Advertisment

আবাস যোজনার বাড়িই জামালপুরে তৃণমূলের উন্নয়ন ভবন! পথে নামছে বাম-বিজেপি

এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে গিয়ে আরও এক বেআইনি কাজ করে বসে আছেন তৃণমূলের নেতারা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
PMAY Scam: TMC leaders made party office in Abas Yojana House

উপভোক্তার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের টাকা আত্মসাৎ করে তৈরি হয়েছে তৃণমূলের পার্টি অফিস। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বেনিয়ম নিয়ে রাজ্যের জেলায় জেলায় ছড়িয়েছে অসন্তোষ। এই অবস্থার মধ্যেই বিরোধীরা প্রকাশ্যে আনল সরকারি আবাস যোজনা নিয়ে নজিরবিহীন দুর্নীতি কাণ্ড। উপভোক্তার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের টাকা আত্মসাৎ করে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে তৈরি হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস। তাই সরকারি খাতায় কলমে থাকা উপভোক্তা শঙ্কর মাঝি বা তাঁর পরিবারের কেউ আজ অবধি ওই ঘরের চৌকাঠ পর্যন্ত মাড়াতে পারেননি। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে গিয়ে আরও এক বেআইনি কাজ করে বসে আছেন তৃণমূলের নেতারা। যে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জোরদার আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছে বিজেপি ও সিপিএমের নেতৃত্ব।

Advertisment

জামালপুর ২ পঞ্চায়েত অফিসের সন্নিকটে রয়েছে কাঠুবিয়াপাড়া গ্রাম। শঙ্কর মাঝি ও তাঁর পরিবার এই গ্রামেরই বাসিন্দা। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে শঙ্কর মাঝির নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর অনুমোদন হয়। যার আইডি নম্বর পিএমএওয়াই - ডাব্লু বি ১৬৮৫৩৩২। ঘর তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির নামে বরাদ্দ হয়। সেই টাকায় পাকা বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর নিয়ম মেনে তার ’জিও ট্যাগিং’ হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও ওই বাড়িতে শঙ্কর মাঝি বা তাঁর পরিবারের কারুরই ঠাঁই হয়নি। কারণ সরকারি খাতায় কলমে আবাস যোজনার ওই বাড়িটির মালিক শঙ্কর মাঝি হলেও শাসকের ইচ্ছায় সেটি হয়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস। জেলা ও ব্লক তৃণমূলের একঝাঁক নেতা-নেত্রী মিলে ওই পার্টি অফিসের উদ্ধোধন করেছিলেন। কিন্তু উপভোক্তা শঙ্কর মাঝি বা তাঁর পরিবারের কী হবে,তা নিয়ে নেতারা কেউ আর মাথাই ঘামাতে চান না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

কাঠুরিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের কথায় এও জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ওই বাড়িতে নীল সাদা রঙ করে বিলাসবহুল পার্টি অফিস করা হয়েছে। পার্টি অফিসের ভিতরে রয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর ছবি। এছাড়া রয়েছে এলইডি টিভি ও দামি আসবাবপত্র। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও ওই পার্টি অফিসে এসেছিলেন। এলাকাবাসী আরও জানান,পার্টি অফিস তৈরির আসল রহস্য গোপন রেখেই তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর নেতারা ওই পার্টি অফিসে বুক ফুলিয়েই ঢোকেন, আবার বুক ফুলিয়েই বেরিয়ে যান।

এই বিষয়ে বিজেপি যুব মোর্চার জামালপুর বিধানসভার আহ্বায়ক অজয় ডকাল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর নিয়ে এমন ছলচাতুরি করেও শাসকদলের নেতারা বেশিদিন তা গোপন রাখতে পারেননি। ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে ২০১৯ সালের জুলাই মাস নাগাদ আমি-সহ বিজেপির কর্মীরা মিলে আন্দোলনে নামি। তখন চাপে পড়ে গিয়ে ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের নেতারা এবং জামালপুর ২ পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ভোল বদলান। পার্টি অফিসটি ছেড়ে দেওয়া হয় উপভোক্তা শঙ্কর মাঝিকে। পঞ্চায়েত প্রধান মণিকা মুর্মু ও উপ-প্রধান উদয় দাস ঘরের চাবি তুলে দেন শঙ্কর মাঝির হাতে। ওই পার্টি অফিস যে আসলে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকায় তৈরি উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির বাড়ি ,সেটা পঞ্চায়েত দেওয়ালে লিখেও দেয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও নিজের নামে থাকা সরকারি আবাস যোজনার ওই বাড়িতে থাকতে পারেন না শঙ্কর মাঝি। তাঁকে সেখান থেকে বের করে দেন এলাকার তৃণমূল নেতা রামরঞ্জন সাঁতরা ওরফে বুটে। তিনি ওই বাড়ির দেওয়ালে লেখা থাকা আবাস যোজনা সংক্রান্ত তথ্যও মুছে দেন। এই গোটা বিষয়টি সন্মন্ধে সব জানা থাকলেও প্রশাসনের কর্তারা নীরব রয়েছেন“।

