Advertisment

PM Awas Yojana: বন্যায় ভেঙেছিল মাটির ঘর, আড়াই মাস নদীবাঁধে তাঁবুই ছিল আস্তানা, অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মিলছে আবাসের বাড়ি

PM Awas Yojana in West Bengal: আবাস যোজনার একটা পাকা বাড়ি পাওয়ার সৌভাগ্য লাভের জন্য এখন তাঁরা দু’চোখ ভরা জল নিয়েই গৃহ দেবতার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে চলেছেন।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
PM Awas Yojana: বন্যার সময় তাঁবুতে আড়াই মাস কাটানোর পর ফের ভাঙাচোরা বাড়িতে।

PM Awas Yojana: বন্যার সময় তাঁবুতে আড়াই মাস কাটানোর পর ফের ভাঙাচোরা বাড়িতে।

PM Awas Yojana: বন্যা বিধ্বস্ত করে দিয়েছে মাটির বাড়ি। তার কারণে চুড়ান্ত বিপাকে পড়ে যান পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের শিয়ালী গ্রামের ৪টি দরিদ্র পরিবার। তাঁদের আশ্রয়ের ঠিকানা হয়ে যায় দামোদর নদের বাঁধে খাটানো ত্রিপলের তাঁবু। তা জানতে পেরে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে জেলাশাসক আয়েশা রানি তাঁদের কাছে পৌঁছে যান। ওই দিন গ্রামে ঘুরে তাঁদের ঘরবাড়ির অবস্থাও জেলাশাসক খতিয়ে দেখেন। তবে বাড়ির হাল ফেরানোর জন্য কোনও সহয়তা  না মেলায় নিরুপায় হয়েই চার পরিবার প্রায় আড়াই মাস নদীবাঁধের তাঁবুতেই দিন কাটান। তারই মধ্যে শীত পড়ে যাওয়ায় নদীবাঁধের তাঁবুতে তাঁদের দিন কাটানো অসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই,কিছু দিন আগে চার পরিবার নদীবাঁধ ছেড়ে একে একে ফিরে যান বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া নিজেদের বাড়িতে। এত কিছুর পরেও সরকারি আবাস যোজনার পাকা বাড়ি পাওয়ার নিশ্চয়তা তাঁরা পাননি। তাই আবাস যোজনার একটা পাকা বাড়ি পাওয়ার সৌভাগ্য লাভের জন্য এখন তাঁরা দু’চোখ ভরা জল নিয়েই গৃহ দেবতার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে চলেছেন। 

Advertisment

জামালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম পঞ্চায়েত এলাকার  প্রত্যন্ত গ্রাম শিয়ালী। গ্রামের গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে দামোদর নদ। গ্রামে বসবাস করা বাসিন্দাদের মধ্যে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশী।তাঁদের কেউ পেশায় খেতমজুর, আবার কেউ দিন মজুর। সারা বছর দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করেই তাঁদের দিন কাটে। 
গ্রামের আনন্দ রায়, বাসুদেব রায়, কনকলতা রায় এবং কনকলতার চার ছেলের পরিবারের জীবন পাঁচালিটাও একই লিখনিতে বাঁধা। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসাবে এই চার পরিবারেরই সম্বল ছিল ছিটে বেড়ার উপরে মাটি ধরানো বাড়ি।

আনন্দ রায়, বাসুদেব রায় ও কনকলতা জানিয়েছেন, এবছর পুজোর আগে হওয়া বন্যায় শিয়ালী গ্রামের প্রভূত ক্ষতি হয়। কাঁচা বাড়ি থেকে শুরু করে চাষবাস সবই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। তাঁদের কাঁচা বাড়িগুলি বন্যার জলের তোড়ে কার্যত কঙ্কালসার হয়ে যায়। সেই কারণে বাধ্য হয়ে তাঁরা দামোদরের বাঁধে গিয়ে ওঠেন। প্রশাসনের দেওয়া ত্রিপল দিয়ে বাঁধে তাঁবু বানিয়ে সেখানেই তাঁরা সপরিবার থাকা শুরু করেন। কনকলতাদেবী জানান, তাঁর এক প্রতিবন্ধী মেয়ে ও চার ছেলের পরিবারও তাঁদের সঙ্গেই দামোদরের বাঁধের উপরে ত্রিপলের তাঁবুতে আশ্রয় নেয়। প্রায় আড়াই মাস তাঁবুতেই তাঁদের দিন কাটে।

আরও পড়ুন ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্তে ফের সাফল্য, পুলিশের জালে আরও ৩

আড়াই মাস নদীবাঁধের তাঁবুতে দিন কাটাতে হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে আনন্দ রায়, বাসুদেব রায় ও কনকলতা রায় যা জানিয়েছেন সেটা যথেষ্টই হৃদয় বিদারক। তাঁরা জানান, ছিটে বেড়ার উপর মাটি ধরানো বাড়ি’ই ছিল আমাদের মাথা খোঁজার ঠাঁই। বন্যায় সেই বাড়িগুলি ভয়ংকর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়। ওই বাড়িতে থাকতে গেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাঁদের থাকতে হত। তাই প্রাণ ভয়েই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া নিজেদের বাড়িতে গিয়ে বসবাস করার স্পর্ধা তাঁরা দেখাতে পারছিলেন না। সেই কারণে প্রায় আড়াই মাস তাঁরা বাঁধের তাঁবুতেই রয়ে যান বলে জানান। একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, শীত না পড়লে বাঁধের তাঁবুতেই তাঁরা থাকতেন। শীত পড়ে যাওয়ায় নদী বাঁধের তাঁবুতে বসবাস করা আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সম্প্রতি তাঁরা চার পরিবার একে একে নদী বাঁধের তাঁবু ছেড়ে নিজেদের ভাঙাচোরা বাড়িতেই ফিরতে বাধ্য হন বলে জানান। 

