এসএসকেএম থেকে ভূবনেশ্বরের এইমস। সেখান থেকে সিজিও কমপ্লেক্স। আদালতের নির্দেশের ফলে এসএসকেএমে চিকিৎসা বন্ধ করিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভূবনেশ্বর নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগেও তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা-মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েই পিজির উডবার্ণ ওয়ার্ডে দিনের পর দিন ভর্তি থেকেছেন। চিকিৎসা নিয়ে আদালতের নির্দেশের পর চিকিৎসকদের একাংশ কাঠগড়ায়। চিকিৎসক সংগঠনের একাংশ কর্তারা বলছেন, এই ঘটনা মেডিক্যাল অ্যাথিকসের বিরোধী, অত্যন্ত গর্হিত কাজ। চাপে পড়ে করলেও যাঁরা একাজ করছেন সেই সব চিকিৎসকদের শাস্তি দাবি করছেন তাঁরা।
গ্রেফতার হলেই তদন্তকারী সংস্থার মুখোমুখি না হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন দুদিন নয়, দিনের পর দিন এই হাসপাতালের উডবার্ণ ওয়ার্ডে কাটিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল, মদন মিত্রসহ অনেকেই। এবারও গ্রেফতার হয়েই রাজ্যের পয়লা নম্বর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সার্ভিস ডক্টর ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সজল বিশ্বাস বলেন, 'এসব কাজ যে চিতিৎসকরা করেন তাঁদের সঙ্গে আমরা নেই। আমাদের সংগঠনের লোকজন এসব করে না। এই ধরনের কাজকে অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে করি। এটা মেডিক্যাল অ্যাথিকস বিরোধী কাজ। এর তীব্র বিরোধিতা করি। সমস্ত চিকিৎসক সমাজের কাছে আবেদন করি গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকুন।'
আরও পড়ুন- অন্যায় করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চান মমতা! ‘ঠিক বলেছেন’, কলকাতায় ফিরে বললেন পার্থ
ডাঃ সজল বিশ্বাস সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে এমন কাজ চিকিৎসকদের ওপর চাপ দিয়ে না করানো হয়। তিনি বলেন, 'আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই এমন কোনও কাজ না করানো হয় যাতে মেডিক্যাল এথিকসের বিরোধিতা করা হয়। চিকিৎসকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, সেই চাপের কাছে মাথানত করে চিকিৎসকদের একাংশ এই ধরনের কাজ করেন। এই ধরনের চাপ যাতে সৃষ্টি না করা হয় সেই দাবি রাখি।' সজলবাবুর দাবি, 'বাম আমলেও নন্দীগ্রামে মাস কিলিং বা মাস রেপ হয়েছে সেসময় চিকিৎসকদের দিয়ে ভুল রিপোর্ট করা হয়েছে। পিজিকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের যে অংশ এই কাজ করছে তাঁরাও যেন বিরত থাকেন। তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন সজলবাবু।
আরও পড়ুন- ‘শিক্ষা দফতর চলবে নাকতলা থেকে, বলতেন পার্থ’, বিস্ফোরক দাবি বৈশাখীর
আরেক বিশিষ্ট চিকিৎসক পুন্যব্রত গুণ নানা সমাজেসবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসকদের সংগঠনও করছেন। শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের সম্পাদক ডাঃ পুণ্যব্রত গুন বলেন, 'যে চিকিৎসকরা এই অন্যায় করেছেন তাঁদের শাস্তি দাবি করছি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম বা জুনিয়র ডাক্তার ছিলাম তখন আমরা যাঁদের শিক্ষক হিসাবে পেয়েছি তেমন মেরুদন্ড সোজা চিকিৎসকের সংখ্যা তো কমে এসেছে। চাকরি যাঁরা করেন তাঁদের বিভিন্ন রকম চাপে থাকতে হয়। সরকারি ক্ষেত্রে একরকম বেসরকারি ক্ষেত্রে আর একরকম চাপ। তবে যাঁরা চাপে থেকে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাঁদের প্রতি আমাদের কোনও সমর্থন নাই। যাঁরা এটা করছেন তাঁদের মেরুদন্ড সোজা নয়। চিকিৎসকদের যাঁরা অন্য়ায়টা করছে তাঁদের শাস্তি পাওয়া উচিত।'
দুই হাসপাতালের রিপোর্ট নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন চিকিৎসক মহলও। অন্য় একটি চিকিৎসক সংগঠনের এক কর্তা বলেন, 'চিকিৎসকদের পক্ষে কথা বলাটা মুশকিল। সরাসরি এই ধরনের চিকিৎসকদের পক্ষে কতটা দাঁড়ানো যায় তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। ওখানে সবাই তো ওদের পেটোয়া নয়। আমরা খুব কনফিউসড। জনগণ ভাবছে ওখানে চিকিৎসকরাও ধান্দাবাজিতে জড়িয়ে পড়ছে। অসম্ভব অবিশ্বাসের বাতারবরণ তৈরি হয়েছে। ডাক্তারকে অবিশ্বাস করে চলতে পারে না। প্রশাসনিক চাপে ডাক্তাররা করছে কেন, সেই প্রশ্নও উঠছে।