গ্রামে ঢোকার পথটি চকচকে। তবে শ্মশানঘাটে যেতে হলে পূর্ব বর্ধমানের ইন্দুটি গ্রামের মানুষজনকে এখনও কার্যত
জীবনপাত করতে হচ্ছে। মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটু সমান জলে কাদায় ভরা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তবেই গ্রামের মানুষজন পৌঁছোতে পারেন শ্মশানে। এটা যে নিছক কথার কথা নয়, সেটা ইন্দুটি গ্রামের ঘোষ পাড়ার বৃদ্ধা সন্ধ্যা লাইয়ের শবযাত্রার ভিডিও দেখে এলাকার সবাই হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, শ্মশানে যাওয়ার পথের এই দূরাবস্থার ছবি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ইন্দুটি গ্রামে তৈরি হয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ। অবিলম্বে বেহাল রাস্তার সংস্কারের দাবিতে সোচ্চার বাসিন্দারা।
ইন্দুটি গ্রামটি পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের গোপালবেড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। ইন্দুটি ঘোষপাড়া সহ আশপাশের আরও ৪-৫ টি পাড়ার তিনশোর বেশি পরিবারের জন্য গ্রামের এক ধারে জলাশয়ের কাছে একটি শ্মশানঘাট রয়েছে। গ্রাম থেকে প্রায় ৮০০ মিটার পথ পেরিয়ে গ্রামের মানুষজনকে ওই শ্মশানে পৌঁছাতে হয়। বর্ষায় সেই পথ হতশ্রী পথে রূপ পেয়ে গিয়েছে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও-য় দেখা গিয়েছে মৃতদেহ বাঁশের মাচায় চাপিয়ে ওই পথে জমে থাকা হাঁটু সমান জল, কাদা পেরিয়ে অতি কষ্টে ইন্দুটি গ্রামের মানুষজন এগিয়ে চলেছেন। এমন ভিডিও এখন এলাকার মানুষের মুঠো ফোনে ঘোরা-ফেরা করছে। ওই পথ এখন এলাকায় চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামবাসী সিদ্ধেশ্বর রায় ও শ্যামল মালিকরা জানান, এটি চারদিন আগের ঘটনা। বার্ধক্যজনিত রোগে ইন্দুটি ঘোষপাড়া গ্রামের বৃদ্ধা সন্ধ্যা লাই মারা যান। সেই বৃদ্ধার মৃতদেহ খাটিয়ায় তুলে কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে ইন্দুটি গ্রামের ঘোষপাড়া,রায়পাড়া হয়ে শ্মশানঘাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন শ্মশান যাত্রীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বৃদ্ধার তিন ছেলে পূণ্যচন্দ্র লাই, লক্ষ্মীকান্ত লাই ও বিপিন লাই সহ পরিজন এবং প্রতিবেশীরা। অনেক কষ্ট করে হাঁটু সমান জল, কাদা পেরিয়ে তবেই পরিজনরা বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে পৌঁছাতে পারেন এলাকার শ্মশানে। দুর্বিষহ সেই শ্মশান যাত্রার ছবি কেউ মোবাইল ফোনে বন্দি করে রাখেন অনেকে। সেই ভিডিও পরে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই পথের দ্রুত সংস্কার চেয়ে এলাকার বাসিন্দারা প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
আরও পড়ুন- indigo flight:মাঝ আকাশেই 'বিরাট বিপদ' টের পেয়ে গিয়েছিলেন পাইলট, তারপরেই নিলেন এই সিদ্ধান্ত
এই বিষয়ে খণ্ডঘোষের জেলা পরিষদ সদস্য তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন, “ওই রাস্তার বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। বর্ষা শেষ হলে বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে।" যদিও ওই পথ নিয়ে কটাক্ষ করতে
ছাড়েনি বিরোধীরা। জেলা BJP-র সহ সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “রাজ্যে পথশ্রী প্রকল্প শুধু নামেই রয়েছে। বাংলার গ্রাম গঞ্জের পথের হাল তাই আজও বেহাল হয়েই রয়ে আছে। শবদেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটু সমান জল, কাদা ভর্তি পথ পেরিয়ে
খণ্ডঘোষের ইন্দুটি গ্রামের মানুষজনের শ্মশানে পৌছানোর ভিডিও সেই বাস্তবকেই সামনে এনে দিয়েছে।"
আরও পড়ুন- West Bengal news Live Updates:নতুন করে হিংসায় উত্তাল বাংলাদেশ, গোপালগঞ্জে আগুনে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, নিহত ৪, জারি কার্ফু
খণ্ডঘোষের বাসিন্দা CPIM-এর পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের কটাক্ষ, “তৃণমূলের রাজত্বে আসলে কসমেটিক উন্নয়ন চলছে। তাই হাসপাতাল যেতে গেলে কাদামাটি পেরিয়ে যেতে হয়। কেউ মারা গেলে তাকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য জল কাদামাটি পেরিয়েই যেতে হয়।"