অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দলের সমস্ত কমিটি ভেঙে পুনরায় নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতাপন্থীদের সঙ্গে ঠাণ্ডা লড়াই চোখে পড়ে রাজনৈতিক মহলের। দলীয় নেতৃত্বের একাংশ বলতে শুরু করে তাঁদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ মানতে নারাজ, তাঁদের পদ আঁকড়ে ধরে থাকাতে স্পষ্ট বলে মনে করছে অভিজ্ঞমহল।
দলীয় নীতির ফাঁক রেখে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভানেত্রীর সঙ্গে তাঁরা দল ও প্রশাসনের একাধিক পদ এখনও অলঙ্কৃত করছেন। প্রথম পর্যায়ে অভিষেকের বক্তব্যের সরাসরি প্রতিবাদ করে মন্তব্য করেছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্যের বিরোধিতা করতে গিয়ে মেয়র ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একার দায় নয়, মন্ত্রিভার প্রত্যেক সদস্যের দায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, আদি তৃণমূল নেতৃত্ব এক সুরে কথা বলার চেষ্টা করেছেন।
অনুব্রত ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলের দ্বন্দ্ব তুলে ধরতে গিয়ে বিশেষ ইক্যুয়েশনের কথা বলেছেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অধীরের কথায়, মমতার টিমকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, অভিষেকের টিম ছাড় পাচ্ছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এটা শুধু যে দু'জনের অনুগামীদের কথা বলেছেন, এমন নয়।
রাজনৈতিক মহলের মতে, অধীর চৌধুরী বৃহত্তর ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁর বক্তব্যে। একটা সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারে ঘুরে ফিরে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতো। সত্তরের দশকে কংগ্রেস রাজনীতিতে চরম উত্থান হয়েছিল ইন্দিরার ছোটপুত্র সঞ্জয় গান্ধীর। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা ছিল ক্ষমতার দখল নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে তখন তীব্র সংঘাত শুরু হয়েছিল।
তৃণমূল কংগ্রেসের একমাত্র জেলা সভাপতি, তিনি মন্ত্রী বিধায়ক, সাংসদ নিদেনপক্ষে জেলাপরিষদের সভাধিপতি বা কোনও পরসভার চেয়ারম্যানও নন। তবুও তিনি বীরভূমের অবিসংবাদী তৃণমূল নেতা। দলীয় সূত্রের খবর, শুধু তাই নয়, দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় চলত অনুব্রত মণ্ডলের কথা। অনেক নেতা- মন্ত্রীরা তাঁর বিষয়ে কথা না বলাই শ্রেয় মনে করতেন। পাছে চাপে পড়ে যান।
আরও পড়ুন- বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকেই জেরা CBI-এর, মেয়ের জন্য মন খারাপ অনুব্রতর
পর্যবেক্ষক প্রথা দলে থাক বা না থাক পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামে ওই জেলা বা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও কথা চলে না। দলের ব্লক ও শহর স্তরে কমিটি ঘোষণার আগে এই গ্রেফতারিতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ছোট-বড় নেতাদের। কেউ কেউ আড়ালে আবডালে আশাও দেখছেন।
একদিকে এদেশের রাজনৈতিক দলে একমাত্র মহাসচিব (অপসারিত) পার্থ চট্টোপাধ্যায় অন্যদিকে একমাত্র ক্ষমতার শীর্ষে থাকা জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল কেন্দ্রীয় দুই তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার। সেই পরিস্থিতিতে অধীর চৌধুরীর বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। রাজনীতির অন্দরমহলের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা না করলেও পরিস্থিতি তা 'ওপেন সিক্রেট' করে দেয়।