RG Kar Protest: আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে ৮ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত গোটা সপ্তাহ জুড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। অপরদিকে একটা বছর কেটে গেলেও মেয়ের মৃত্যুর ন্যায় বিচার না পেয়ে হতাশ নিহত তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা।
৯ আগস্ট অর্থাৎ আগামীকাল আরজি কর-কাণ্ডে মৃত চিকিৎসকের পরিবার 'নবান্ন অভিযান'-এর ডাক দিয়েছে। রাজ্য সচিবালয় অভিমুখে এই পদযাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয়েছে। নিহত চিকিৎসকের বাবার অভিযোগ,'সবাই পাশে থাকার বার্তা দিলে লড়াইটা আমাদের একার। আমাদেরই বিচার ছিনিয়ে আনতে হবে। তবে সিবিআই অনেক কিছুই আড়াল করার করার চেষ্টা করছে'। ঠিক এক বছর আগে কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মস্থলেই ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়েছিলেন এক তরুণী চিকিৎসক। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ন্যায় বিচারের আশায় নিহত তরুণী চিকিৎসকের মা-বাবা। পাশাপাশি তাঁরা আজ অনেকটাই ক্লান্ত, বিষন্ন। বুধবার দিল্লি গিয়ে নির্যাতিতার পরিবার দেখা করেন সিবিআই ডিরেক্টরের সঙ্গে। তদন্ত নিয়ে তাঁদের একরাশ অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন।
আরজিকর ধর্ষণ-খুন মামলায় প্রথমে তদন্তভার হাতে নেয় কলকাতা পুলিশ। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সংস্থার তরফে ইতিমধ্যে ইতিমধ্যেই পাঁচটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট শিয়ালদা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ রিপোর্ট জমা পড়ে ১৬ জুলাই। কিন্তু নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্তে কোন অগ্রগতি ঘটেনি।
নিহত চিকিৎসকের বাবা তদন্তে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, “দিল্লি গিয়ে সিবিআই ডিরেক্টর, জয়েন্ট ডিরেক্টর সঙ্গে দেখা করেছি। সিবিআই সদর দফতরে এসে সময় নষ্ট করা আর কিছু নয়। পুলিশের ওপর যেমন আস্থা হারিয়েছি, তেমনই সিবিআইয়ের ওপরও আর বিশ্বাস নেই। কলকাতা পুলিশ যা বলেছিল, সিবিআইও তাই তোতা পাখির মতো বলছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছিল। “সেদিন মেয়ের মৃতদেহের আগে তিনটি মৃতদেহ ছিল। কিন্তু আমাদের মেয়ের দেহটাই সবার আগে দাহ করা হয়। এত তাড়াহুড়োর কারণ কী ছিল? প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। প্রমাণ আনার দায়িত্ব কী আমাদের, নাকি সিবিআইয়ের? সিবিআই সম্পূর্ণ নির্লজ্জ। আমাদের কোনো দাবি মানা হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত, তাদের শাস্তি পেতেই হবে।”পরিবারের দাবি, "সুপ্রিম কোর্টও এই মামলার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু দিন পেরোলেও সেগুলির কোন উত্তর এখনও মেলেনি। সিবিআইয়ের বারেবারে বলেছে তদন্ত চলছে। যেটা যথেষ্ট নয়।
রবিবারই পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে মেয়ের মৃত্যুর প্রথম বার্ষিকীতে (৯ আগস্ট) বিচার দাবিতে রাজ্য সচিবালয় অভিমুখে ‘নবান্ন অভিযান’-এ যোগ দেওয়ার জন্য তাঁরা শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। চিকিৎসকের পরিবারের দাবি, সঞ্জয় রাই একা নয়, ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত রয়েছে এবং ঘটনাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তরুণী চিকিৎসকের মায়ের কথায়,“আমাদের মেয়ে যথেষ্ট শক্ত মনের ছিল। কলকাতার বুকে এত সুরক্ষিত ভবনের ভেতরে একজন মানুষের পক্ষে একা এই কাজ করা সম্ভব নয়। শুরু থেকেই আমরা বলেছি, "বড় চক্রান্ত রয়েছে”। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে শীঘ্রই তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও দেখা করবেন।
৮ আগস্ট রাতে উত্তর কলকাতার কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত মশাল মিছিল করবে জুনিয়র ডক্টরদের সংগঠন WBJDF। রাতভর শ্যামবাজার মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। ৯ আগস্ট সকাল থেকে জেপিডি এবং 'অভয় মঞ্চ'-এর তরফে জনসুরক্ষা ও সচেতনতার বার্তা দিতে 'রাখি' কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৪টে'য় হাজরা ক্রসিংয়ে জমায়েত করবেন চিকিৎসকরা। সন্ধ্যা ৬টায় আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে সমাবেশ ডেকেছে WBHDF। এছাড়া, ১৪ আগস্ট কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে আবারও সমাবেশ ও মোমবাতি মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। মধ্যরাতে ‘রিক্লেইম দ্য নাইট’ কর্মসূচির মাধ্যমে মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে পথে নামবে সাধারণ মানুষ।