আনন্দ রায় জানান, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী বাসন্তী ও ছেলে অজয় খেতমজুরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বন্যায় তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু বাড়ির হাল ফেরানোর সাধ্য তাঁদের নেই। পূর্বে তিনবার প্রশাসনের লোকজন তাঁদের বাড়ির ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আবাস যোজনার পাকা বাড়ি পাওয়ার সৌভাগ্য আজও তাঁদের হয়নি। আবাস যোজনার পাকা বাড়ি মিললে তবেই নিরাপদ একট আশ্রয় থাকতে পারবেন বলে আনন্দ রায় জানিয়েছেন। একই অবস্থা বৃদ্ধা কনকলতা রায়ের। তিনিও সরকারি আবাস যোজনার পাকা বাড়ির জন্য প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছেন।

আর বাসুদেব রায় ও তাঁর স্ত্রী সীমা রায় আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ’বন্যায় আমাদের কাঁচা বাড়িটা কঙ্কালসার হয়ে গিয়েছে। তবুও প্রাণ হাতে নিয়েই ওই বাড়িতে এখন আমাদের থাকতে হচ্ছে।' বাসুদেব  বলেন,’আমাদের ছেলে প্রবীর হুগলfর ধনিয়াখালি পলিটেকনিক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বন্যায় আমাদের বাড়িটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার পর আড়াই মাস বাঁধের তাঁবুতেই আমাদের দিন কাটাতে হয়। তার কারণে ছেলে ভালভাবে পড়াশুনা করতে পারেনি। পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। শীতে ভাঙা বাড়িতে ছেলের পড়াশুনা করা আরও দায় হয়ে উঠেছে’। সীমাদেবী বলেন, ’বন্যার প্রভাব কমলে জেলাশাসক আমাদের গ্রামে এসে বন্যায় ঘর বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি নিজে গ্রামে এসে ঘুরে দেখে গিয়েছিলেন। তখন আমরা চার পরিবারই সরকারি আবাস যোজনার পাকা বাড়ির জন্য তার কাছে আবেদন রেখে ছিলেন। তার দরুন এবার যাতে আবাসের পাকা বাড়ি পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ হয়, তাই নিত্যদিন চোখে জল নিয়েই গৃহদেবতার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে চলেছি।’

আরও পড়ুন আদালতে সঞ্জয়, তারস্বরে বাজল হর্ন, গাড়ির ছাদ চাপড়ালেন পুলিশকর্মীরা

একই ভাবে সরকারি আবাস যোজনা পাকা বাড়ির জন্য চোখের জল ফেলছেন আরও দু’জন হতদরিদ্র মানুষ। এঁরা হলেন, ৮৪ বছর বয়সী আদিবাসী বৃদ্ধা কালিন্দী সরেন এবং ৬৯ বছর বয়সী কালিপদ মালিক। কালিন্দী বসবাস করেন  জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হুসুমপুর গ্রামে। আর কালীপদ থাকেন হুসুমপুরের কাছের বকুলতলা গ্রামে। মাঠের ধারে এক চিলতে মাটির বাড়িতে বসবাস করতেন বৃদ্ধা কালিন্দী সরেন।

PM Awas Yojana: জামালপুরের হুসুমপুরের আদিবাসী বৃদ্ধা
PM Awas Yojana: জামালপুরের হুসুমপুরের আদিবাসী বৃদ্ধাCaption

দীপাবলির আগে ঘূর্ণিঝড় ’দানার’প্রভাবে হওয়া হওয়া ঝড় বৃষ্টিতে কালিন্দীর মাটির বাড়িটি ভেঙে পড়ে যায়। বাড়ির হাল ফেরানোর সাধ্য না থাকায় শীতে ওই ভাঙা বাড়িতেই বৃদ্ধা দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে, কালিপদর মাটির বাড়িটি একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। যখন তখন বাড়ি ভেঙে পড়ার বিপদ মাথায় নিয়েই কালিপদ ও তাঁর পরিবার ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। 

PM Awas Yojana: জামালপুরের বকুলতলা এলাকার  দরিদ্র খেতমজুরের বাড়ি
PM Awas Yojana: জামালপুরের বকুলতলা এলাকার  দরিদ্র খেতমজুরের বাড়িCaption

এইসব দরিদ্র পরিবার গুলিকে আর যাতে চোখের জল ফেলতে না হয় তার জন্য আশার কথা শুনিয়েছেন জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) আয়েশা রানি। তিনি সোমবার জানান,’মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা বা ডিভিসির জল ছাড়ার কারণে যাঁদের কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁরা আবাস যোজনার ঘর পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে থাকবেন। সেই মতই জামালপুরের শিয়ালী গ্রাম-সহ অন্য আরো যেসব গ্রামের বাসিন্দাদের কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই সব বাড়ির মালিকের নাম আমরা নিয়েছি। এখন সার্ভের কাজ চলছে। আশা করছি আবাসের পাকা বাড়ি তৈরির টাকা ওঁনারা শীঘ্রই পেয়ে যাবেন।

Cyclone Dana West Bengal Mamata Banerjee Bengal Floods PM Awas Yojana
Advertisment