Peacocks are roaming in Bhatar area of Purba Bardhaman: পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ও আউশগ্রামে ময়ূর নিয়ে মাতোয়ারা বাসিন্দারা। গত দু’তিন দিন হল ভাতারের রতনপুর ও বামুনারা এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে একটি ময়ূর ও একটি ময়ূরী। সকালে দরজা খুললেই দর্শন মিলছে সেই ময়ূর-জোড়ার। তা নিয়েই দুই এলাকার বাসিন্দারা আনন্দে আত্মহারা। ময়ূর-জোড়ার খ্যাতির যত্নেও খামতি রাখছেন না গ্রামবাসীরা। ঘটনা জানার পর নড়েচড়ে বসেছে বন দপ্তরও। শুরু হয়েছে সচেতনতামূলক প্রচার।
ভাতারের বামুনাড়া হাটতলা এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, তিন-চার দিন আগে শীতের বিকেলে হাটতলায় তেঁতুল গাছের মগ ডালে একজোড়া ময়ূর দেখতে পান তাঁরা। কাকেদের তাড়া খেয়ে ময়ূর দুটি তেঁতুল গাছ থেকে উড়ে গিয়ে কিছুটা দূরের অন্য একটি গাছে বসে। তারপর থেকে ময়ূর ও ময়ূরী ভাতারের বামুনাড়া ও রতনপুর এলাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। জঙ্গলের অতিথির গ্রামে আগমন নিয়ে বাসিন্দারা আনন্দে আত্মহারা হলেও আতঙ্কও তাঁদের পিছু তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মাংসের লোভে কেউ যাতে ময়ূর ও ময়ূরীকে হত্যা না করে দেয়, সেদিকেই এখন কড়া নজর রেখে চলেছেন গ্রামের যুবকরা। মূলত তাঁরাই ময়ূর ও ময়ূরীকে আগলে রেখেছেন।
বনদপ্তরের বর্ধমান ডিভিশনের আধিকারিক সঞ্চিতা শর্মা বলেন, "ময়ূরগুলির বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
জঙ্গলমহল হিসেবে পরিচিত জেলার আউশগ্রাম। এখানকার জঙ্গলমহলে দলে দলে ময়ূরের দেখা মেলে। বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে আউশগ্রামের আদুরিয়া ও সংলগ্ন জঙ্গল আবৃত গ্রামগুলিতে ময়ূরের দল দেখা যাচ্ছে। আউশগ্রাম ছাড়াও ভাতারের পশ্চিমাংশে রয়েছে ওড়গ্রাম জঙ্গল। ভাতারের বামুনাড়া গ্রাম থেকে ওড়গ্রাম জঙ্গলের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটারে মতো। ওড়গ্রাম জঙ্গল থেকে আউশগ্রামের আদুরিয়া জঙ্গলের দূরত্ব প্রায় ৪৭ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: সরকারি হাসপাতালে স্যালাইন নেওয়ার পরেই পরপর অসুস্থ প্রসূতি, মৃত্যু একজনের
আউশগ্রামের বাসিন্দাদের কথায় জানা যায়, খাবারের সন্ধানে গত বছরে আদুরিয়ার জঙ্গল ছেড়ে একদল ময়ূরকে মঙ্গলকোট এলাকায় গিয়ে ডেরা বাঁধতে দেখা গিয়েছিল। এবছর মঙ্গলকোট এলাকায় আর ময়ূর দেখা যাচ্ছে না। তার বদলে এখন শীতের মরশুমে ময়ূর দেখা যাচ্ছে ভাতারের বামুনাড়া ও রতনপুর গ্রামে। এর আগে গত বছরের
জুন মাসে জেলার জামালপুর ব্লকে আঝাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মীরেপাড়া গ্রামে ময়ূর দেখা গিয়েছিল। জঙ্গল ছেড়ে বারবার লোকালয়ে ময়ূর চলে আসার বিষয়টি বনকর্তারা উদ্বেগে।
আরও পড়ুন- RG Kar Case: ১৮ জানুয়ারি আরজি কর রায়, ফিরে দেখা গত ৫ মাসের দিনলিপি
এলাকার বাসিন্দা সৌরিন হাটি, রাহুল বর্মনরা বলেন, “গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ হঠাৎ বামুনাড়া হাটতলার কাছে একটি গাছে দুটি ময়ূর এসে বসে। কাকের তাড়া খেয়ে ময়ূরগুলি বাবুপাড়া গ্রামের লোকালয়ে চলে আসে। এরপর থেকে গ্রামের ভিতর ও গ্রামের আশেপাশে আম বাগানে ময়ূর-জোড়া ঘোরাঘুরি করছে। আমরা ভয়ে আছি মাংসের লোভে ময়ূর দুটিকে কেউ হত্যা না করে দেয়। সেজন্য আমরা ময়ূরগুলির উপর নজর রাখে যাচ্ছি।" অপর গ্রামবাসী মধুসূদন দে বলেন, "এতদিন চিড়িয়াখানায় বা ছবিতে জাতীর পাখি ময়ূর দেখেছি। এখন গ্রামে বসেই ময়ূর-ময়ূরী দেখছি। এটা আমাদের কাছে ভীষণ আনন্দের ব্যাপার।"
ওড়গ্রাম বন বিভাগের কর্মীদের ধারণা, খাবারের সন্ধানেই হয়তো ময়ূর-ময়ূরী আউশগ্রাম জঙ্গল থেকে ভাতারে চলে এসেছে। বনবিভাগ তাদের নিরাপদ এলাকায় পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। কেউ যাতে ময়ূর গুলির ক্ষতি না করেন বা বিরক্ত না করেন তা নিয়ে বনদপ্তরের তরফে মাইকিং করে এলাকার মানুষদের সচেতন করা হচ্ছে।