২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বড় পরীক্ষা ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিপুল আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তারপরই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, শুধু সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন বলে নয় আরও একাধিক কারণে এই পঞ্চায়েত নির্বাচন খুব বড় ধরনের অগ্নিপরীক্ষা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। যার জবাব মিলবে ১১ জুলাই।
যুবা থেকে যুব'র সভাপতি, তারপর তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাংগঠনিক দায়িত্বে আসাতেই তৃণমূলের প্রবীণদের একটা অংশ পালা করে প্রকাশ্যে আদি-নব্য চিৎকার জুড়তে থাকে। কেউ কেউ আবার তাঁদের নেত্রী যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তাঁকেই শুধু মানবেন বলে ঘোষণা করতে শুরু করেন। কেউ কেউ তো সরাসরি অভিষেককে মেনে নেওয়ার শর্ত আরোপ করেছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রবীণ সাংসদ, বিধায়করা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে সংশয়ে পড়ে যান। সেই সংশয়ের বহিঃপ্রকাশ এখনও মাঝে মধ্যেই তাঁদের মন্তব্য়ে ধরা দেয়। এরই মধ্যে ধাপে ধাপে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে শুরু করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও সামনে থেকে কখনও আড়ালে থেকে অভিষেকর পথ প্রশস্ত করতে থাকেন।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলে দলে তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেয়। বিরুদ্ধ পরিবেশে 'খেলা হবে' স্লোগান তুলে ক্ষমতায় ফেরেন মমতা। এবারে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নবজোয়ার যাত্রা শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস। নেতৃত্বে অভিষেক। অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের যে কোনও প্রচারে রাজ্যের শীর্ষ, মাঝারি, ছোট নেতাদের দেখা যেত। এবার অভিষেকের নবজোয়ার যাত্রায় জেলার নেতাদের দেখা গেলেও রাজ্য় নেতাদের অস্তিত্ব যেন বিলুপ হয়ে যায়। দু'একজায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাজির ছিলেন।
আরও পড়ুন- Live Updates: বিদ্যুতের গতিতে খুন বাংলায়! রক্তস্নাত ভোট! এখনও পর্যন্ত বলি ৩১
২০২১-এ দলের পদ পাওয়ার পর থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে ভোটগণনা পর্যন্ত কোনও অশান্তি হবে না বলে ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে এখনও পর্যন্ত ভোটহিংসায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন বহু। ভাঙড়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন যেন যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেদিনই তিন তিনটে প্রাণের বলিদান হয়। তা সত্বেও এবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী প্রার্থীর সংখ্যা ২০১৮ নির্বাচনের থেকে অনেকটাই কম।
জনসংযোগ যাত্রায় মানুষের প্রার্থী খুঁজেছেন অভিষেক। তাঁরাই নাকি তৃণমূলের প্রতীক পেয়েছেন। দলীয় প্রতীক বন্টনের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্য়াপক সংখ্যক নির্দল হয়ে রয়ে গিয়েছেন। মনোরঞ্জন ব্যাপারী থেকে আব্দুল করিম চৌধুরী, গিয়াসুদ্দিন মোল্লা থেকে হুমায়ুন কবির দলীয় প্রার্থী নিয়ে সরব হয়েছিলেন। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন মুখ প্রার্থী হয়েছেন। অসংখ্য প্রধান, উপপ্রধান টিকিট পাননি। এরা অনেকে আদি তৃণমূল বলেই নিজেদের দাবি করছেন। এই নতুন জয়ও তৃণমূলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে বাগডোগরা আসার সময় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উড়ান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। তারপর কলকাতায় আসা, শেষমেষ বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসাপাতালে হাটুতে অস্ত্রোপচার হয় তৃণমূল সুপ্রিমোর। মোদ্দা কথা নির্বাচনী প্রচারে আর অংশ নিতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা রাজ্যে প্রচারের একমাত্র প্রধান মুখ ছিলেন অভিষেক। কলকাতা প্রেস ক্লাবে দলের পক্ষে মিট দ্য প্রেস করেন অভিষেক। সেক্ষেত্রে এবারের পঞ্চায়েত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বড় অগ্নিপরীক্ষা।