Malda TMC Meeting: 'কাজ করবেন না , অথচ পদ নিয়ে বসে থাকবেন , এরকম নেতার দরকার নেই, দলের জন্য সময় না দিতে পারলে দয়া করে চলে যেতে পারেন'। এভাবেই দলের একাংশকে নিশানা মালদা তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সীর। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাতেও রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর অভিযোগ, পুলিশের ভূমিকা চরম অসন্তোষজনক। দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর অন্যায় ভাবে অত্যাচার করছে পুলিশ। এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অপর দিকে মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের একাংশ নেতাকর্মীদের ক্ষমতার লোভ ও বিজেপির সঙ্গে তলে তলে আঁতাত করার অভিযোগও তুলে সোচ্চার হন নিহত তৃণমূল নেতা বাবলা সরকারের স্ত্রী চৈতালি সরকার।
শনিবার দুপুরে তৃণমূলের জেলার নেতা-নেত্রীদের উপস্থিতিতে কর্মী বৈঠকে রীতিমতো সরগরম হয়ে ওঠে। এদিন ইংরেজবাজার শহরের মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামে জেলা তৃণমূল কমিটির কর্মী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী , রাজ্যের দুই মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন এবং তাজমুল হোসেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ, জেলার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক থেকে শুরু করে ব্লক, অঞ্চল সভাপতি, মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূলে নির্বাচিত সদস্য, ইংরেজবাজার এবং পুরাতন মালদা পুরসভার কাউন্সিলর থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান , ভাইস চেয়ারম্যান সহ অন্যান্যরা।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী বলেন, 'তৃণমূল সুপ্রিমো তথা নেত্রী একজনই। তিনি হলেন মমতা ব্যানার্জি। তাঁর কথাতেই আমাদেরকে সর্বসম্মত ভাবে কাজ করতে হবে । কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, নিজেদের পদ দখল করে দলের কোন কাজ করছেন না। শুধু ক্ষমতা বা চেয়ার দখল করে বসে থাকলেই চলবে না। দলকে শক্তিশালী করতে হবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মালদার বারোটি বিধানসভা কেন্দ্রই আমাদের দখল করে দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে নেতা-নেত্রীদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম বাড়াতে হবে। শুধুমাত্র পদের লোভে থাকলে এই দলের কোনও জায়গা নেই। দলের জন্য কাজ না করলে ক্ষমতা থেকে বহিষ্কার করা হবে'।
এদিকে এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের সেচ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন , 'বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকায় সাধারণ মানুষ তিথিবিরক্ত হয়ে উঠেছে। বুথ স্তরে দলের কাজকর্ম করতে গিয়ে মানুষ পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন আমাকে অভিযোগ জানাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশের কোনরকম অত্যাচার মানা হবে না। প্রশাসনকে সুষ্ঠুভাবেই কাজ করা উচিত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে। আমি এজন্য চরম অসন্তুষ্ট'।
তিনি বলেন, ' গত সাত দিনে কালিয়াচকে সাতটি স্করপিও গাড়ি চুরি হয়েছে। ১০ থেকে ১২টি গোডাউন ভেঙে দুষ্কৃতীরা টাকা চুরি করে পালাচ্ছে। সিসি ক্যামেরায় সমস্ত ঘটনা ধরা পড়ছে। অথচ পুলিশ এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারে নি। ফলে মানুষ বিভিন্নভাবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন। এব্যাপারে দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে'।
এদিকে এদিন নিহত তৃণমূল নেতা বাবলা সরকারের স্ত্রী চৈতালি সরকার মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, দলের জেলার একাংশ নেতা ভালো নয়। তারা নিজেদের স্বার্থের কায়েম করতে তৃণমূলকে সামনে রেখে কাজ করছে। দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে অনেক জনকে দেখলাম, ভোটের সময় তলে তলে বিজেপির সাথে আঁতাত করে চলছে । আমরা কাউন্সিলার ছিলাম ,কাউন্সিলরই থাকবো। কোনদিন এমএলএ হতে পারবো না। আবার যারা পাঁচ ও ছয়বারের এমএলএ আছেন ,তারাও পদ ছাড়বে না। সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে একাংশ নেতানেত্রীরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতেই তৃণমূলকে ব্যবহার করছে। এখন সময় এসেছে সবাইকে সঙ্গবদ্ধ হয়ে কাজ করার। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের মালদার সমস্ত কেন্দ্রের আসন দখল করে বিরোধীদের পরাজিত করতে হবে'।