদিকদের উপর ক্ষুব্ধ হন ডিসিপি অভিষেক গুপ্তা।
এদিন তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাঁদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র মিডিয়া সন্ত্রাসের কারণে। মিডিয়ায় খবর দেখে সকলে গা ঢাকা দিয়েছে। তাঁর দাবি, সংবাদ মাধ্যমে সোমবার সকাল থেকে যে খবর দেখানো হয়েছে তা সত্য নয়। সোমবার আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সিপি দাবি করেন, কোনওরকম ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটেনি। রেষারেষির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। সেই কথা মঙ্গলবার বিকেলে কাঁকসা থানায় এসে ফের দাবি করেন ডিসিপি।পুলিশ জানিয়েছে ১০৫ ও ৩০৪ ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার গভীর রাতে হুগলির চন্দননগর থেকে সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায় একটি ছোট গাড়িতে করে চালক-সহ পিছনে তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে বিহারের গয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের একটি নাচের অনুষ্ঠান ছিল। বুদবুদের আগে জাতীয় সড়কের ধারে একটি পেট্রোল পাম্পে তাঁরা গাড়িতে তেল ভরার পর, জাতীয় সড়ক ধরে আসানসোলের দিকে যাওয়ার সময় একটি সাদা রঙের ছোট গাড়ি থেকে ৫ জন যুবক তাঁদের কটুক্তি করে বলে অভিযোগ ওঠে। দুটি গাড়ির মধ্যে কয়েকবার সংঘর্ষ হয়। এরপরই সাদা গাড়িতে থাকা পানাগড়ের বাসিন্দাদের গাড়ি ধাওয়া করে সুতন্দ্রার চার চাকাটি। পানাগড় বাজারের রাইস মিল রোডে সাদা গাড়িটি ঢোকার মুখে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেখানে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মারা যান সুতন্দ্রা।