আরও পড়ুন সল্টলেকে তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামীর দাদাগিরি, মহিলা সরকারি আধিকারিককে মারধর, শ্লীলতাহানির অভিযোগ

অজয় ডকাল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সরকারি আবাস যোজনা নিয়ে এতবড় দুর্নীতি হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন চুপ থাকলেও বিজেপি চুপ করে বসে থাকবে না। এই দুর্নীতিকে ইস্য়ু করে বিজেপি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে জোরদার আন্দোলনে নামবে। অপর দিকে সিপিআইএম জামালপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন, ”এটাও তৃণমূলের একটা নজিরবিহীন দুর্নীতি কাণ্ড। পঞ্চায়েত যে বাড়িটি শঙ্কর মাঝির আবাস যোজনার বাড়ি বলে দেওয়ালে লিখে দিয়েছিল সেই বাড়িটিই শঙ্কর মাঝির পরিবারকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই দাবিতে সিপিএম পথেও নামবে, বিডিওকেও ডেপুটেশন দেবে। তার পরেও প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলন আরও জোরদার হবে“।

তৃণমূল নেতা রামরঞ্জন সাঁতরা আবার গোটা ঘটনার জন্য জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেন, বিজেপির লোকজন আন্দোলন শুরু করেছিল বলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ চাপে পড়ে যায় । তারা ওই সময় অন্যায় ভাবেই তৃণমূলের পার্টি অফিসটিকে উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির বাড়ি বলে উল্লেখ করে দেওয়ালে লিখে দেয়। তাহলে কোন জায়গাটি শঙ্কর মাঝির দেখিয়ে তাঁর নামে সরকারি আবাস যোজনার ঘরের টাকা অনুমোদন করা হয়েছিল? এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যার স্বামী রামরঞ্জন সাঁতরা দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, শঙ্কর মাঝির ঘরের দরকার ছিল। তাই তিনি নিজে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করে সেচ দপ্তরের বাঁধের জায়গায় ইটের দেওয়াল আর এডবেস্টাসের ছাউনির বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন শঙ্কর মাঝিকে। লেখক দিয়ে ওই বাড়ির দেওয়ালেই তিনিই শঙ্কর মাঝির প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পাওয়া সংক্রান্ত তথ্য ও আই-ডি নম্বর লিখে দিয়েছেন বলে রামরঞ্জনবাবু জানান।

আরও পড়ুন যেন বারুদের স্তুপে বাংলা, উদ্ধার বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র, জালে কুখ্যাত দুষ্কৃতী

এরপর রামরঞ্জন বাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, যে জায়গার মালিক সেচ দপ্তর সেই জায়গায় কেউ কি সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি পেতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে ঢোঁক গিলে রামরঞ্জনবাবু বলেন, না পেতে পারে না। শেষে রামরঞ্জন বাবু বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়ে জানতে চান এই বিষয়টি নিয়ে আবার কোনও ঘোঁট পাকছে নাকি! যদিও জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান উদয় দাস স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “রামরঞ্জন সাঁতরা অসত্য কথা বলে পঞ্চায়েতকে দায়ী করছেন। এটা ঠিক নয়। কোনও বাড়ি সরকারি আবাস যোজনার অর্থে তৈরি না হলে পঞ্চায়েত সেই বাড়ির দেওয়ালে আবাস যোজনা সংক্রান্ত তথ্য ,আই-ডি নম্বর এইসব লিখতে যায় না“। আর বিডিও (জামলপুর) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, “সেচ দপ্তরের বাঁধের জায়গায় সরকারী আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির অনুমোদন প্রশাসন দেয় না। এইসব যাঁরা করেছেন তার দায় তাঁদেরকেই নিতে হবে। প্রশাসন এইসবের কোনও দায় নেবে না“। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভূতনাথ মালিক-ও একই কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

East Burdwan West Bengal PMAY Advertisement tmc
Advertisment