rituparna of Purba Burdwan had told parents that he would bow down to Virat Kohli by touching his feet: "উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই আমি কিন্তু আমার ভগবান বিরাট কোহলির (Virat Kohli) খেলা দেখতে ইডেনে যাব।" উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর আগেই এই আবদারের কথা বাবা ও মাকে জানিয়ে রেখছিল ঋতুপর্ণ পাখিরা। সেই মতো পরীক্ষা শেষ হতেই IPL-এর উদ্বোধনী ম্যাচের একটা টিকিটও জোগাড় করে ফেলেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাগ কালাপাহাড় গ্রামের ছাত্র ঋতুপর্ণ। ইডেন গার্ডেন্সে গিয়ে বিরাট কোহলির খেলা দেখার জন্য শনিবার সকাল সকালই সে বাড়ি থেকে রওনা হয়। যাওয়ার সময় মাকে বলে যায়, “আজ আমি যেমন করেই হোক, একেবারে মাঠের মধ্যে ঢুকে গিয়ে বিরাট স্যারের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেবই। এর জন্যে পুলিশ যদি আমায় ধরে তো ধরবে।"
মাকে বলে যাওয়া এই কথার কোনও হেরফের করেনি ঋতুপর্ণ। তবে এমন কাণ্ড ঘটানোর জন্য পুলিশ ঋতুপর্ণকে রেহাই দেয়নি। তাকে কলকাতার ময়দান থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তার জন্য আক্ষেপ প্রকাশ তো দূরের কথা, উল্টে রবিবারও ঋতুপর্ণ হাসিমুখে তাঁর বাবাকে বলে, “আমার ভগবান বিরাট স্যারকে প্রণাম করে আমি ধন্য।"
ঋতুপর্ণদের পারিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। বাবা মহাদেব পাখিরা কিছু জমিতে চাষ করেন। এরই পাশাপাশি এলাকায় তাঁর একটি ফলের দোকান রয়েছে। ইটের দেওয়ালের দু’কামরার নির্মীয়মাণ বাড়ির মধ্যেই মা, বাবা ও কলেজ পড়ুয়া দুই দিদির সঙ্গেই থাকে ঋতুপর্ণ। বাড়িতে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। স্থানীয় পর্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র ঋতুপর্ণ পাখিরা এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live:'BJP ক্ষমতায় এলেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে মাসে ৩ হাজার', বড়সড় প্রতিশ্রুতি শুভেন্দুর
ঋতুপর্ণর মা কাকলিদেবী একজন আশাকর্মী। রবিবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, “আমার ছেলে ঋতুপর্ণ ছোট বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী। প্রথমে জামালপুরের নেতাজি অ্যাথলেটিক ক্লাবের মাঠে গিয়ে এক প্রশিক্ষকের কাছে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে। বর্তমানে কলকাতার বেলেঘাটা স্পোর্টিং ক্লাবে ক্রিকেটের কোচিং নিচ্ছে। আমার ছেলে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলির একনিষ্ট ভক্ত। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে থেকেই আইপিএলে বিরাট কোহলির খেলা ইডেনে গিয়ে দেখতে যাবে বলে ছেলে বায়না জুড়েছিল। আমরা অমত করিনি। শনিবার ইডেনে গিয়ে আইপিএলের উদ্বোধনের খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য ছেলে টিকিটও জোগাড় করে ফেলে। খেলা দেখতে যাওয়ার জন্য ছেলে শনিবার সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। যাওয়ার সময় ও আমায় বলে যায় ,যা হয় হবে, আজ মাঠে ঢুকে গিয়ে বিরাট স্যারকে প্রণাম করে আমি আশীর্বাদ নেবই।"
আরও পড়ুন- Kolkata Weather Today:চৈত্রের বৃষ্টিতে শীতের শিরশিরানি ফিরেছিল বঙ্গে, আজ থেকেই আবহাওয়ায় বড় বদল
এমন 'পাগলামি' না করার জন্য মা কাকলিদেবী তাঁর ছেলে ঋতুপর্ণকে নিষেধও করেছিলেন। এমন কাণ্ড ঘটালে পুলিশ যে ছেড়ে কথা বলবে না তাও ছেলেকে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিরাট কোহলির ভক্ত ঋতুপর্ণ উল্টে মাকে বলে যায় ,“আমি আমার ভগবানকে প্রণাম করে আশীর্বাদ লাভের জন্যে জেলে যেতেও রাজি।" আর শেষ অব্দি এমন কাণ্ড ঘটিয়ে পুলিশের হাতেই বন্দি হয়েছে জামালপুরের এই ছাত্র। ছেলেকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তাঁর মা কাকলিদেবী বিরাট কোহলি, পুলিশ ও IPL- কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে আবেদন রেখেছেন।
এদিকে ভাইয়ের কী হবে তা ভেবে দুশ্চিন্তায় ঋতুপর্ণর দুই দিদি পৌলমী ও প্রীতি। তাঁরা বলেন,“১৮ বছর বয়সী আমার ভাই ক্রিকেট পাগল। ভাই বিরাট কোহলিকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে! ভাই বিরাট স্যারকে ভগবানের তুল্য ভাবে।” বাড়িতে থাকা ক্রিকেটের ব্যাট ,প্যাড, বল দেখিয়ে ঋতুপর্ণর দিদিরা এও বলেন, "ভাই পেস বল করতে ভালবাসে। রাজ্যস্তরের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভাই অনেক পুরস্কারও পেয়েছে। ভাই ভালো ব্যাটিং করার পাশাপাশি পেস বলটাও ভাল করে।” ভাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্যে দুই দিদিও বিরাট কোহলি, ইডেন কর্তৃপক্ষ ও কলকাতা পুলিশের কাছে করজোড়ে অনুরোধ রেখেছেন।
আরও পড়ুন- Dilip Ghosh: 'বাড়ি থেকে টেনে এনে মারব', ফের মাঠে নেমে আগুনে হুঁশিয়ারি শুরু ডাকাবুকো দিলীপের
এদিকে, পর্বতপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অতনু ঘোষ বলেন, “শুধু খেলার জন্যে নয়, বিরাট-ভক্ত হিসেবেও স্কুলে আলাদা পরিচয় ছিল ঋতুপর্ণর।" ঋতুপর্ণর বাবা মহাদেব পাখিরা বলেন, “ইডেনে খেলা দেখতে গিয়ে ছেলে অনেক রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। তখনই খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বিরাট কোহলি
অর্ধশত রান করতেই আমার ছেলে দর্শক আসন থেকে সোজা ইডেনের মাঠে ঢুকে যায়। মাঠে গিয়ে বিরাট কোহলিকে প্রণাম করে। বিরাট স্যার আমার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। কিন্তু পুলিশ আমার ছেলের এই কীর্তি ভালভাবে নেয়নি। পুলিশ আমার ছেলেকে গ্রেফতার করেছে।"