RG Kar Case Update: "আজও প্রতি রাতে মেয়ের কান্না শুনতে পাই", এভাবেই মেয়ের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে চোখের জল মুছতে মুছতে লড়াই জারির বার্তা দিলেন আরজি কর কাণ্ডের নির্যাতিতার মা। পাশাপাশি পাড়ায় তাদের একঘরে করে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করেছে তৃণমূল এমনই 'বিস্ফোরক' দাবিতে রাজ্য-রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দিলেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, "রাস্তায় দেখা হলেও প্রতিবেশিরা কথা বলেন না, বাজারে কোন জিনিস কিনতে গেলে বিক্রেতা দশবার ভাবেন বিক্রি করতে", এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
আজ ৯ অগাস্ট, আর জি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তি। ন্যায় বিচার দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক অভয়ার বাবা-মার। পাশে থাকার বার্তা একাধিক সংগঠনের। তবে পুলিশ প্রশাসনের তরফে গতকালের প্রস্তাবিত বিকল্প বিক্ষোভস্থল নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভয়ার পরিবার। ২০২৪ সালের ৮ অগাস্ট রাতে টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটির পর বিশ্রামের জন্য সেমিনার হলে গিয়েছিলেন বছর ৩১-এর ওই তরুণী চিকিৎসক। পরদিন সকালে সেখান থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। তদন্তে ধর্ষণ ও খুনের প্রমাণ মিললেও এক বছর কেটে গেলেও মেলেনি ন্যায় বিচার এমনই দাবিতে আজ পথে নামছেন নির্যাতিতার পরিবার। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাই ছাড়াও আরও একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে অপরাধে, এমনটাই দাবি পরিবারের।
পাশাপাশি সিবিআই তদন্ত নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে পরিবারের। তদন্তের গড়িমসিতে ক্ষুব্ধ পরিবার আজ ডাক দিয়েছে নবান্ন অভিযানের। অভয়ার বাবা অভিযোগ করেছেন, “আমার মেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শিকার। প্রশাসন, কলেজ কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য দফতর—সবাই দায়ী। যতই ব্যারিকেড করুক, আমরা নবান্ন পৌঁছবই।” অভয়ার মা সিবিআইকে ‘অপদার্থ’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, “তদন্তের নামে সার্কাস চলছে। তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে কলকাতা পুলিশ।”
রাজ্যের বিরোধী দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো এই অভিযানে সমর্থন জানিয়েছে। ৯ এবং ১৪ আগস্ট কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন নানা বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন হবে বলেও জানানো হয়েছে। এদিকে আজকের নবান্নঅভিযান নিয়ে সতর্ক পুলিশ প্রশাসন। নবান্নমুখী সব রাস্তা ও সেতুর সংযোগস্থলে ব্যারিকেড কড়া হয়েছে এবং পাশাপাশি বলা হয়েছে আইন ভঙ্গ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার রুমে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর উত্তাল হয় রাজ্য-রাজনীতি। এই ঘটনা চিকিৎসক মহলে এবং সাধারণ মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। আজও সকলকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি।
আন্দোলনের অন্যতম মুখ ও চিকিৎসক অণিকেত মাহাতো বলেন, “সেদিন আমি তখনও ডিউটিতে ছিলাম, সকাল ৯:৩০টার দিকে খবর পেয়ে আমি শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ি। যা ঘটেছে, তা শুধু আমাদের মনে গভীর দাগ কেটেছে। আমরা এখনও বিশ্বাস করি এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। তবে এখনও কোনও সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট জমা পড়েনি।”
যদিও হাসপাতাল ক্যাম্পাস এক বছরের মাথায় স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে আসছেন। তবুও সেই রাতের ঘটনা এখনও সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রতিবাদের স্মৃতিস্বরূপ ক্যাম্পাসের এক কোণায় এক বছরের পুরনো ধর্নামঞ্চ এখনও রয়েছে। প্রতিবাদের ঝাঁঝ কমলেও প্রতি সন্ধ্যায় আজও অভয়া স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও প্রার্থনা সভা হয়। হাসপাতালের এক হাউস স্টাফ বলেন, “সেমিনার রুম এখনও তদন্তের জন্য সিল করা রয়েছে। যেটা আমাদের আজও ন্যায়বিচারের কথা মনে করিয়ে দেয়।”
নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা এখনও ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সিবিআই চার্জশিটে শুধুমাত্র মূল অভিযুক্ত হিসেবে সঞ্জয় রায়ের নাম রয়েছে এবং আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে। তবে পরিবারের অভিযোগ, ফরেনসিক ও মেডিক্যাল রিপোর্টগুলোতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত রয়েছে। নির্যাতিতার বাবার কথায়, “সিবিআই ৯০টিরও বেশি ফরেনসিক এবং মেডিক্যাল রিপোর্ট উপেক্ষা করেছে। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম বিস্তৃত তদন্ত হবে, কিন্তু সিবিআই শুধু কলকাতা পুলিশের তদন্তে ফলো করেছে।” মায়ের বক্তব্য, “এটা ন্যায়বিচারের নামে পরিহাস। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও কোন সাড়া মেলেনি"।