International Women's Day: আদরের ছোট্ট অস্মিকাকে সুস্থ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ! নারী দিবসে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার লক্ষ্মী দেবীর।
'তিন মাস বয়স পর্যন্ত বাকি বাচ্চাদের মতোই সবকিছুই স্বাভাবিক চলছিল। পা তুলত, হাত নাড়াত। সাড়ে তিন মাস বয়স যখন হল, তখনই হঠাৎ একদিন দেখলাম পা-টা আর তুলছে না। তিন-চার মাসের বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয়ে যায় সাধারণত। উবুড় হয়ে যায়। কিন্তু ও কিছুই করতে পারছিল না'। তখনই প্রথম সন্দেহটা হয়। তারপর থেকে কলকাতা-দেশের একাধিক হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন স্বামী শুভঙ্কর দাসকে নিয়ে। অবশেষে জানতে পারেন মেয়ে বিরল স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA) টাইপ ওয়ান বিরল রোগে আক্রান্ত। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। মুহূর্তেই চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসে। চিকিৎসার পাহাড় প্রমাণ টাকা আসবে কোথায় থেকে? চিন্তায় দিনের পর দিন ঘুমহীন রাত কাটানো। শেষে শুরু হয় এক নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন করে এক যুদ্ধ। মেয়ে আস্মিকাকে সুস্থ করতে অবশেষে সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নেন লক্ষ্মী দেবী। ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ে পোস্ট। লাখ লাখ মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখনও অর্ধেক টাকাই জোগাড় হয়নি। অঙ্কটা যে বিশাল। এদিকে মেয়ের বয়সও একবছর পেরিয়েছে, সুস্থ যে তাকে করতেই হবে, মায়ের মন, সন্তানের কষ্ট আর যেন সইতে পারছেন না তিনি। এখনও পর্যন্ত ক্রাউড ফান্ডিংয়ে উঠেছে সাত কোটি ৯০ লাখ টাকার কাছাকাছি। বাকি এখনও প্রায় ৮ কোটি। কীভাবে সম্ভব, সকাল থেকে রাত জারি হার না মানা লড়াই।
কান্না ভেজা চোখে লক্ষ্মী দেবী জানিয়েছেন, "মেয়ে যখন হয় তখন এত খুশি হই যে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তবে সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মুহূর্তেই সব কিছু বদলে যায়, চোখের সামনে একরত্তি মেয়েটা এত কষ্ট পাচ্ছে তা দেখেও আমি নিরুপায়। মানুষ নিজে থেকে এগিয়ে আসছেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সকলেই। একাধিক হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পজগতের নামী ব্যক্তিত্ব এগিয়ে এসেছেন, ওর চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদনও জানিয়েছেন। আপাতত ক্রাউড ফান্ডিং ছাড়া আমাদের কাছে কোন বিকল্প নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কিছুই ভাইরাল হচ্ছে। এমনও এর আগে রটেছিল অরিজিৎ সিং মেয়ের চিকিৎসায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। কিন্তু সেটা সঠিক নয়। অবশেষ গত সপ্তাহেই স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে মাননীয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। ওনাকে সবটাই জানিয়েছি। উনি ওর বাবার নাম, ফোন নম্বর নিয়েছেন। আমি আশাবাদী উনি সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেবেন। আমি চাই না কোন অপপ্রচার হোক। যাতে ক্রাউড ফান্ডিংটা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ আমাদের হাতে সময় খুবই কম। এখন আমার সামনে একটাই চ্যালেঞ্জ মেয়েকে সুস্থ করে তোলা"।
এদিকে অস্মিকাকে সুস্থ করে তুলতে আসরে নেমেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার একটা বড় অংশের মানুষ। তালিকাটা দীর্ঘ। মাত্র কয়েকদিন আগেই অস্মিকার মা-বাবার হাতে চিকিৎসা খবচ বাবদ একটি চেক তুলে দিয়ে নিজের ফেসবুক লাইভ থেকে একরত্তির সাহায্যে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শাসক বিধায়ক মদন মিত্র। 'রাজকন্যা'কে সুস্থ করে তুলতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন 'প্রবাসে ঘরকন্না'র মহুয়া গঙ্গোপাধ্যায়। বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক কৈলাস খের। তিনিও অস্মিকাকে সুস্থ করে তোলার আর্জি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে। তালিকায় বাদ নেই কিংবদন্তী গায়িকা শুভমিতাও, রুপম ইসলামও। এত প্রচেষ্টা, লাখো মানুষের প্রার্থনা যেন বিফলে না যায়, সুস্থ হয়ে স্বাভবিক জীবনে ফিরতে পারে ছোট্ট অস্মিকা সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ মা লক্ষ্মী সরকার দাসের।