SSC protest Updates: আগুনটা ধিকধিক করে জ্বলছিল। গতকাল তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। এতেই বাধ ভাঙে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন চাকরিহারারা।
একজন যোগ্য প্রার্থীর চাকরি গেলে রাজ্য অচল করে দেওয়ার হুঙ্কার তোলেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকরা। ২১ এপ্রিলের মধ্যে যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা হয়নি। এর পরই গতকাল সন্ধ্যা থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে করুণাময়ী চত্ত্বর। এসএসসি দফতরের বাইরে হাজার হাজার চাকরিহারারা অনশন-অবস্থানে বসেন। সকলের একটাই দাবি যতক্ষণ পর্যন্ত না এসএসসি যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করছে ততক্ষণ চলছে এই অবস্থান বিক্ষোভ।
মুর্শিদাবাদের হিংসার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন) নিয়োগ কেলেঙ্কারি (WB SSC Scam) নতুন করে চাপের মুখে পড়তে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ব্যাপক দুর্নীতি ইস্যুতে (SSC Recruitment Case Verdict)২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ বাতিল করে দেয়, যার ফলে ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এরপর থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তের চাকরিহারাদের বিক্ষোভ জারি রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের পরও গতকাল ২১ এপ্রিল যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন। এরপরই আচার্য সদনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছেন চাকরিহারারা।
সোমবার সন্ধ্যায় প্রায় ২০০০ শিক্ষক আচার্য সদনের সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। তাঁরা কম্বল ও বিছানা নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন। দাবি একটাই—যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষকদের অভিযোগ, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিলেও রাত ৭.৩০ পর্যন্ত কোনও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা অবস্থানে বসেন এবং হুঁশিয়ারি দেন, দাবি পূরণ না হলে তাঁরা রাতভর বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এসএসসি অফিসের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়ে।
বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে শুরু হয় তুমুল বচসা। পুলিশ বারবার সতর্ক করলেও আন্দোলনকারীরা নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তাঁরা এসএসসি ভবন ঘেরাও করেন। দাবি ওঠে শিক্ষা মন্ত্রী ও এসএসএসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগেরও। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যার ফলে পুলিশ ও শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
সোমবার বিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একটি ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সাথে দীর্ঘ বৈঠক করেন। তবে বৈঠকের পর শিক্ষকদের দাবি, এসএসসি কর্তৃপক্ষ যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেননি। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন চাকরিহারারা। আন্দোলনকারীরা চেয়ারম্যান ও শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও জানান। এর মাঝেই এসএসসি চেয়ারম্যান জানান, তালিকা প্রকাশ নিয়ে তিনি আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন এবং এই মুহূর্তে তিনি এই নিয়ে কোন মন্তব্য করতে করবেন না। একইসাথে, তিনি শিক্ষকদের "ধৈর্য্য না হারানোর" আহ্বান জানান।
এর মাঝেই ওঠে শিক্ষামন্ত্রী-এসএসএসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিও। পাশাপাশি ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সুর চড়াতে থাকেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকরা। আন্দোলন চলাকালীন এসএসএসি দফতরে ফুড ডেলিভারি এজেন্টদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে বায়োটয়লেট সহ ন্যুনতম সুবিধায় বাধা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। প্রবল গরমে নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। এসবের মাঝেই যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়ানোর ডাক দিয়েছে অনিকেত মাহাতো-সহ 'ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট'-এর প্রতিনিধিরা। যোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও।
চাকরিহারাদের বিক্ষোভে ধুন্ধুমার রাজপথ। এর মাঝেই যোগ্য চাকরিহারাদের পাশে থাকা বার্তা দিয়ে রাস্তা না ছাড়ার আবেদন প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি এবিপি আনন্দকে ফোনে বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের নাম করে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা এড়িয়ে যেতে চাইছে এসএসএসি। ব্র্যাত্য বাবু যা বলেছেন বা এসএসসি যা বলেছে তা চোখে ধুলো দিয়ে করার একটা প্রচেষ্টা। আমি আপনাদের বলছি আপনারা যেভাবে আন্দোলন চালাচ্ছেন শান্তি বজায় রেখে সেভাবে আন্দোলন চালিয়ে যান। আমি ব্র্যাত্য বাবুর বক্তব্য শুনেছি। যোগ্যদের তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সুপ্রিম রায়ের কোন সম্পর্ক নেই। স্বচ্ছতার দাবি তুলতেই পারেন সাধারণ মানুষ । অনেক আগেই SSC-এর এই তালিকা প্রকাশ করা উচিত ছিল। সুপ্রিম কোর্ট কোথায় বলেছে তালিকা বের করতে পারবে না ?'যোগ্যদের এবার অযোগ্যদের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা',এসএসএসি বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ তুললেন যোগ্য চাকরিহারারা। তারা সাফ জানিয়েছেন যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে না পারলে, অযোগ্যদের চাকরি বাতিল করা হোক। তাহলেই চাল থেকে কাঁকর আলাদা করা যাবে।
গতকাল থেকে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে আসরে নেমেছে চাকরিহারারা। আজ ডাক দেওয়া হয়েছে মহাসমাবেশের। আজ এসএসসি ভবন থেকে করুনাময়ী পর্যন্ত বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা পুলিশের। দুপুর ১টায় মিছিলে ও বাড়তি নিরাপত্তা পুলিশের। বাইরে থেকে থেকে বহিরাগত ঢুকে প্ররোচনা দিয়ে অশান্তির পরিবেশ না তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। ১৫ জনের বেশি ডিসি পদমর্যাদা আধিকারিককে গোটা নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২৫ জন ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অধিকারিককে জায়গায় জায়গায় পরিস্থিতি নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লাঠিধারী পুলিশ, টিয়ার গ্যাসের সেল, বাড়তি মহিলা পুলিশ আন্দোলনস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যামেরার মাধ্যমে থাকছে নজরদারি।