Junior Doctors Movement: ১০ দফা দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠক নিয়ে আশাহত সিনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোর যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. পুণ্যব্রত গুণ ও ডা. হীরালাল কোনার এক বিবৃতিতে বলেছেন, যে দুর্নীতি চক্র ও দুর্বৃত্তায়ন অভয়ার নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী ও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মুখ্য কুশীলব, তাদের প্রকারান্তরে যেভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হল। তাতে অভয়া ২, ৩ .. হওয়া হয়তো সময়ের অপেক্ষা। এই আশঙ্কা করা কি অমূলক?
জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরসের বক্তব্য, "আমরা সত্যিই চূড়ান্ত হতাশ। পচা-গলা ব্যবস্থার কাঠামোগত মৌলিক পরিবর্তন এবং গণতান্ত্রিক ভয়হীন পরিবেশ পুনঃস্থাপনে কোনও প্রকৃত গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের কোনও সদিচ্ছা রাজ্য প্রশাসনের তরফে প্রতিভাত হল না। বরং বুঝিয়ে দেওয়া হল, শিক্ষা দুর্নীতি ও নিয়োগ দুর্নীতি, কোনও ক্ষেত্রেই সদর্থক পদক্ষেপ গৃহীত হবে না। তাই ভবিষ্যতে অভয়ার মত প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা প্রতিরোধে সুস্থ পরিবেশ তৈরি করতে রাজ্য কোনও উদ্যোগ গ্রহণে রাজি নয়। সেটাই যেন স্পষ্ট হল। এর সামগ্রিক ফলশ্রুতিতে যে সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী অচলাবস্থার সৃষ্টি হল, তার সম্পূর্ণ দায় রাজ্য সরকারের প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই বর্তাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।" সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের অবস্থানকে চরম অসংবেদনশীল বলে দাবি করেছে চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ।
ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনও প্রশ্ন নেই। আমরা আন্দোলন ছাড়ছি না। দাবি না মেটা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা বৈঠকে বসে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করব।" ডাঃ মানস গুমটা বলেন, "আমাদের আন্দোলন থেমে যাবে না। তবে মুখ্যমন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের সোমবারের বৈঠকে আমরা অত্যন্ত হতাশ। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন স্পষ্ট হয়েছে এই বৈঠকে।" জানা গিয়েছে, জুনিয়র চিকিৎসকরা শনিবার ফের গণ কনভেনশন করতে চলেছেন।
বৈঠক পর্যালোচনা করে কতগুলি বিষয় নিয়ে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস আলোকপাত করেছে। তাঁদের বক্তব্য--
▪︎কলেজ কাউন্সিল ও তার স্বাধীনতা
আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে লক্ষ্য করলাম যে আইন মোতাবেক গঠিত কলেজ কাউন্সিল ও তার স্বাধীন সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা হল। এর মধ্যে দিয়ে অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ ও সমস্ত সিনিয়র চিকিৎসকদের অপমানিত করা হল। প্রতিটি স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত কমিটির ক্ষমতাকে লঘু বা প্রায় শূন্য করে, তাঁদের যে কোনও গৃহীত সিদ্ধান্ত সবটাই সর্বোচ্চ সাধারণ প্রশাসন ও সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষ। এই বক্তব্য ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ও আস্ফালন এবং আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য কৌশল। এটা কার্যত NMC অনুমোদিত কলেজ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে থ্রেট।
আরও পড়ুন অনশন তুললেও আন্দোলন চলবে, শনিবার মহাসমাবেশের ডাক জুনিয়র ডাক্তারদের
▪︎থ্রেট সংস্কৃতি
মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে এবং কলেজে কলেজে বিদ্যমান হুমকি সংস্কৃতির অস্তিত্বকেই প্রকারান্তরে অস্বীকার করেছেন এবং বিপ্রতীপে একাধিক উচ্চ পদস্থ স্বাস্থ্য শিক্ষা আধিকারিকদের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন। এটা মুখ্যমন্ত্রীর হুমকি সংস্কৃতির নায়কদের বিরূদ্ধে শাস্তিদান ও শাস্তিদাতাদের বিরুদ্ধে পাল্টা থ্রেট হিসেবেই উপস্থাপিত হল।
▪︎মেডিক্যাল শিক্ষা
তবে তিনি তাঁর মূল্যবান বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন বিগত তিন বছরে রাজ্যে মেডিক্যাল শিক্ষা তলানিতে এসে ঠেকেছে। পাশাপাশি পরীক্ষা ব্যবস্থা প্রায় বিপর্যকর অবস্থায় পৌঁছেছে। কিন্তু তিনি স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় ও তদানীন্তন উপাচার্যর বিষয়ে একটিও শব্দ ব্যয় করেননি।
▪︎বিভিন্ন নজরদারি কমিটি
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন কমিটিগুলোর আইনানুগ গঠন, সভা, কাজকর্ম, যথার্থ প্রতিনিধিত্ব এবং যথাযথ ইনপুট নিয়ে কার্যসূচি নির্ধারণ, কোনওভাবেই প্রকৃত বিচারে ঠিক ভাবে অগ্রসর হয়নি, সেটাও আলোচনায় বেআব্রু হয়ে পড়েছে।
▪︎পঃবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল ও হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড
যেখানে সভাপতি-সহ একাধিক নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্য/ পেনাল এথিক্যাল কমিটির মেম্বাররা দুর্নীতি/ থ্রেট সংস্কৃতির মাথা হিসেবে অভিযুক্ত, তাঁদেরকে স্বপদে রেখেই, আইনগত কারণ দেখিয়ে কাউন্সিল চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। সততা, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার প্রশ্নটা তাঁর কাছে গুরুত্বহীন বলেই প্রকারান্তরে প্রতিভাত হয়েছে। বিকল্প আইনসিদ্ধ প্রস্তাব জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস-এর তরফে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে পাঠানো হলেও, প্রশাসনিক কর্তারা তাতে যে দৃষ্টিপাত করেননি, তাও স্পষ্ট হল। একই ভাবে হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড-এর ব্যাপারেও কোনওরকম গঠনমূলক বক্তব্য তার তরফে অনুপস্থিত থাকল।
আরও পড়ুন নবান্ন থেকে ফিরেই অনশন তুলে নিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা, প্রত্যাহার মঙ্গলবারের ধর্মঘটও
▪︎স্বাস্থ্য সচিব ও তাঁর ভূমিকা
বিগত সময়ের একাধিক অনৈতিক, বেআইনি কাজকর্ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ এবং স্বচ্ছতার প্রশ্নে অগ্রহণযোগ্য বেশ কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে বারংবার পৌঁছে দেওয়া স্বত্বেও এবং সমস্ত ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের নীরবতা, অকর্মণ্যতা ও ব্যর্থতার অজস্র নজির থাকা স্বত্বেও স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিবকে একই জায়গায় রেখে দেওয়ার প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর অনমনীয় মনোভাবে আমরা বুঝতে ব্যর্থ, তাহলে এই সমস্ত ব্যর্থতা ও সম্ভাব্য প্রশ্রয়ের মদতদাতা হিসেবে আসল দায় কার থাকল? এ তো অন্যায়ের পক্ষেই অপ্রত্যক্ষ সওয়াল।