লাফিয়ে বাড়ছে আদার দাম। বাজারে গিয়ে ফি দিন আদার দামের আগুন দশায় হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তের। শহর থেকে জেলা, কোথাও তিনশো তো কোথাও আবার সাড়ে তিনশো টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আদা। পাইকরি বাজারে ২৪০-২৫০-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে প্রতি কেজি আদার দাম। সেই আদাই খুচরো বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজিতে। হঠাৎ কেন আদার দামে আগুন? বাড়তে বাড়তে কোথায় গিয়ে থামবে এই দাম? কবে ফের নাগালে ফিরবে আদার দাম? এই সব প্রশ্নের সরাসরি না হলেও খানিকটা উত্তর মিলল শিয়ালদহ কোলে মার্কেটে।
Advertisment
কখনও আলু কখনও পেঁয়াজ আর এবার আদা। মাত্রাছাড়া দামে বিক্রি হচ্ছে রান্নায় একান্ত অপরিহার্য্য এই উপাদান। ফি দিন বাজারে গিয়ে আদা কিনতে যেন চোখে জল আসছে আম-আদমির। হঠাৎ এভাবে কেন আদার দামে আগুন? ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ার জেরেই এই সমস্যা। আপাতত মাস চারেক নাকি আদার এই দাম কাছেপিঠেই ওঠানামা করবে। ভাদ্র-আশ্বিন মাস নাগাদ নতুন আদা না ওঠা পর্যন্ত এই দাম ফের নাগালে নামবার লক্ষ্ণণ দেখতে পাচ্ছেন না শিয়ালদহ কোলে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একাংশ।
এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
তবে শুধু আদাই নয়। রসুনের দামও বাড়ছে। যদিও রসুনের দামে এখনও অস্বাভাবিকতা দেখতে পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীদের একাংশ। শিয়ালদহ কোলে মার্কেটের এক আদা ব্যবসায়ীর জাবি, 'বাইরের গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না। সেই কারণেই দাম বাড়ছে। এখন ২৩০ টাকা কিলো দরে (পাইকরি দর) আদা বিক্রি করছি।"
কোলে মার্কেটের আর এক আদা ব্যবসায়ী অমৃত সরকার। তাঁর কথায়, ''আমদানি কম বলেই দাম বাড়ছে আদার। আরও দাম বাড়তে পারে। আমি ৮০-৯০ কেজি দরে রসুন বিক্রি করছি। উত্তরপ্রদেশের রসুনের চাহিদা বেশি। কিন্তু এবার ওই রাজ্যেও রসুনের উৎপাদন কম হয়েছে। তাই দাম একটু বাড়ছে।"
আর এক ব্যবসায়ী বিনোদ লামা জানালেন, তিনি প্রতি কেজি ১৪০ টাকা পাইকরি দরে আদা বিক্রি করছেন। খুচরো বাজারে ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আদা। তিনি বলেন, "চাষ কম হয়েছে বলেই দাম বাড়ছে। শিলং, বেঙ্গালুরু থেকে আদা আসে এরাজ্যে। বেঙ্গালুরুর আদা এখন আসছে না। চার মাস পর দাম কমবে। তবে গরমেও আদা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এবার মূলত আদার উৎপাদন কম হওয়াতেই দাম বাড়ছে। রসুনের দামও পাইকরি বাজারে ১০০ টাকা কেজি।"
এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।
কোলে মার্কেটের অপর এক ব্যবসায়ী ভূপেশ মণ্ডল জানালেন, তিনি পাইকরি দরে ২৪০ টাকা কেজিতে আদা বিক্রি করছেন। তাঁর কথায়, "খুচরো বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে আদা বিক্রি হচ্ছে। আদার উৎপাদন কম হয়েছে। আসছে কম, তাই চাহিদাও বেশি। আদার দাম আরও বাড়বে। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে নতুন আদা ঢুকলে দাম কমতে পারে। রসুনের দামও তো বাড়ছে।"
এদিকে, বাজারে গিয়ে আদা কিনতে গিয়ে মাথায় হাত আমজনতার। সুবোধ মল্লিক নামে এক ক্রেতা বললেন, "হঠাৎ করে আদার দাম বেড়ে যাওয়ায় ঘোর সমস্যায় পড়েছি। অন্য সবজি কেনার ব্যাপারে ভাবতে হচ্ছে। বাজেট সামলে বাজার করতে অন্য শাক-সবজি বা মশলাপাতি কম কিনছি।"
আর এক ক্রেতা সন্দীপ নন্দীর কথায় "নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দামই বাড়ছে। আদা রোজকার রান্নায় অপিরহার্য্য একটি উপাদান। হঠাৎ করে তিনশো টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আদা। সরকারের উচিত আদার দামে নিয়ন্ত্রণ আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।" উল্লেখ্য, শহর কলকাতার পাশাপাশি জেলার বাজারগুলিতেও আদার দামে আগুন। কোথাও ২৮০ কোথাও ৩০০ কোথাও আবার কেজি প্রতি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আদা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রসুনের দামও।